Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কন্যা শিশুর ভ্রুণ হত্যা করলে পুরুষরা স্ত্রী পাবে কোথায়

ভারতে স্ত্রী সঙ্কট-শেষ পর্ব

দ্য টেলিগ্রাফ | প্রকাশের সময় : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:০৭ এএম

ভারতীয় সমাজে মেয়ের চাইতে ছেলেকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। বাঘপতের ২২ বছরের যুবক মানিক বলেন, তিনি ও তার ভাইয়েরা একজন স্ত্রী খুঁজে পেতে সংগ্রাম করছেন। তিনি বলেন, একটি মেয়েকে বড় করার জন্য পিতা-মাতাকে বহু টাকা ব্যয় করতে হয়। তারা তার লেখাপড়া, খাবার, কাপড়-চোপড় ও বিয়ের জন্য ব্যয় করবে। কিন্তু মেয়েটি শেষ পর্যন্ত পরের ঘরে চলে যাবে। তার কাছ থেকে কিছু মিলবে না। তাই এখানে কেউ মেয়ে নিতে চায় না।

আইভিএফ পদ্ধতিতে লিঙ্গ নির্ণয় করা ও গর্ভপাত সস্তা হওয়ায় লিঙ্গ অসমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অ্যাকশন এইড ইন্ডিয়ার প্রোগ্রাম ম্যানেজার খালিদ চৌধুরী বলেন, এটা বেআইনি। এখানে বহু আল্ট্রাসাউন্ড সেন্টার ও ফার্টিলিটি ক্লিনিক রয়েছে যারা ভ্রƒণের লিঙ্গ নির্ধারণ ও মেয়ে শিশু নষ্ট করতে গর্ভপাত ঘটাতে সাহায্য করে।

তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তির সহায়তা ও অন্যায় কাজে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার ফলে গ্রাম এলাকায় ব্যাপকভাবে এই বেআইনি কাজ চলছে। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে জাতীয় সঙ্কট। ২০১৫ সালে ভারত সরকার ‘বেটি বাঁচাও বেটি পাধাও’ নামের এক যোগাযোগ প্রচারণা শুরু করে যার উদ্দেশ্য মেয়ে শিশুর ব্যাপারে মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন ঘটানো।

হরিয়ানায় এটা সফল হয়েছে। কারণ রাজ্য সরকার অবৈধ গর্ভপাত ঘটানোর জন্য শাস্তির হুমকি দিয়েছে। কিন্তু বাঘপতে এদিকে দৃষ্টি দেয়া হয়নি। ডা. সিং বলেন, সরকার আসলে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। আমি স্পিকারকে বিষয়টি জানিয়েছি এবং বলেছি আমি চাই যে রাজনীতিকরাও পরিস্থিতি জানুন। কিন্তু তারা এতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। তারা আমাকে সময় দেননি। সংবিধিবদ্ধ সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে কিছু করতে আগ্রহ দেখায়নি।

এনজিও নবোদয়া কল্যাণ সমিতির দেবেন্দ্র কুমার ধামা বলেন, স্থানীয় সরকারি কমিটি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং তারা তাদের কাজ করে না। খেকরা শহরে বিপুল সংখ্যায় গর্ভপাত করানোর ঘটনা ঘটে। রাস্তাগুলো অসংখ্য ক্লিনিকে পূর্ণ যেগুলোতে দেড় হাজার রুপিতে (১৭ পাউন্ড) এই বেআইনি কাজ করা হয়। বহু ফার্মেসি আছে যেগুলো ১০০ রুপিতে গর্ভপাত ঘটানোর ট্যাবলেট বিক্রি করে।

ডা. সিং বলেন, আগে চাহিদা অনুপাতে এ ট্যাবলেট সরবরাহ হতো। এখন সরবরাহের ওপর চাহিদা নির্ভর করে। ভারত সরকারের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালের মে থেকে জুলাই পর্যন্ত উত্তরাখন্ড রাজ্যের ১৩২টি গ্রামে ২০০ ছেলে শিশুর জন্ম হয়েছে। কিন্তু কোনো কন্যা শিশুর জন্ম হয়নি। মিরাটের কাছে একজন বিয়ের ঘটক জানান, পুলিশ বেআইনিভাবে বহুস্বামী বিয়ে অনুমোদন করে।

তিনি জানান, এক পরিবারের কয়েকটি ছেলের জন্য বছর পনেরো বয়সী কনে খুঁজে দিতে তাকে ২০ হাজার রুপি দেয়া হয়। তিনি বলেন, আসামের পুলিশ এ ব্যাপার জানে। কিন্তু পাঁচ হাজার রুপি দিলেই তারা কনে নিয়ে যেতে দেয়। ঘটক বলেন, এখানে বিয়ে করার কনের অভাব রয়েছে। এখানে প্রায় প্রতি বাড়িতেই বহুস্বামী ব্যবস্থা দেখতে পাবেন।

একাধিক স্বামী নিয়ে জীবন কাটাতে বাধ্য হওয়া আরেক নারীর নাম শকুন্তলা। এক ভাই তাকে বিয়ে করে। কিন্তু শকুন্তলাকে তার বড় ভাইয়েরও স্ত্রী হতে হয়। তবে ২০১০ সালে তার স্বামী মারা গেলে তিনি এ দুঃসহ জীবন থেকে মুক্তি পান। তার আশঙ্কা যে, তার গ্রামের আরো মেয়ে এই বহুস্বামী বিয়ের শিকার হতে পারে। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া কঠিন। তিনি বলেন, ভ্রƒণ অবস্থায়ই কন্যা শিশুদের হত্যা করা হলে পুরুষরা স্ত্রী পাবে কোথায়?

মজিদার আশা যে, একদিন তিনি এ দুঃসহ জীবন থেকে মুক্ত হবেন। কিন্তু এ জন্য যে টাকা দরকার তা তার বাবা-মা জোগাড় করতে পারবেন বলে তার মনে হয় না। তিনি বলেন, আমার স্বামী ও ভাসুরদের কাছে আমি জানতে চাই যে, তোমরা আমাকে ধর্ষণ করছ কেন? (শেষ)

 



 

Show all comments
  • jack ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:১৯ পিএম says : 0
    মেয়েদের অধিকার ইসলামে সর্বোচ্চ দেয়া হয়েছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কন্যা শিশু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ