Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন- ড.কামাল হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৭:৪৫ পিএম

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, দেশে সুশাসন নেই, আইনের শাসন নেই। গত ৫০ বছরে দেশের জনগণ সুশাসন পায়নি। কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে গণফোরামের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

ড. কামাল বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলে গণতন্ত্র রক্ষা পাবে। জনগণ ক্ষমতার মালিক এখানে দ্বিমত থাকতে পারে না। যারা জনগণই ক্ষমতার মালিক-এটা অস্বীকার করে তারা আমাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে। তারা রাষ্ট্রবিরোধী হিসাবেই চিহ্নিত হবে। আইনের যথাযথ শাসন থাকলে জনগণ সকল ক্ষমতা ভোগ করতে পারত। সংবিধানের মূলনীতি মনে না চলার কারণে দেশে এমন অবস্থা। মূলনীতি মানলে কোনো একক ব্যক্তি ক্ষমতা ভোগ করতে পারত না। যারা সংবিধানের মূলনীতি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন তারা দেশকে অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, সংবিধানের মূলনীতিকে কেন্দ্র করে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ৭২ এর সংবিধানকে অনেকেই কাটছাঁট করার চেষ্টা করেছিল। পরে তারা স্বৈরশাসক হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, জনগণের ঐক্যের কারণে আমরা এখনও আমাদের সংবিধান রক্ষা করতে পেরেছি। কামাল হোসেন বলেন, শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ এখনও পাইনি। পাইনি আইনের শাসন ও গণতন্ত্র। গণতন্ত্রে বিরোধীদল ও বহুদল থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের সংবিধানের মূলনীতির ব্যাপারে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমরা কার্যকর গণতন্ত্র ও শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি।
গণফোরামের ২৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আজ ভোটাধিকার নেই। কথা বলার স্বাধীনতা নেই। সব আজ কলুষিত। লুটপাট আর দুর্নীতির এক মহোৎসব চলছে। তিনি গণফোরামের ২৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী বিএনপি’র পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, শুধু ঐক্যবদ্ধ হলেই হবে না, ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামতে হবে। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র চায় কেবল বিরোধী দলে থাকলে, সরকারে গেলে তারা কায়েম করে স্বৈরতন্ত্র। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটা দল যাদের কোন আত্মসমালোচনা নেই। শুধু আছে অন্যের অবদান অস্বীকার করা। অন্যকে তুচ্ছ করা, আর দোষারপ করা। তারা বিরোধী দলে থাকলে চায় গণতন্ত্র, সরকারে থাকলে স্বৈরতন্ত্র। বিরোধী দলে থাকলে তত্বাবধায়ক, সরকারে থাকলে দলীয় সরকার। বিরাধী দলে থাকলে ধর্ম নিরপেক্ষ, সরকারে থাকলে মদিনা সনদ। তিনি বলেন, ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য যে কোনো পদক্ষেপ নিতে আদর্শ কোনো বাঁধা হয় না যাদের, সেই দলের নামই আওয়ামী লীগ। এ সরকারকে বিদায় করার কথা ঘোষণা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাতে ভোট ডাকাতি করে গিনেজ বুকে ঠাই নিয়েছে। আওয়ামী লীগ একটা বিপদজনক সরকার, তাদেরকে বিদায় করতে হবে। কারণ দেশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গত ৪৮ বছরেও এমন শাসক ক্ষমতায় আসেনি। মান্না বলেন, এই সরকারের লজ্জা নাই, চোখের চামড়া নাই। এই সরকার জনগণের কোনো কাজেই আসবে না। তাই এই সরকার সরাতে কি করতে হবে তা চূড়ান্ত করতে হবে। আমরা রাস্তায় নামি নাই, জনগন দেখছেন। ভবিষতে বড় ঐক্য করে বড় সংগ্রামের রাস্তায় নামতে হবে।

গণ স্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রের সংগ্রামে আমি রাজপথেই মরতে চাই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ড. কামাল হোসেন তার ওপরে জাতির অর্পিত দায়িত্ব অসমপূর্ণ রেখেছেন। তিনি বলেন, আগামীতে রাজপথে ড. কামাল হোসেনকে নামতে হবে। রাজপথে প্রতি একঘন্টা প্রয়োজনে আমরা দাঁড়িয়ে থাকব। তিনি বলেন, সরকার সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে না ঠিকই। তাতে কি ড. কামাল হোসেনকে অবশ্যই রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে আসতে হবে। তিনি বলেন, পরে কি হবে জানি না। তবে রাজপথে মরতে চাই।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সরকার বিরোধী জোট বা মোর্”চার বা ফ্রন্টের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা চায়। সরকার সরিযে আসলে কী কী করবে ভবিষ্যতে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য চায়। অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা ভবিষ্যতে এসে কি আচরণ করবেন, সামনে কি থাকবে সব ব্যাপারেই জনগণ পরিস্কার ধারণা জানতে চায়।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এসরকার হুমকি ধামকি ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তারা ভাবছে এতে কাজ হবে। আসলে তারা জানে না তাদের অবস্থা কত খারাপ। তিনি বলেন, এভাবে আওয়ামী লীগ চলতে পারবে না। একদিন তাকে ক্ষমতা থেকে সরতেই হবে। তবে এদেরকে সরাতে জনগণের সংগ্রাম দরকার। আওয়ামী লীগ জনগণের সংগ্রামকে ভয় পায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভিপি নুর বলেন, আজকে জাতি হতাশ। এ হতাশার জন্য আওয়ামী লীগ একাই দায়ী নন, গণফোরামের মঞ্চে যারা উপস্থিত আছেন এবং পূর্ব-পুরুষেরা যারা রাষ্ট্র পরিচালনার করেছেন তারাও সমানভাবে দায়ী। তিনি বলেন, ডাকসুর ভিপি হয়ে কোথাও যেতে পারি না। গ্রামে গেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে হেনস্থা হতে হয়। নিরাপদ সড়ক চাইতে গিয়ে হামলার শিকার হতে হয়। যে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে ৯০’র দশকে আন্দোলন করা হয়েছিল তারা আজ বিরোধীদলে। আজকে দেশে মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার বলে কিছু নেই। এ সব থেকে রক্ষা পেতে হলে একইমঞ্চে এসে কথা বলতে হবে। একজন আরেক জনের ওপর কাদা ছোড়াছুড়ি না করে একসঙ্গে দেশের হয়ে কাজ করে যাওয়ার মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাবে।

আলোচনা সভায় গণফোরামের অন্যান্য নেতাদের মধ্যে অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ড. রেজা কিবরিয়া, মেজর জেনারেল আমসা আমিন (অব.), মোশতাক আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ