Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জোড়াতালি দিয়ে চলছে কুষ্টিয়ার ডাক বিভাগ

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

কুষ্টিয়া জেলায় ডাক বিভাগের সেবা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। অচল যাবনাহন, লোকবল ও বাজেট সঙ্কটের কারণে কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছে না কুষ্টিয়ার ডাক বিভাগ। অনেক ক্ষেত্রে সুবিধা বাড়লেও সাধারণ সেবা গ্রহীতাদের অসুবিধায় পড়তে হয় আরও বেশি। যার কারণে আধুনিকায়নের সুফল পাচ্ছে না লোকজন। গ্রামের ব্রাঞ্চ পোস্টঅফিসগুলো চলছে কাচারি বাড়ি, মুদি দোকানে। 

খোজ নিয়ে দেখা যায়, জেলা ও উপজেলা পোস্টঅফিসগুলোতে কিছুটা কাজকর্ম হলেও ইউনিয়ন পর্যায়ের ব্রাঞ্চ পোস্টঅফিসগুলো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। চুরি হয়ে গেছে অধিকাংশ পোস্টবক্স। চাউলের দোকান, মুদিখানাসহ কোথাও কোথাও কাচারি বাড়িতে ব্রাঞ্চ পোস্টঅফিসের কাজ চলছে। বাইরে থেকে মাঝে মধ্যে চিঠি আসলেও পোস্ট করলে তা আর পৌঁছায় না। কুষ্টিয়া শহরের ৬ রাস্তার মোড়ের পোস্টঅফিস এক সময় সরগরম থাকলেও এখন প্রতি মাসেও কয়েকটি চিঠি পোস্ট হয় বলে জানা গেছে। এ পোস্টঅফিসটি এক রকম বন্ধ হওয়ার পথে। কুষ্টিয়া প্রধান ডাকঘরের এক কর্মকর্তা জানান, কিছু কিছু সেবা বাড়লেও লোকবলের অভাবে সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, কুষ্টিয়া পোস্টাল ডিভিশনে ৪টি জেলা রয়েছে। পাকিস্তান আমলের পরিবহন দিয়ে কাজ চালাতে হয়। বেশির ভাগ পরিবহন অকেজো। রাস্তার মাঝেও অনেক সময় নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে। কুষ্টিয়া পোস্টালে সব মিলিয়ে সাড়ে তিনশ’ বেশি পোস্টঅফিস রয়েছে। সব অফিসে লোক সঙ্কট রয়েছে। খোকসা উপজেলার ৯৯টি গ্রামের মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে কাগজে কলমে ২টি পোস্ট অফিস ও ১২টি পোস্টঅফিস চালু থাকলেও কয়েকটি অফিসের অস্তিত্বও নেই। উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দুরের গ্রাম শিমুলিয়াতে একটি চিঠি বিলি হতে সময় লাগে এক মাস। ২-১টি ব্রাঞ্চ পোস্টঅফিস ছাড়া বেশিরভাগ অফিসেরই নিজস্ব ভবন নেই। পোস্ট মাস্টার অফিস করে নিজের বাড়ির বৈঠকখানা অথবা নিকটবর্তী কোন মুদি দোকানে। উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে একতারপুর বাজার। প্রায় ৩০ বছর আগে এ বাজারে ব্রাঞ্চ পোস্টঅফিস খোলা হয়। প্রথম দিকে পোস্টমাস্টার কিংকর বিশ্বাস সরকারি জমিতে খড়ের ঘরে তুলে অফিস করতেন। কিন্তু ঘর ও জমি বেদখলে চলে যাওয়ার পর থেকে তিনি অফিস করেছেন রামের মুদি দোকানে।
ডাক পরিদর্শক (প্রশাসন) মতিউর রহমান জানান, লোকবল সঙ্কট প্রকট। গ্রামীণ পোস্ট অফিস উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ব্রাঞ্চ পোস্ট অফিসগুলো ঠিক করার ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। তবে জমি পাওয়া যাচ্ছে না। এতকিছুর পরও পোস্টঅফিসের কয়েকটি সেবা দারুন সাড়া ফেলেছে ব্যবসায়ী ও সাধারণ লোকজনের মাঝে। বিশেষ করে পোস্টঅফিসের মোবাইল মানিঅর্ডার ও পোস্টাল ক্যাশকার্ড সিস্টেম। এছাড়া সঞ্চয়পত্র, পেনশন সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফা বৃদ্ধি সঞ্চয়পত্র কার্যক্রম পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পুরানো যানবাহন এখন গলার কাটা। অফিসারদের গাড়িগুলোও সেকেলে। একজন কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, ইউএনও ও ডেপুটি পোস্ট মাস্টারের পদ সমমর্যাদার। তারা চড়ে অর্ধকোটি টাকা দামের পাজেরো আর আমাদের চড়তে হয় পাকিস্তান আমলের লক্কড়-ঝক্কড় জিপে।
কুষ্টিয়া পোস্টাল ডিভিশনের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মো. আমান উল্যাহ মজুমদার জানান, যানবাহন, লোকবল ও বাজেট না বাড়ালে পোস্টঅফিস থেকে মানুষ পুরো সেবা পাবে না। তারপরও জোড়াতালি দিয়ে আগের তুলনায় বেশি কাজ করা হচ্ছে। পোস্টঅফিসের অনেক সেবার কথা সাধারণ মানুষ জানেও না। কাজও বেড়েছে। নতুন কিছু সেবা চালু করায় আবারও পোস্টমুখী হচ্ছে লোকজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ