Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাবি ভিসির ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান রাষ্ট্রদ্রোহিতা

প্রকাশ্যে ক্ষমা ও পদত্যাগের দাবি দেশের শীর্ষ আলেমদের

মিজানুর রহমান রানা, রাবি থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি আর্ন্তজাতিক সেমিনারে বক্তব্য শেষে ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দেয়ার পর থেকেই তিনি নানান আলোচনা-সমালোচনায় বিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’ হয়ে দাঁড়ায় ‘জয় হিন্দ’ স্লোগানের প্রসঙ্গটি।

অখন্ড ভারতের স্লোগান হওয়ায় স্বাধীন দেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মুখে এমন বক্তব্যে হতভম্ব হয়েছিলেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে বিষয়টি মিডিয়ায় আসার পর থেকেই দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং দেশের নেটিজনেরা ভিসিকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসাবে অবহিত করেন। বীর উত্তম ও জাতীয় বীর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিসি’র এমন বক্তব্যকে মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের আত্মত্যাগকে অসম্মান, মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ, চরম ঔদ্ধত্য ও রাষ্ট্রদ্রোহিতা ছাড়াও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও অখন্ড বাংলাদেশের উপর আঘাত হেনেছেন এমন দাবি তুলে তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা ও ভিসি পদ থেকে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
তবে ভিসি এই স্লোগানকে স্বীকার করে নিলেও স্লোগানের বিষয়টি মিডিয়ায় উপস্থাপনকে দেশের সার্বিক উন্নয়ন-অগ্রগতি রোধে বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে এই ধরনের বিভ্রান্তি ও সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে এমন দাবি করে একটি ব্যাখ্যা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দেয়া হয়। তবে সেই ব্যাখ্যার তীব্র সমালোচনা করেন দেশের বিজ্ঞজনেরা।

এ বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবের সাথে কথা বলেছেন এমন কয়েকজন দেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামিক স্কলার ও প্রথিতযশা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার নিচে উপস্থাপন করা হলো।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের একাংশের সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশে বসে আরেক দেশের স্লোগান দেয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। তবে তিনি বলেন, হ্যাঁ এমন হতে পারে অন্য দেশে গিয়ে তিনি সেই দেশের স্লোগান দিতে পারেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য কিন্তু নিজ দেশে বসে ভিসির মতো দায়িত্বশীল পদে থেকে তিনি কখনোই এমন স্লোগান দিতে পারেন না। ভিসি এক ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ করেছেন। তিনি ভিসিকে তার নিজের ভুল স্বীকার করার দাবি জানান।

দেশের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন ও সাংবাদিক মাও. উবায়দুর রহমান খান নদভী ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র, এর রাষ্ট্রীয় স্লোগান হচ্ছে বাংলাদেশ চিরজীবী হোক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির পক্ষে ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দেয়া শোভনীয় মনে করি না। আশা করি বিশ^বিদ্যালয়ের চ্যান্সেলার ও প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি ভালোভাবে দেখবেন।

দেশের জনপ্রিয় ইসলামিক ব্যক্তিত্ব, নন্দিত লেখক, মাসিক আত্-তাওহীদের সম্পাদক, চট্টগ্রাম ওমরগণি এম ই এস কলেজের (অব.) অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আমরা একটা স্বাধীন-সার্বভৌমত্ব দেশের নাগরিক, আমরাতো আরেকটা দেশের স্লোগান দিতে পারি না। ‘জয় হিন্দ’ এটা ভারতীয় স্লোগান, তার এই বক্তব্য আমাদের আত্মমর্যাদার সাথে সাংঘর্ষিক বলে বিশিষ্ট ও প্রবীণ এই ইসলামিক চিন্তাবিদ মনে করেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী রাবি ভিসি এম আব্দুস সোবহানের ‘জয় হিন্দ’ বক্তব্যের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশের কোন নাগরিক ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দিতে পারে না, এই স্লোগানের অর্থ ভারতের জয় হোক। এটাতো রাষ্ট্রদ্রোহী, দেশদ্রোহী কথা। তার এই স্লোগানের দেয়ার মাধ্যমে দেশে তীব্র বিতর্ক চলছে। একজন বিশ্ব্বিদ্যালয়ের ভিসি তিনি কিভাবে এমন কথা বলতে পারেন। ‘জয় হিন্দ’ তো ভারতের স্লোগানের, এটাতো বাংলাদেশের স্লোগানের না।

তিনি ভিসিকে প্রশ্ন রেখে বলেন, তাহলে কী তিনি ভারতের এজেন্ট হিসাবে কাজ করছেন? তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং প্রকাশ্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ভিসি যদি ক্ষমা না চান তাহলে যথাযথ ভাবে প্রয়োজনে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হবে। ওনি (ভিসি) কিভাবে স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের মাটিতে বসে অখন্ড ভারতের স্লোগানের দিতে পারেন। তিনি বলেন, আমরা শুধু এটার নিন্দাই করবো না, তার এ বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল, তাকে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে যদি ক্ষমা না চায় তাহলে এ ব্যাপারে যাহা কিছু দরকার তারা (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) করতে প্রস্তুত বলেও হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন তিনি।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ এ বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, সেই সার্বভৌমত্ব এবং অখন্ডতার বিরুদ্ধে নেক্কারজনকভাবে এধরণের স্লোগানের ইতোপূর্বে আর কোনদিন শোনা যায়নি। তিনি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ^বিদ্যালয়ের একজন ভিসি হয়ে ভিন্ন একটি দেশের স্লোগানের দেয়ার অর্থই হচ্ছে দেশের সাথে বিদ্রোহ করা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখন্ডতাকে অস্বীকার করা। এমন গর্হিত কাজের সাথে, রাষ্ট্রদ্রোহিমূলক কাজের সাথে যে ব্যক্তি বা যারা জড়িত থাকবে তারা কখনোই ভিসির মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকতে পারে না। তিনি ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে ভিসিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি যেভাবে প্রকাশ্যে এধরণের কথা বলেছেন তাকে প্রকাশ্যেই জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। আর তিনি এধরণের বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রের মানুষকে একটা বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।

রাবি ভিসির জয় হিন্দ স্লোগানের নিন্দা রাজশাহী বিএনপি
এদিকে রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাবি ভিসির ‘জয় হিন্দ’ স্লোগানের নিন্দা জানিয়েছে রাজশাহী বিএনপিবিএনপি নেতৃবৃন্দ মনে করেন হযরত শাহমখদুম (র.) এর পূন্যভ‚মি উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর আবদুস সোবহানের চরম দুঃসাহস, ধৃষ্টতাপূর্ণ ও আগ্রাসী মনভাবাপন্ন বক্তব্যে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তিরষ্কার স্বরুপ। পরিকল্পিত ভাবে দেয়া এই বক্তব্য দেশের বিরুদ্ধে পরিচালিত অপশক্তির ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ।
রাষ্ট্রদ্রোহীতার কর্মকান্ড পরিচালনায় লিপ্তদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র ও এমপি মো. মিজানুর রহমান মিনু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সভাপতি, সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও মহানগর বিএনপিসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ