Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে লজ্জিত মার্কিন সেনারা, কুর্দিরা দেখছে প্রতারণা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ৮:০৭ পিএম

গত বছর পূর্ব সিরিয়ার একটি ফাঁড়িতে মার্কিন সেনাদের মদদপুষ্ট কুর্দি বাহিনীর একটি অবস্থানে আক্রমণ চালায় সিরিয়ার সরকারী ট্যাঙ্কের বহর এবং শত শত রাশিয়ান সেনা। পরে, মার্কিন সেনাদের আহ্বানে পেন্টাগন বি ২২ যুদ্ধবিমান দিয়ে প্রতিআক্রমণ করলে তারা পিছু হঠে যায়।

সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন অভিযানের মাঝামাঝি সময়ের এই ঘটনা দেখিয়েছিল যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী সেখানে তাদের প্রধান মিত্র সিরিয়ান কুর্দিদের সুরক্ষা দিতে আগ্রহী ছিল। তবে এখন হোয়াইট হাউস এই কুর্দি যোদ্ধাদের সুরক্ষা প্রত্যাহার করায় সেখানে লড়াই করেছে এমন কিছু স্পেশাল ফোর্স অফিসার বলছেন যে, মিত্রদের পরিত্যাগ করার আদেশে তারা গভীর অনুশোচনা বোধ করছেন। উত্তর সিরিয়ার কুর্দিদের সাথে কাজ করা এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা গত সপ্তাহে টেলিফোনে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘তারা আমাদের উপর আস্থা রেখেছিল এবং আমরা সেই বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছি। এটি আমেরিকান বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করে।’ আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি লজ্জা পেয়েছি।’ তারা দুজনেই শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ থেকে বাঁচতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব কথা বলেছেন।

এদিকে কুর্দিরাও এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সের সাথে জোটবদ্ধ এক কর্মকর্তা শেরওয়ান দারভিশ বলেছিলেন, ‘সামরিক নিয়মে ও যুদ্ধে কমরেডদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ কাজ বিশ্বাসঘাতকতা।’ কিছু সৈন্যর আশঙ্কা, ওয়াশিংটন পরবর্তী পুরো সিরিয়া থেকেই সৈন্য সরিয়ে নেবে। প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক টি এস্পার রোববার জানান যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব থেকে প্রায় এক হাজার আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন।

আমেরিকান স্পেশাল ফোর্সেস এবং অন্যান্য সৈন্যদের সাথে তাদের কুর্দি মিত্রদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তারা একসাথে বসবাস এবং খাবার ভাগাভাগি করছিল। তারা পাশাপাশি লড়াই করেছিল এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কুর্দি নিহত ও আহতদের সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছিল। এ বিষয়ে মার্কিন সামরিক বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডের প্রাক্তন প্রধান জেনারেল জোসেফ এল ভ্যাটেল বলেন, ‘তারা শোক করলে, আমরাও তাদের সাথে শোক করি।’

সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর সাবেক পরিচালক ডেভিড পেট্রাউস বলেন, ‘সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হলে উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা দায়েশের পুনরাবির্ভাবের আশঙ্কা দেখা দেবে।’ মার্কিন দৈনিক পত্রিকা ন্যাশনালকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি জানান, উত্তর সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরিণতির ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিরিয়া বিষয়ক নীতির সমালোচনা করে সাবেক এই মার্কিন জেনারেল বলেন, আবার (আইএস) দায়েশের উত্থান হলে তাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেরই ক্ষতি হবে।

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দি গেরিলাদের ওপর তুর্কি সেনাবাহিনীর আগ্রাসনের সুযোগ করে দিতে সেখান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কুর্দি গেরিলাদের হাতে হাজার হাজার আইএস সদস্য বন্দি অবস্থায় রয়েছে এবং তুর্কি আগ্রাসন অব্যাহত থাকলে তারা এসব সন্ত্রাসীকে মুক্ত করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। এদিকে, কুর্দি গেরিলাদের হাতে আটক আইএস সদস্যদের মধ্যে তাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে দেখা যায়নি বরং আটক থাকা অবস্থায় দেয়া সাক্ষাৎকারে তারা বলেছে, মুক্ত হতে পারলে তারা আবার তাদের তৎপরতা শুরু করবে।

সম্প্রতি সিরিয়ার সঙ্গে সীমান্ত থেকে কথিত ‘কুর্দি সন্ত্রাসী’দের উৎখাত করার লক্ষ্যে সেনা অভিযান শুরু করেছে তুরস্ক। এ অভিযানে এখন পর্যন্ত শত শত মানুষ হতাহত এবং লাখ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুর্দি

৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ