Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মৃত মায়ের পাশে বসেই কাঁদছিল শিশু লামিয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

তিন বছরের ছোট্ট শিশু লামিয়া। বিয়ের দাওয়াত খেয়ে অটোরিকশায় মা আরিফা সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে বিয়ে বাড়ির গল্প করছেন আরিফা। কিন্তু কে জানত এটাই ছিল মায়ের কাছ থেকে শোনা ছোট্ট লামিয়ার শেষ গল্প। বৃহস্পতিবার রাতে এমনই এক ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জ শহরের ল’কলেজ এলাকায়। অটোরিকশার চাকায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মা আরিফা আক্তারের মৃৃত্যু হয়। এ সময় রিকশাচালক পালিয়ে গেলে মৃত মায়ের পাশে বসেই কাঁদছিল শিশু লামিয়া। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে সাভারে তিন. টেকনাফ ও ভৈরবে ২ জন করে, ঢাকা ভোলা জয়পুরহাট ও নাটোরের লালপুরে একজন করে। এসকল ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছেন।

ঢাকা : রাজধানী মিরপুরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে বাবা-মায়ের সঙ্গে দাওয়াত খেয়ে বাসায় ফেরার পথে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উল্টে খাদিজা আক্তার (৫) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে মিরপুরের পল্লবীর কালশী রোডে এ দুর্ঘটনা ঘটে। খাদিজা দিনাজপুর সেতাবগঞ্জ উপজেলার ঝিনুর গ্রামের আজম খানের মেয়ে। সে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ই ব্লকের ৫ নম্বর রোডের একটি বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতো। তার বাবা রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

খাদিজার বাবা আজম খান জানান, দুপুরে তারা মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরের একটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে দাওয়াত খেয়ে অটোরিকশাযোগে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী পেয়ারি বেগম ও ছোট মেয়ে খাদিজা। রিকশাটি কালশী রোডের আধুনিক হাসপাতালের সামনে এলে ঘুড়ির ছেড়া সুতা চালকের গলায় পেচিয়ে যায়। চলন্ত অবস্থায় চালক সেটি ছাড়ানোর চেষ্টাকালে রিকশাটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে খাদিজা রাস্তায় ওপরে পড়ে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে বিয়ে বাড়ি থেকে ফেরার পথে ইঞ্জিনচালিত রিকশার চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এক গৃহবধ‚র মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ এলাকায় শহীদ সরণীতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূ আরিফা আক্তার (২৫) মানিকগঞ্জ জেলা শহরের বড়সরুন্ডী এলাকার হারুন মিয়ার মেয়ে এবং জয়রা রোড এলাকার বাসচালক খোকন মিয়ার স্ত্রী।
মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. শহিদুল আজম জানান, রাত ৯টার দিকে আরিফা আক্তারকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। রিকশার চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন। তার গলায় কাটা দাগ আছে।

মানিকগঞ্জ সদর থানার সেকেন্ড অফিসার হারেজ আলী জানান, নিহত আরিফা একটি ইঞ্জিনচালিত রিকশায় চড়ে তার তিন বছরের একমাত্র সন্তান লামিয়া আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে তার খালাতো বোনের বিয়ের দাওয়াত থেকে ফিরছিলেন। এসময় দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। তবে শিশুটির কিছু হয়নি। ঘটনার পর রিকশাচালক পালিয়ে গেছে। তবে রিকশা আটক করা হয়েছে।

সাভার : সাভারে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ৩ জন। আহতদের মধ্যে ১ জনকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আহত অন্য ২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতরা হচ্ছে- পিকআপ ভ্যান চালক জিবন, কাভার্ড ভ্যান চালকের সহকারী আতিয়ার রহমান এবং রিক্সাযাত্রী শাহীন আলম।গতকাল ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের গেন্ডা, আমিনবাজার এবং মধুমতি মডেল টাউন এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ জানায়, ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে গেন্ডা এলাকায় একটি ট্রাক অটোরিক্সাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে গুরুত্বর আহত হন ৩ জন। পরে তাদের উদ্ধার করে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহীন আলমকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া একই সময়ে আমিনবাজার এলাকায় একটি বিকল ট্রাককে পেছন থেকে একটি কাভার্ড ভ্যান ধাক্কা দিলে আহত হন কাভার্ড ভ্যানের চালক ও সহকারী। পরে তাদের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক চালকের সহকারী আতিয়ার রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া মধুমতি মডেল টাউন এলাকায় সড়কের পাশে পিকআপ ভ্যান থামিয়ে রাস্তা পার হয়ে পেট্রোল পাম্পে যাওয়ার পথে অজ্ঞাত গাড়ির চাপায় মারা যান পিকআপ ভ্যান চালক জিবন। সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএফএম সায়েদ জানান, দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহনগুলো জব্দ করে থানায় আনা হয়েছে।

ভোলা : ভোলায় মোটরসাইকেলে বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে গিয়ে মো. শাকিল (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে ভোলার দৌলতখান উপজেলার বঙ্খালী সংলগ্ন এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। তার বাড়ি বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর ইউনিয়নের জয়া গ্রামে। বাবার নাম মো. তাজুল খান। এ ঘটনায় আহত বন্ধুকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

টেকনাফ (কক্সবাজার) : কক্সবাজার থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পথে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কে চারপোকা ও সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে মা-ছেলে নিহত হয়েছেন। এসময় ছেলের বাবাও আহত হন।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টারদিকে কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক পথে মারিশবনিয়া এলাকায় বরাবর পৌঁছলে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া এলাকার জকির আহমদের স্ত্রী সমজিদা (৩৫) ও নিহতের এক বছরের শিশু পুত্র শোয়াইব।

প্রত্যক্ষদর্শী ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার সকালে অসুস্থ শিশু শোয়াইবকে নিয়ে কক্সবাজারে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন জকির। সাথে স্ত্রী সনজিদাকেও নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসা শেষে সিএনজি যোগে টেকনাফ বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরছিলেন। ফেরার পথে সন্ধ্যা সাড়ে মারিশবনিয়া এলাকা বরাবর পৌঁছলে বিপরীতমুখী ছারপোকার গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে সনিজদা ও তার শিশু পুত্র শোয়াইব গুরুতর এবং সনজিদার স্বামী জকির আহত হয়। আহতদের দ্রুত টেকনাফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক সনজিদাকে মৃত ঘোষণা করেন টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. শংকর দেবনাথ। উন্নত চিকিৎসার জন্য গুরুতর আহত শিশু শোয়াইব কে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল প্রেরন করেন। সেখানে রাত ১০ টারদিকে শোয়াইবের মৃত্যু ঘটে বলে তার পারবারিক সূত্রে জানা গেছে।

জয়পুরহাট : ছুটির দিনে বাড়ির পাশেই বসেছে মেলা। সাইকেল চালিয়ে সেই মেলা দেখতে যাচ্ছিল শিশু জয় হোসেন (১২)। কিন্তু মেলায় আর পৌঁছানো হয়নি তার। পেছন থেকে একটি ট্রাক ধাক্কা দেওয়ায় সড়কেই প্রাণ হারিয়েছে সে। জয়পুরহাট পৌর সদরের তেঁতুলতলী এলাকায় গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু জয় চকগোপাল এলাকার গোলজার হোসেনের ছেলে। সে বরেন্দ্র ক্যাম্পাস স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাইকেল চালিয়ে মেলা দেখতে যাচ্ছিল জয়। তেঁতুলতলী এলাকায় পৌঁছালে একটি ট্রাক সাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এ সময় সাইকেল থেকে রাস্তায় পড়ে যায় জয়। স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে জয়কে উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ভৈরব : কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এক শিশুসহ দুজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও চারজন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার কালিকাপ্রসাদ গাজীরটেক নামক স্থানে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দুজনের নাম লিটন মিয়া (৩৪) ও সজীব মিয়া (১০)। নিহত লিটন ভৈরব পৌর শহরের পলতাকান্দা এলাকার বাসিন্দা। সজীবের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার চানকোনা গ্রামে।

লালপুর (নাটোর) : নাটোরের লালপুরের রহিমপুর এলাকায় রাজশাহী থেকে খুলনাগামী ডিম ভর্তি পিকআপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে নিলু (৩২) নামের এক চালক নিহত হয়েছেন ও হেলপার শাহীন আলম আহত হয়েছে। নিহত চালক রাজশাহী খড়খড়িয়া এলাকার বাসিন্দা। আহত হেলপার শাহীন আলম রাজশাহীর বাগমারা এলাকার উত্তর সাজুরিয়া গ্রামের ইয়াদালীর ছেলে।

স্থানীয়সূত্রে জানাগেছে, দুপুর ৩টার দিকে লালপুর-বাঘা মহাসড়কের রহিমপুর এলাকায় হাজী সাফাতুল্লার বাড়ির নিকট রাজশাহী থেকে খুলনাগামী ডিম ভর্তি (ঢাকা মেট্রো ন- ১১-৬১৯০) পিকআপ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে নারিকেল গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে খাদে পড়ে যায়।এ সময় পিকআপের চালক নিলু ও হেলপার সাহীন আলম আহত হয়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চালক নিলুকে মৃত ঘোষণা করেন ও আহত সাহীন আলম চিকিৎসাধীন রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ