Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রয়োজনে কাবা শরিফ রক্ষায় সেনা প্রেরণ- মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০০ এএম, ১৪ জুন, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভাকে জানিয়েছেন প্রয়োজনে কাবা শরিফ ও মসজিদে নববি রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পাঠানো হবে। তবে সউদীর নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে যোগ দেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।
বৈঠকে গত ৩ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সউদী আরব সফরের বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সফরকালে সউদী বাদশার সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছাড়াও দেশটির ৯ জন মন্ত্রী এবং বিভিন্ন সংস্থার নেতৃবৃন্দের সাথে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী। সউদী আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে যোগদানের বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন হেরেম শরীফ অর্থাৎ পবিত্র মক্কা শরীফ এবং মদিনা শরীফ রক্ষার জন্য যদি কোন জোট গঠন করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাতে যোগদান করবে। প্রয়োজনে পবিত্র দুই মসজিদ রক্ষায় বাংলাদেশ সেনা পাঠাবে, এটা হলো প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা কোন যৌথবাহিনী নয়, হয়তো একাধিক রাষ্ট্র পাঠালে (সেনা) তখন যৌথ হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলেছেন। সউদী জোটে অংশগ্রহণ নিয়ে মন্ত্রিসভার কোন মন্ত্রী দ্বিমত পোষণ করেননি বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সউদী আরব সফরকালে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সউদী ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও জানান শফিউল আলম। নারী শ্রমিকরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সউদী আরব যেতে পারবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে নারী শ্রমিক একা যেতেন, এখন পরিবারের সদস্য বাবা, ভাই বা স্বামী যেতে পারবেন। এতে পারিবারিক পরিবেশে তারা থাকতে পারবেন। আর একটা সমস্যা ছিল, একজন শ্রমিক যে এলাকায় বসবাস করেন সে এলাকায় কাজ করতে হবে, ওই কোম্পানির সাথে কাজ করতে হবে, আকামা ট্রান্সফারের কোন সুযোগ ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রেক্ষাপটে আকামা ট্রান্সফারটা উন্মোচিত হয়েছে। এখন যে কোন শহরে তারা যেতে পারবে এবং অন্য কোম্পানিতে কাজ করতে পারবে। এই সুবিধাগুলো তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, আর একটি বড় সুবিধা হলো দক্ষ শ্রমিকদের যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। সরকার আশা করছে, বছরখানিকের মধ্যে প্রায় ৫ লাখ বিভিন্ন ক্যাটাগরির শ্রমিক সউদী আরবে যেতে পারবে।
বিএনসিসি আইন অনুমোদন
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) পরিচালনায় একটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর আইন ২০১৬’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নতুন এই আইনের অধীনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ঢাকায় বিএনসিসি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই অধিদপ্তরের দায়িত্বে একজন মহাপরিচালক থাকবেন জানিয়ে শফিউল বলেন, প্রতিরক্ষা সচিবের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি উপদেষ্টা কমিটিও থাকবে। প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ; সেনা, নৌ ও বিমান সদর; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে একজন করে প্রতিনিধি এই উপদেষ্টা কমিটিতে রাখা হবে। বিএনসিসির মহাপরিচালক হবেন এই উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সচিব।
নির্ধারিত যোগ্যতা থাকা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জুনিয়র ও সিনিয়র ডিভিশনের ক্যাডেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন বলেও শফিউল আলম জানান। তিনি বলেন, ১৯৫০ সালের একটি সার্কুলারের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে বিএনসিসি পরিচালিত হচ্ছিল, কোনো পূর্ণাঙ্গ আইন ছিল না। একে আইনি কাঠামো দিতেই নতুন আইন করা হচ্ছে। গত বছর ২৮ ডিসেম্বর বিএনসিসি আইনের খসড়ায় মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দেয়।
বিএনসিসিতে সশস্ত্র বাহিনী থেকে সংযুক্ত বা প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা যদি শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেন, তবে নিজ বাহিনীর অধীনে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ারও বিধান রাখা হয়েছে এই খসড়ায়। আর বিএনসিসিতে যুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা শৃঙ্খলাবিরোধী কোনো কাজ করলে অধিদপ্তর বা কোরের সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের কোনো সদস্য শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে কোরের বিধি অনুযায়ী তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
ডব্লিউটিও চুক্তিতে বাংলাদেশের অনুসমর্থন
উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে বাণিজ্য সুবিধা দিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে করা চুক্তিতে অনুসমর্থনের প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৯৫ সালে মরক্কোর মারাকাশ চুক্তির মাধ্যমে ডব্লিউটিও প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৩ সালের ৩ থেকে ৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নবম মিনিস্ট্রিয়িাল কনফারেন্স হয়। ওই কনফারেন্সে বাণিজ্যের বিদ্যমান পদ্ধতি সহজীকরণের জন্য একটি খসড়া এগ্রিমেন্ট হয়।
সচিব বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিধান অনুযায়ী এর ১৬২ সদস্য রাষ্ট্রের দুই তৃতীয়াংশের অনুসমর্থন পেলে কার্যকর হয়। বাংলাদেশ ৮২তম অনুসমর্থনকারী রাষ্ট্র। ডব্লিউটিু এই চুক্তি কার্যকর হলে আমদানি ও রফতানি পণ্যের প্রবাহ ও চলাচল আরো ত্বরান্বিত হবে।
বিশ্বের ক্ষমতাধর নারী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভার অভিনন্দন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ‘ফোর্বস’ সাময়িকীর জরিপে ২০১৬ সালে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ক্ষমতাধর নারী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় মন্ত্রিসভার সদস্যরা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সাময়িকীটির জুন সংখ্যায় এ বছর বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে ৩৬তম স্থানে রেখে একটি জরিপের ফল প্রকাশিত হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম জানান, বৈঠকের শুরুতেই এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
এ ছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে ১৬-২০ মে রাশিয়ান ফেডারেশনের সাথে স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট সংক্রান্ত খসড়া এগ্রিমেন্ট চূড়ান্তকরণ সম্পর্কিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের রাশিয়ান ফেডারেশন সফরের বিষয়টিও মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রয়োজনে কাবা শরিফ রক্ষায় সেনা প্রেরণ- মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ