Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধ্রুবতারা হয়ে জ¦ললেন আফিফ

ইমরান মাহমুদ, মিরপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

একরাশ ঘন কালে মেঘে ঢাকা পড়েছিল ভোরের সূর্য্য। তাতে দিনের শুরুটা হয়েছিল অন্ধকার দিয়েই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি ঝড়িয়ে সেই মেঘ হালকা হয়েছিল, ঠিকই কিছুটা আলো ফুটেছিল দেশের আকাশে। ম্যাচের একটা সময় প্রশ্ন উঁকি দিয়েছিল, নিকষ কালো এই আধার কেটে বের হওয়া হবে কি দেশের ক্রিকেটের? আফিফ হোসেন ধ্রুবর ব্যাটে অন্ধকরাচ্ছন্ন সেই পথটা ঠিকই পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

যখন উইকেটে এলেন ৬০ রানে নেই বাংলাদেশের ৬ উইকেট। ১৪৫ রানের বোঝাটা তখন ফুলে ফেঁপে আরো বড়। লিটন কুমার দাস ও সৌম্য সরকারের ব্যাটে জবাবের শুরুটা ভালোই হয়েছিল বাংলাদেশের। তবে হঠাৎই এক গতিঝড়ে দিশেহারা স্বাগতিক শিবির। দুইপ্রান্ত থেকে পেস আক্রমণ শুরু করা জিম্বাবুয়ে পায় একের পর এক সাফল্য। লিটনকে (১৯) দিয়ে শুরুটা করেন টেন্ডাই চাতারা। সৌম্যকে (৪) ফেরিয়ে তাতে সামিল হন কাইল জার্ভিসও। পরে থিতু হবার আগেই সাকিব আল হাসান (১) ও মুশফিকুর রহিমের (০) উইকেট ভাগ করে নিয়েছেন দুজনে। এরপর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে সেই বোঝা ছোট্ট কাঁধে তুলে নিলেন ১৯ বছর বয়সী আফিফ। সত্যিকারের ধ্রুবতারা হয়ে পথহারা বাংলাদেশকে দেখালেন তীরের পথ, ভঙ্গুর বাংলাদেশকে ২ বল আগে এনে দিলেন ৩ উইকেটের রোমাঞ্চ ছড়ানো এক জয়।

বছর দেড়েক আগে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেকে দুই বলে শূন্য রানে ফিরেছিলেন আফিফ। লম্বা বিরতির পর খেলতে নেমে সেই তরুণ নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই তুলে নেন দারুণ এক ফিফটি। হাতের কব্জিতে ব্যাট ঘুরিয়ে জিম্বাবুয়ে বোলারদের ওপর তান্ডব চালিয়ে ২৪ বলে আফিফ পূরণ করেন প্রথম ফিফটি। তার ব্যাটিং বীরত্বে খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়ে দেখল পথ পায় বাংলাদেশ।

চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে গাঁথেন রানের মালা, দলকে নিয়ে যান জয়ের প্রান্তে। তবে ফিফটির পর চার মেরে জয় উদযাপন করতে গিয়েই মিড উইকেটে ধরা পড়েন অভিজ্ঞ মাসাকাদজার হাতে। থামে ৫২ রানের লড়াকু ক্যামিও। তার আগেও অবশ্য মোসাদ্দেককে নিয়ে ৮২ রানের জুটিতে দল পৌঁছে দিয়ে যান জয়ের কাছে। বাকি কাজটি দুই বলেই সারেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ৩০ রানে অপরাজিত ছিলেন মোসাদ্দেক। একটি চারে সাইফুদ্দিনের ঝুলিতে ৬।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে বোলিং নিয়ে দিনটি নিজেদের করে নেবার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টি বিঘিœত ম্যাচটি ভেজা আউটফিল্ডের কারণে শুরুই হয়েছিল নির্ধারিত সময়ের (সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা) দেড় ঘন্টা পর। বল হাতে শুরু থেকেই চেপে ধরে জিম্বাবুয়েকে। তাইজুল-সাইফউদ্দিন-মুস্তাফিজ-মোসাদ্দেকদের দারুণ বোলিংয়ে সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে হয়েছে দুর্দান্ত সব ফিল্ডিং আর ক্যাচ। আর তাতেই একে একে আসা-যাওয়ার মিছিলে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে টেলর-উইলিয়ামস-অরভিন-মারুমাদের।

স্রোতের বীপরিতে ব্যাট হাতে কিছুটা একাই লড়ে গেছেন ক্যারিয়ারের শেষ সিরিজ খেলতে নামা অভিজ্ঞ হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। তবে তাকে ৩৪ রানে ফিরিয়ে সফরকারীদের টপ অর্ডার অল্পতেই ধ্বসিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে শেষটায় ব্যাট হাতে দারুণভাবে দলকে টেনেছেন রায়ান বার্ল ও মুতম্বজি। তাদের ৮১ রানের জুটিতে ভর করে নির্ধারিত ১৮ ওভার শেষে ১৪৫ রান তোলে ৫ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে। ফিফটি তুলে ৫৭ রানে অপরাজিত ছিলেন বার্ল। তার ৩২ বলের ইনিংসটি ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় মোড়ানো। সময়োপযোগী ২৬ বলে ২৭ রান নিয়ে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে গেছেন মুতম্বজি।

ক’দিন আগেই চট্টগ্রাম থেকে নবাগত আফগানিস্তানের কাছে সিরিজের একমাত্র টেস্টে হারের লজ্জা নিয়ে ঢাকায় পা রাখে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে নিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজটায় ভালো কিছু করে অন্তত দেশের ক্রিকেটের দুর্দিন কাটানোর একটা সুযোগ সাকিব আল হাসানদের সামনে। নির্বাসিত জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে সেপথে প্রথম ধাপটা দিয়ে রাখল বাংলাদেশ। আর ম্যাচসেরার পুরস্কার দিয়ে দিনটি নিজের করে নিলেন আফিফ। বললেন, ‘দীর্ঘদিন পর সুযোহ পেয়েছি। শুধু চেয়েছি পজেটিভ থেকে নিজের খেলাটা খেলতে। দলকে ভালো কিছু উপহার দিতে। বলের সঙ্গে সময়ের স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছি। আর মোদ্দেকের সঙ্গ উপভোহ করেছি, ব্যাস। দলকে জয় এনে দিতে পেরেই খুশি।’

দিন শেষে তাই অধিনায়ক সকিবের কণ্ঠেও ফুটে উঠলো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার তৃপ্তি, ‘অবশ্যই স্বতি ফেরানো এক জয়। যে কঠিন সময়েল মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম তাতে খুব করে এমন একটা জয় প্রয়োজন ছিল। সহজে জিতলে যেমনটা হয়, আপনি খুব একটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া যায় না। যেমনটা হয় রোমাঞ্চ ছড়ানো জয়ে। আশা করি খুব শিগগিরই ভালো দিন ফিরবে। ইনশাআল্লাহ’। ত্রিদেশীয় সিরিজে আজ জিম্বাবুয়ের প্রতিপক্ষ উড়তে থাকা আফগানিস্তান। আগামীকাল একই ভেন্যুতে রশিদ খানদের মুখোমুখি হতে হবে স্বাগতিকদের।


স্কোর কার্ড
ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজ, ১ম ম্যাচ
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে, মিরপুর
টস : বাংলাদেশ (ফিল্ডিং) (১৮ ওভার ম্যাচ)

জিম্বাবুয়ে ইনংস রান বল ৪ ৬
টেইলর ক মাহমুদউল্লাহ ব তাইজুল ৬ ৫ ১ ০
মাসাকাদজা ক সাব্বির ব সাইফউদ্দিন ৩৪ ২৬ ৫ ১
আরভিন ক মোসাদ্দেক ব মুস্তাফিজ ১১ ১৪ ১ ০
উইলিয়ামস ক ও ব মোসাদ্দেক ২ ৩ ০ ০
মারুমা রান আউট (সাকিব/মুশফিক) ১ ২ ০ ০
বার্ল অপরাজিত ৫৭ ৩২ ৫ ৪
মুতোম্বদজি অপরাজিত ২৭ ২৬ ১ ১
অতিরিক্ত (লেবা ২, ও ৪) ৬

মোট (১৮ ওভারে ৫ উইকেটে) ১৪৪
উইকেট পতন : ১-৭ (টেইলর) ২-৫১ (আরভিন), ৩-৫৬ (মাসাকাদজা), ৪-৫৬ (উইলিয়ামস), ৫-৬৩ (মারুমা)।
বোলিং : সাবিক ৪-০-৪৯-০, তাইজুল ৩-০-২৬-১, সাইফউদ্দিন ৪-০-২৬-১, মুস্তাফিজ ৪-০-৩১-১, মোসাদ্দেক ৩-০-১০-১।

বাংলাদেশ ইনংস রান বল ৪ ৬
লিটন ব চাতারা ১৯ ১৪ ১ ১
সৌম্য ক মাদজিভা ব জার্ভিস ৪ ৭ ০ ০
সাকিব ক মাসাকাদজা ব চাতারা ১ ৩ ০ ০
মুশফিক ক টেইলর ব জার্ভিস ০ ১ ০ ০
মাহমুদউল্লাহ এলবিডবিøউ ব বার্র্ল ১৪ ১৬ ২ ০
সাব্বির ক বার্ল ব মাদজিভা ১৫ ১৫ ১ ০
মোসাদ্দেক অপরাজিত ৩০ ২৪ ০ ২
আফিফ ক মাসাকাদজা ব মাদজিভা ৫২ ২৬ ৮ ১
সাইফউদ্দিন অপরাজিত ৬ ২ ১ ০
অতিরিক্ত (বা ১, লেবা ১, নো ২, ও ৩) ৭

মোট (১৭.৪ ওভারে ৭ উইকেট) ১৪৮
উইকেট পতন : ১-২৬ (লিটন), ২-২৬ (সৌম্য), ৩-২৭ (মুশফিক), ৪-২৯ (সাকিব), ৫-৫৬ (মাহমুদউল্লাহ), ৬-৬০ (সাব্বির), ৭-১৪২ (আফিফ)।
বোলিং : উইলিয়ামস ৩-০-৩১-০, জার্ভিস ৪-০-৩১-২, চাতারা ৪-০-৩২-২, বার্ল ৩-০-২৭-১, মাদজিভা ৩.৪-০-২৫-২।
ফল : বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : আফিফ হোসেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ