Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জার্মানিতে উগ্র ডানপন্থা, আতঙ্কে মুসলমানরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ৫:৩৪ পিএম

জার্মানির হালে শহরে ইহুদিদের উপাসনালয়ে হামলায় মর্মাহত দেশটির মুসলমানরা৷ সেখানে বসবাসরত মুসলমানদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল এই ঘটনায় ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে৷ সেখানে মুসলমানরা এখন শঙ্কিত তাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও৷

হালে শহরে ইহিদিদের সিনাগগের উপর হামলার ঘটনাটি খুব একটা বিস্ময়কর ছিল না আয়মান মাজাইকের কাছে৷ এমন কিছু ঘটতে পারে তা আন্দাজ করতে পারছিলেন সেখানে বসবাসরত মুসলিমদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান৷ তার মতে, যেই ঘটনাটি ইহুদিদের সাথে ঘটেছে তার শিকার হতে পারত সেখানকার মুসলিমরাও৷ কেননা ইহুদি আর মুসলিম দুই সম্প্রদায়কেই একই নজরে দেখে দৃর্বত্তরা৷ এজন্য তাদের একে অন্যকে সহযোগিতা করা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি৷ মাজাইক নিজে ঘটনার পরে হালের ইহুদিদের সাথে দেখা করেছেন, জানিয়েছেন সহমর্মিতা৷

জার্মানির পূর্বের শহর হালেতে হামলার এই ঘটনাটি ঘটে ৯ই অক্টোবর৷ সিনাগগ বা ইহুদি উপাসনালয়ে তখন প্রার্থনা চলছিল৷ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে, হেলমেটে ক্যামেরা লাগিয়ে হত্যালীলা চালানোর প্রস্তুতিই হয়তো নিয়ে এসেছিল আততায়ী৷ কিন্তু বন্ধ দরজার উপর বিস্ফোরক নিক্ষেপ করেও সফল হতে পারেনি ঐ ব্যক্তি৷ সিনাগগের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীরা সেই হামলা প্রতিহত করে৷ ভিতরে ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে দুই পথচারীকে হত্যা করে সে৷ পালানোর সময় হামলাকারী ধরা পড়ে পুলিশের হাতে৷

এর আগে বিভিন্ন সময়ে উপাসনালয়ে হামলার শিকার হয়েছেন এই শহরের মুসলমানরাও৷ মাজাইক মনে করেন পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে৷ এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে, অপরাধীরা এখন আর মুখে কিছু বলে দমে যাচ্ছে না, তারা চায় সরাসরি আক্রমণ করতে৷ ‘উগ্র ডানপন্থী কিছু সন্ত্রাসীর আচরণ এখন অনেকটা ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার মতো৷ তারা তাদের ম্যানিফেস্টো জানান দিয়েছে, আর সেখান থেকে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয়ে একই ঘটনার অনুকরণ করছে৷ কাজেই এটা এক ধরনের ঘোষণা দিয়ে আসা বিপর্যয়ই বলতে পারেন৷ যা আসলেই ভয়ংকর,’ বলেন মাজাইক৷ 

 

জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে ৯১০টি ইসলাম বিদ্বেষী হামলার ঘটনা নথিবদ্ধ করেছে৷ সংখ্যাটি ২০১৭ সালের তুলনায় কিছুটা কম৷ সে বছর এই ধরনের ১০৭৫টি অপরাধের ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছিল৷ যদিও মুসলমানদের উপর সরাসরি হামলা আগের চেয়ে ক্রমশ বাড়ছে৷ ২০১৭ সালে যেখানে ৩২ জন আহত হয়েছিল, ২০১৮ সালে তা বেড়ে ৪০ জনে পৌছেছে৷

 

মুসলিমদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল মনে করে এই সংখ্যা দিয়েও ঠিক বাস্তবতা বোঝা যাবে না৷ কেননা অপরাধের সব ঘটনা পরিসংখ্যানে আসে না৷ হামলার শিকার যারা হয় তাদের একটি বড় অংশই সেগুলো প্রকাশ করেন না৷ আবার পুলিশ এবং তদন্তকারীরা কিছু অপরাধ ভুলভাবে শ্রেণীভুক্ত করে৷ এর ফলেও ইসলাম বিদ্বেষী অনেক ঘটনা বাদ যায়৷ এমনটাই বলা হয়েছে স্থানীয় আঞ্চলিক গণমাধ্যম ‘নয়ে অসনাব্রুকার সাইটুং’ এর এক প্রতিবেদনে৷

 

এরোফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ইসলাম বিশেষজ্ঞ কাই হাফেজের এক গবেষণায় দেখা গেছে ৫০ ভাগেরও বেশি জার্মান ইসলামভীতি পোষণ করেন৷ থিউরিংগিয়া এবং স্যাক্সোনির মতো কিছু অঞ্চলে এই হার ৭০ ভাগ বা তার চেয়েও বেশি৷ এক সময় প্রবণতাটি সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ে থাকলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে বিস্তৃতভাবে৷ জার্মান ‘অ্যান্টি ডিসক্রিমিন্যাশন অ্যাসোসিয়েশন’ এর সদস্য বিয়ার্তে ভাইসও বিষয়টি স্বীকার করেন৷ প্রতিদিনই মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাব বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি৷

আয়মান মাজাইক ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘থুতু দেয়া বা কড়া দৃষ্টি তেমন ক্ষতিকর অভিজ্ঞতা নয় বরং রাস্তা ঘাটে এখন আমাদেরকে প্রায়ই মৌখিক ও শারীরিক নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়৷ সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ক্রমশ, বাড়ছে বর্ণবাদী নিন্দা কিংবা অপমান করার প্রবণতা৷’ মাজাইক বলেন, এই পরিস্থিতির মুখোমুখি এখন মুসলিম আর ইহুদি দুই পক্ষই৷ সংখ্যাগরিষ্ঠের চেয়ে যারাই আলাদা তারাই এমন আচরণের শিকার হচ্ছে৷ মাজাইকের মতে অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, ‘শিশু ও নারীরা এখন মসজিদে আসতে ভয় পায়৷ শুক্রবারের প্রার্থনায় যাওয়ার সময় তারা বিচলিত বোধ করে৷ অনেকে আবার ভয়ে মসজিদে আসাও ছেড়ে দিচ্ছে৷’ তিনি মনে করেন জনগণের স্বাধীনতা ও  মুক্তচিন্তার অধিকার রক্ষার জন্য পরিচিত একটি দেশে এমন পরিস্থিতি চলতে পারে না৷ আর সেদিক থেকে হালে শহরে ইহিদিদের সিনাগগের উপর হামলাকে তিনি দেখছেন ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বা সন্ধিক্ষণ হিসেবে৷

উগ্র ডানপন্থা কীভাবে মোকাবেলা করা যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে মাজাইক মুসলিম বিদ্বেষ রোধে একজন কমিশনার নিয়োগের আহবান জানানোর কথা বলেন৷ বিভিন্ন পক্ষের সাথে আলোচনা শুরুর পাশাপাশি নিরাপত্তায় বিনিয়োগের উপরও জোর দেন তিনি৷ বলেন, উগ্র ডানপন্থাকে মোকাবেলা করতে হলে আপনাকে চূড়ান্ত অর্থে মুসলিম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।

জার্মানিতে উগ্র ডানপন্থা, আতঙ্কে মুসলমানরাজার্মানির হালে শহরে ইহুদিদের উপাসনালয়ে হামলায় মর্মাহত দেশটির মুসলমানরা৷ সেখানে বসবাসরত মুসলমানদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল এই ঘটনায় ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে৷ সেখানে মুসলমানরা এখন শঙ্কিত তাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও৷
হালে শহরে ইহিদিদের সিনাগগের উপর হামলার ঘটনাটি খুব একটা বিস্ময়কর ছিল না আয়মান মাজাইকের কাছে৷ এমন কিছু ঘটতে পারে তা আন্দাজ করতে পারছিলেন সেখানে বসবাসরত মুসলিমদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান৷ তার মতে, যেই ঘটনাটি ইহুদিদের সাথে ঘটেছে তার শিকার হতে পারত সেখানকার মুসলিমরাও৷ কেননা ইহুদি আর মুসলিম দুই সম্প্রদায়কেই একই নজরে দেখে দৃর্বত্তরা৷ এজন্য তাদের একে অন্যকে সহযোগিতা করা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি৷ মাজাইক নিজে ঘটনার পরে হালের ইহুদিদের সাথে দেখা করেছেন, জানিয়েছেন সহমর্মিতা৷
জার্মানির পূর্বের শহর হালেতে হামলার এই ঘটনাটি ঘটে ৯ই অক্টোবর৷ সিনাগগ বা ইহুদি উপাসনালয়ে তখন প্রার্থনা চলছিল৷ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে, হেলমেটে ক্যামেরা লাগিয়ে হত্যালীলা চালানোর প্রস্তুতিই হয়তো নিয়ে এসেছিল আততায়ী৷ কিন্তু বন্ধ দরজার উপর বিস্ফোরক নিক্ষেপ করেও সফল হতে পারেনি ঐ ব্যক্তি৷ সিনাগগের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীরা সেই হামলা প্রতিহত করে৷ ভিতরে ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে দুই পথচারীকে হত্যা করে সে৷ পালানোর সময় হামলাকারী ধরা পড়ে পুলিশের হাতে৷
এর আগে বিভিন্ন সময়ে উপাসনালয়ে হামলার শিকার হয়েছেন এই শহরের মুসলমানরাও৷ মাজাইক মনে করেন পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে৷ এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে, অপরাধীরা এখন আর মুখে কিছু বলে দমে যাচ্ছে না, তারা চায় সরাসরি আক্রমণ করতে৷ ‘উগ্র ডানপন্থী কিছু সন্ত্রাসীর আচরণ এখন অনেকটা ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার মতো৷ তারা তাদের ম্যানিফেস্টো জানান দিয়েছে, আর সেখান থেকে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয়ে একই ঘটনার অনুকরণ করছে৷ কাজেই এটা এক ধরনের ঘোষণা দিয়ে আসা বিপর্যয়ই বলতে পারেন৷ যা আসলেই ভয়ংকর,’ বলেন মাজাইক৷ 
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে ৯১০টি ইসলাম বিদ্বেষী হামলার ঘটনা নথিবদ্ধ করেছে৷ সংখ্যাটি ২০১৭ সালের তুলনায় কিছুটা কম৷ সে বছর এই ধরনের ১০৭৫টি অপরাধের ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছিল৷ যদিও মুসলমানদের উপর সরাসরি হামলা আগের চেয়ে ক্রমশ বাড়ছে৷ ২০১৭ সালে যেখানে ৩২ জন আহত হয়েছিল, ২০১৮ সালে তা বেড়ে ৪০ জনে পৌছেছে৷
মুসলিমদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল মনে করে এই সংখ্যা দিয়েও ঠিক বাস্তবতা বোঝা যাবে না৷ কেননা অপরাধের সব ঘটনা পরিসংখ্যানে আসে না৷ হামলার শিকার যারা হয় তাদের একটি বড় অংশই সেগুলো প্রকাশ করেন না৷ আবার পুলিশ এবং তদন্তকারীরা কিছু অপরাধ ভুলভাবে শ্রেণীভুক্ত করে৷ এর ফলেও ইসলাম বিদ্বেষী অনেক ঘটনা বাদ যায়৷ এমনটাই বলা হয়েছে স্থানীয় আঞ্চলিক গণমাধ্যম ‘নয়ে অসনাব্রুকার সাইটুং’ এর এক প্রতিবেদনে৷
এরোফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ইসলাম বিশেষজ্ঞ কাই হাফেজের এক গবেষণায় দেখা গেছে ৫০ ভাগেরও বেশি জার্মান ইসলামভীতি পোষণ করেন৷ থিউরিংগিয়া এবং স্যাক্সোনির মতো কিছু অঞ্চলে এই হার ৭০ ভাগ বা তার চেয়েও বেশি৷ এক সময় প্রবণতাটি সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ে থাকলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে বিস্তৃতভাবে৷ জার্মান ‘অ্যান্টি ডিসক্রিমিন্যাশন অ্যাসোসিয়েশন’ এর সদস্য বিয়ার্তে ভাইসও বিষয়টি স্বীকার করেন৷ প্রতিদিনই মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাব বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি৷
আয়মান মাজাইক ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘থুতু দেয়া বা কড়া দৃষ্টি তেমন ক্ষতিকর অভিজ্ঞতা নয় বরং রাস্তা ঘাটে এখন আমাদেরকে প্রায়ই মৌখিক ও শারীরিক নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়৷ সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ক্রমশ, বাড়ছে বর্ণবাদী নিন্দা কিংবা অপমান করার প্রবণতা৷’ মাজাইক বলেন, এই পরিস্থিতির মুখোমুখি এখন মুসলিম আর ইহুদি দুই পক্ষই৷ সংখ্যাগরিষ্ঠের চেয়ে যারাই আলাদা তারাই এমন আচরণের শিকার হচ্ছে৷ মাজাইকের মতে অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, ‘শিশু ও নারীরা এখন মসজিদে আসতে ভয় পায়৷ শুক্রবারের প্রার্থনায় যাওয়ার সময় তারা বিচলিত বোধ করে৷ অনেকে আবার ভয়ে মসজিদে আসাও ছেড়ে দিচ্ছে৷’ তিনি মনে করেন জনগণের স্বাধীনতা ও  মুক্তচিন্তার অধিকার রক্ষার জন্য পরিচিত একটি দেশে এমন পরিস্থিতি চলতে পারে না৷ আর সেদিক থেকে হালে শহরে ইহিদিদের সিনাগগের উপর হামলাকে তিনি দেখছেন ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বা সন্ধিক্ষণ হিসেবে৷
উগ্র ডানপন্থা কীভাবে মোকাবেলা করা যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে মাজাইক মুসলিম বিদ্বেষ রোধে একজন কমিশনার নিয়োগের আহবান জানানোর কথা বলেন৷ বিভিন্ন পক্ষের সাথে আলোচনা শুরুর পাশাপাশি নিরাপত্তায় বিনিয়োগের উপরও জোর দেন তিনি৷ বলেন, উগ্র ডানপন্থাকে মোকাবেলা করতে হলে আপনাকে চূড়ান্ত অর্থে মুসলিম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।

  1Attached Images

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জার্মানি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ