Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রশাসনেও চলবে শুদ্ধি অভিযান

প্রকল্প ব্যয় বাড়লেও কাজের অগ্রগতি হয়নি, উদ্বোধনের পরই নষ্ট হয়েছে এমন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হবে

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

আওয়ামী লীগের নাম বিক্রি করে দলের সেসব নেতাকর্মী চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, অপকর্ম করেছেন তাদের পাশাপাশি তাদের প্রশ্রয়দানকারী প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও আসছে শুদ্ধি অভিযান। সরকারের যেসব প্রকল্পে বড় বড় দুর্নীতি হয়েছে, বার বার প্রকল্প ব্যয় বাড়লেও কাজের অগ্রগতি হয়নি, কাজের উদ্বোধনের পরপরই যা নষ্ট হয়েছে গেছে এসব দুর্নীতির সঙ্গে সরকারের যেসব কর্মকর্তারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হবে।

প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে ফ্রেস ব্লাড সরবরাহ করতে চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। যেন আগামীতে কেউ দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করতে না পারে। কর্মকর্তাদের দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতি, অপকর্ম ও সম্পদের হিসাব প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা প্রশাসনের দুর্নীতিবাজদের কারণে দলের নাম বিক্রি করে অনেক অপকর্মকারী সম্পদের পাহাড় গড়েছেন আর দলের দুর্নাম তৈরি করেছে। নেতাদের নানা অপকর্ম যখন দলের ভাবমর্যাদা ও অর্জন নষ্ট করে ম্লান করছে ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় সিদ্ধান্তে সকল অপরাধের মূল উৎপাটন শুরু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছের একটি সূত্র জানায়, দলীয় নেতাদের অপকর্ম দূর করতে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও প্রশাসনের দুর্নীতিবাজদের ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে দলে নতুন যারা পদ পাবে তারাও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়বে। দলের স্বচ্ছ ইমেজের রক্ষার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ তৃণমূল প্রশাসনেও শুদ্ধি অভিযান চালানোর প্রয়োজন বোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের জনগণের জন্য তিনি রাজনীতি করছেন, জনগণ যেভাবে ভাল থাকবে তাই তিনি করছেন। জনগণের সেবা করাই তার লক্ষ্য।

সূত্র জানায়, প্রশাসনের নানা দুর্নীতি নিয়ে প্রশাসনেই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে সরকারের দুর্নীতি কমানোর চেষ্টা করা হলেও রাজনৈতিক চাপ ও ধীর গতির কারণে অপকর্মকারীদের অপকর্ম থামছে না এবং সরকার বা জনগণ পর্যাপ্ত সুফল পাচ্ছে না। তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান জোরদার করা হবে। প্রশাসনের দুর্নীতির কারণে সরকারের নানা অর্জন মøান হয়ে যাচ্ছে এবং যথা সময়ে সরকারের কাজ শেষ না হওয়ায় জনগণের সুফলের বদলে দুর্ভোগ বাড়ছে। সরকারের টাকাও নষ্ট হচ্ছে।

সম্প্রতি রুপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মহাদুর্নীতি, ফরিদপুর মেডিক্যালের পর্দা, রংপুর ও দিনাজপুর মেডিক্যালের ডেন্টাল চেয়ার, রংপুর মেডিক্যালে ভুয়া ভাউচার দিয়ে ২০ কোটি টাকা আত্মসাত, রেলওয়ের প্রকল্পে ক্লিনারের বেতন চার লাখসহ পুলিশ প্রশাসনের ভেতরের সকল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ইনকিলাবকে বলেন, শুধু অপকর্মকারী রাজনৈতিক নেতাদের শাস্তি দিলেই হবে না। অপকর্মকারীদের সাথে প্রত্যেক স্তরের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জড়িত। সকলের বিরুদ্ধে সমানভাবে ব্যবস্থা না নেয়া হলে অপরাধ থামবে না।

এদিকে আওয়ামী লীগের অপকর্মকারীদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও নজরদারিতে রয়েছেন এমন মন্তব্য করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, জেলা-উপজেলায় যে কেউ অপরাধ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র জানায়, ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবলীগের ঢাকা দক্ষিণের দুই নেতা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন। এরপর তাদের নানা অপকর্মের কথা উঠে আসে গণমাধ্যমে। এরপর বিভিন্ন ক্লাবের ক্যাসিনো অভিযান শুরু হয়। গ্রেফতার করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে। এরপর পরই বিভিন্ন ক্লাবের অভিযানে উঠে আসে আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় নেতার নাম। ক্লাবগুলোর পরিচালনা কমিটিতে থাকার কারণে সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউসার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজলসহ অনেক প্রভাবশালীদের নাম প্রকাশ্যে আসে। এছাড়া এসব ক্যাসিনোর টাকার ভাগ রাজনীতির কোন পর্যায় ও প্রশাসনের কোন পর্যায়ে পর্যন্ত ভাগ বাটোয়ারার টাকা পৌঁছাতে এসকল তথ্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রিপোর্ট দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নামও উঠে আসায় চলছে সমালোচনা। মতিঝিল থানার একশো গজের মধ্যে চারটি ক্লাব কী করে ক্যাসিনো চালায় এবং এতোদিন কেনো অভিযান চালানো হয়নি তা নিয়ে উঠে প্রশ্ন। তৃণমূল নেতাদের মন্তব্য দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি প্রশাসনেও শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। তা না হলে একজন নেতা গেলে আরেকজন নেতা অপকর্মের পাহাড় গড়ে তুলবে।

দলের শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানাচ্ছেন নেতারা। দলে যারা অপকর্মকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ উঠছে দলের ভেতর থেকে। গতকাল যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সমালোচনা করে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর জৈষ্ঠ গবেষক ও সহকারী কোর্ডিনেটর তন্ময় আহমেদ ফেসবুকে এক বছর আগের ‘যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের কমিটি ভেঙে দিতে শেখ হাসিনার নির্দেশ’ এমন একটি নিউজ শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, নিউজটা ঠিক ১ বছর আগের! চেয়ারম্যান স্যার এই ১ বছর কি আঙ্গুল চুষছিলেন? নাকি যুবলীগ শেখ হাসিনার আদেশ নির্দেশের বাইরে?



 

Show all comments
  • Didar Hossain ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
    ফ্যামিলির বড় কর্ম কর্তারা ছুরি করতে পারলে , ছোটরা তো করবেই , কারণ তাদের কাছ থেকেই তো শিক্ষা পাইতেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Hadayet Ullah ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
    ধন্যবাদ জানাই এই অগ্রযাত্রাকে
    Total Reply(0) Reply
  • KI Niloy ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
    সত্যি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। যদি বাস্তবায়ান করা হয় আর কি।
    Total Reply(0) Reply
  • Monowar Hossain Kousar ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
    কিছুই হবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের আনোয়ার হোসেন নামের একজন যুগ্ম সচিব আছেন, যার বিরুদ্ধে প্রচুর দূর্নীতির প্রমান ছিলো, কিন্তু তার কিছুই হয়নি। উল্টো ঐ মন্ত্রনালয়ের গুরুত্বপূর্ণ শাখায় তিনি ৪ বছর কর্মরত আছেন। এভাবে আরো কতো আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Zido Khan ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
    এগুলো তো সরকার গতো এগার বছর উৎসাহিত করছে, এখন কি রিজাব কমে গেছে মনে হয়, তাই ওদের টাকায় নজর পড়ছে,এগুলো সৃষ্টির বিধান কেউ অন্যের হক চুরি করে পার পাবে না,মুসলমান দেশের শাষক রা টাকা জমা করে ইউরোপ আমেরিকা, অবশেষে টাকার উৎস কি তা যানতে চায়, অবশেষে সিনেমার মতো চোরের টাকা হাতছাড়া হয়।পরে আপসোস করে মরে,হোসনে মোবারক,সাদদাম,গাদদাফি, সবাই একই
    Total Reply(0) Reply
  • Kamal Pasha Jafree ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
    ঘোষণা দিয়ে অভিযানে কতটুকু সফল হবে। এইরকম হল আর কি চোর কে বল চুরি কর গৃহস্থ কে বলে সজাগ থাকতে।
    Total Reply(0) Reply
  • প্রফেসর আবুল কাসেম ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৮:২৩ এএম says : 0
    জেলা উপজেলা ও ইউনিয়ন ভুৃমি অফিসের কর্মকর্তাদের দূর্নীতির কারনে সাধারন মানুষেরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে।নির্ধারিত ফি তে কাজ করেনা।তাদের চাহিদা পুরনহলেও মাসেরপর মাস তাদের পিছনে ঘুরতে হয়। কুমিল্লা সদরে ৩ ৪ মাসে জমাখারিজ পাওয়া না।বুড়িচংয়ের মোকাম ভুৃমি অফিসের তহশিলদার ইসমাইল দাপট অন্যরকম, এসিল্যান্ড ও তার কথার গুরুত্ব একটু বেশি দিয়ে থাকে কারন তহশিলদার ইসমাইলের উপরে লোক আছে।দুদক কি দেখেনা। যাগ্গে তবে শেখ হাসিনার এই উদ্দোগ বাস্তবায়ন হলে ভুমি বিষয়ে সাধারন মানুষের ভালবাসা তার প্রতি বাড়বে ইনশাল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahbub Khan ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৮:৪৮ এএম says : 0
    ঘোষণা দিয়ে অভিযানে কতটুকু সফল হবে। এইরকম হল আর কি চোর কে বল চুরি কর গৃহস্থ কে বলে সজাগ থাকতে।
    Total Reply(0) Reply
  • M N Ahmed ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১১:৫৬ এএম says : 0
    Actually they are so afraid that they would like to re-scan all parts and organizations of government to find out if there is still any neutral person who may create any problem in future for Current government. They wanna send them for early retirement!!!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রশাসন

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ