Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিশ্বশক্তিগুলো কমবেশি মার্কিন মুদ্রা অস্ত্র দুর্বল করতে আগ্রহী

ডলারের মৃত্যুঘণ্টা-২

অস্ট্রেলিয়ান ফিন্যান্সিয়াল রিভিউ | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ডলারের শ্রেষ্ঠত্ব ১০০ বছরেরও বেশি সময়ের পুরনো। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন ঘটার পাশাপাশি স্টার্লিং-এর মূল্য হ্রাস পাওয়ায় ডলারের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ভয়াবহ মন্দার পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আর্থিক ব্যবস্থায় ভাঙন এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ এক কঠোর নিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থার ব্যাপারে বিশে^র জোরালো ইচ্ছাকে প্রকাশ করে যা মুদ্রা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উন্নয়ন করবে। ১৯৪৪ সালে বিশ্বব্যপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা তাদের মুদ্রাকে স্বর্ণে নির্ধারণ করতে একমত হন। বিশ্ব স্বর্ণ মজুদের দুই তৃতীয়াংশ আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে মার্কিন ডলারের সাথে স্বর্ণ সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছিল।

ডলারের অতিমূল্যায়ন এবং তিন দশক ধরে বিশ্ব আধিপত্যবাদের মার্কিন দাবির প্রবলতা হ্রাস পাওয়া এই ব্যবস্থার ইতি ঘটায়। ১৯৭১ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র তার বাজেট ব্যবস্থাপনায় হিমসিম খায়। তাদের স্বর্ণ মজুদ বিশ্ব স্বর্ণ মজুদের এক চতুর্থাংশেরও কমে এসে দাঁড়ায়। ১৯৭৬ সালে এটা আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্রেটন উডস প্যাঁচখোলা থেকে যায়। ১৯৮০ সালের প্রথম দিক নাগাদ সকল শিল্পোন্নত দেশের মুদ্রা ছিল অবাধে ভাসমান ফিয়াট মুদ্রা যদিও মার্কিন ডলারের প্রাধান্যের অবসান ঘটেনি।

১৯৮০ থেকে ১৯৮৫-এর মধ্যে ডলার বিশ্বের পরবর্তী বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর বিপরীতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি লাভ করে। মার্কিন রফতানিকারকদের দাবি অনুযায়ী সুরক্ষামূলক নীতি পরিহারের উদ্যোগে রিগ্যান প্রশাসন প্লাজা চুক্তির আওতায় মুদ্রা বাজারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে জাপান, ফ্রান্স ও পশ্চিম জার্মানির সাথে পরিকল্পিত অবমূল্যায়নের আলোচনায় নিয়োজিত হয়।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন ডলারের বর্তমান রাজনীতিকীকরণ এবং উচ্চ হস্তক্ষেপবাদী মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ এক বিরাট আলাদা বিশ্ব অর্থনীতিতে দেশের আর্থিক নীতির সাথে ঐতিহাসিক বিষয়েরও প্রতিধ্বনি করে। বিশ্ব নেতৃত্বের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র চীন ও অন্যান্য উদীয়মান দেশের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা অর্থনীতিবিদদের মতই দক্ষ বাক্যবাগীশ। তারা তাদের ভ‚মিকা সাফল্যজনক ভাবে পালনের জন্য নৌকায় দোলা না দিয়েই বাজার নির্দেশনা প্রদান করেন। আগের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জ্যানেট ইয়েলেন ও ম্যারিও দাঘির সাথে তুলনায় কার্নির মন্তব্যকে বিপ্লবী মনে হয়।

একটি ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থার ম্যাক্রো-অর্থনৈতিক প্রভাব বা মার্কিন ডলার অধিকার করে বৈশ্বিক মুদ্রার একটি পুল এক তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হবে। কার্নির মন্তব্য সম্পর্কে কিছু রিপোর্টিং সত্তে¡ও এ ঘোষণার পরের কয়েক সপ্তাহে অধিকাংশ বড় মুদ্রার বিরুদ্ধে মার্কিন ডলারের সমাবেশের সাথে বিশ্ব মুদ্রা বাণিজ্যে তার প্রতিফলন ঘটেনি।

সম্ভবত বাজার ভাবেনি যে তিনি সিরিয়াস ছিলেন। তবে স্পষ্ট না হলে তিনি কিছুই ছিলেন না। একটি বহুমুখী আইএমএফএস-র প্রধান সুবিধা হচ্ছে তার বৈচিত্র্যতা। বহুমুখী রিজার্ভ মুদ্রা নিরাপদ সম্পদ সরবরাহ বৃদ্ধি করবে। একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবস্থা যাতে বহাল থাকতে পারে সেজন্য বৈশি^ক সমতাজনক সুদ হারের উপর নিম্নমুখী চাপ দূর করবে। এবং একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় বিশ্বব্যাপী নিরাপদ সম্পদ জারি করা বহু দেশের সাথে তাদের গৃহীত নিরাপত্তা প্রিমিয়াম হ্রাস পাওয়া উচিত।

একটি অধিকতর বৈচিত্র্যময় আইএমএফএস মূল থেকে উপচে পড়া হ্রাস করবে এবং তা করার মাধ্যমে বাণিজ্য ও আর্থিক চক্রের সমরূপায়ণ হ্রাস করবে। বিনিময়ে তা এ ব্যবস্থার ভঙ্গুরতা হ্রাস করবে এবং সমতাপূর্ণ সুদহারকে বাড়িয়ে মূলধন প্রবাহের স্থায়িত্বতা বৃদ্ধি করবে।

কার্নি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নেতৃত্ব গ্রহণে ইচ্ছুক। কিন্তু এ জন্য প্রতিযোগিতায় অনিচ্ছুক ছিলেন যার সিদ্ধান্ত হবে ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর। বর্তমানে এর এক অশ্ব দৌড় প্রতিযোগিতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্বব্যাংক প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। যাহোক, কার্নির মতামত যদি গতিবেগ পায় তাহলে বিনিয়োগকারীরা সকল আর্থিক বাজারে উল্লেখযোগ্য অশান্তির সম্মুখীন হবেন।

মার্কিন ডলারের মৃত্যু বহুবার বিনোদনের বিষয় হয়েছে। তবে বিশ্বব্যাপী মার্কিন প্রাধান্য হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ডলারের মৃত্যুর গতিবেগ বাড়ছে। নেতিবাচক সুদহার ও ডলারের অবমূল্যায়নের মধ্যে বিশ্বশক্তিগুলো কম-বেশি মার্কিন মুদ্রা অস্ত্রকে দুর্বল করতে আগ্রহী। পরিবর্তনের শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত ও বহুমুখী। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত যে এই পরিবর্তন খুব মসৃণ হবে না এবং প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি এবং অস্থিরতা খুবই বেশি মাত্রায় হতে পারে। এ সাথে রাজনৈতিক সঙ্ঘাতের আশঙ্কাও বিপুল ভাবে বৃদ্ধি পাবে। (শেষ)



 

Show all comments
  • Jesse ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
    ডলার এর বিকল্প হিসেবে জাপানি ইয়েন, ইউরো ও ব্রিটিশ পাউন্ড সুবিধা করতে পারেনি। এখন ও বিশ্বের ১০ টি বড় কোম্পানির ৮ টি আমেরিকার। দেখা যাক চায়না কতটা প্রভাব ফেলে।
    Total Reply(0) Reply
  • মেরিন-500 ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
    ইয়েস, ডলারের মৃত্যুঘণ্টা বাজানো এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
    ডলারের বিকল্প মুদ্রা দাঁড় করাতে না পারলে আমেরিকার খবরদারি বন্ধ করা যাবে না।
    Total Reply(1) Reply
    • Mizanur Rahman ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৭:৫৪ এএম says : 4
      i have a solution!! contact me
  • তাইজুল ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
    বিশ্বের বহু দেশ এখন ডলারের বিকল্প খোঁজা শুরু করেছে। অতএব ডলারের পতন ঘটবেই।
    Total Reply(0) Reply
  • মহররম আলী ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
    দীর্ঘদিন ধরে একটি মুদ্রা রাজত্ব করতে পারে না্
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডলার

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৬ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ ডিসেম্বর, ২০২২
১৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ