Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মোবাইল অপারেটর কোম্পানির স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বিশৃঙ্খলা চলছে। মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতায় দেশের কোটি কোটি গ্রাহক প্রতিনিয়ত প্রতারিত হলেও অপারেটর কোম্পানিগুলো থেকে প্রাপ্য রাজস্ব আদায় করতে পারছে না সরকার। বছরের পর বছর ধরে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এসব কোম্পানি। দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন, সরকারি মালিকানাধীন টেলিটকসহ চারটি কোম্পানির কাছে এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব বকেয়া রয়েছে বলে জানা যায়। শুধুমাত্র গ্রামীণফোনের কাছেই সরকারের পাওনা ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে ১২ কোটি টাকা বকেয়া থাকার কারণে দেশের সবচেয়ে পুরনোর মোবাইল অপারেটর কোম্পানি সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অনাদায়ী রাজস্ব আদায়ে সরকারের পক্ষ থেকে বড় মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন সময়ে তাগিদ দেওয়া হলেও বিটিআরসি শুধুমাত্র নোটিশ জারি করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করছে। বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে কার্যকর পদক্ষেপ বা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে তাদের তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। অথচ প্রয়োজনীয় অর্থের যোগানের অভাবে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের গতিশীলতা ব্যাহত হচ্ছে। অর্থসংস্থান করতে সরকারকে ব্যাংকসহ বিভিন্ন উৎসের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। অন্যদিকে মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানিগুলো তাদের লভ্যাংশ দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশের বৃহত্তম মোবাইল অপরারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোনের ৫৫ শতাংশের মালিকানা নরওয়েজিয়ান টেলিকম কোম্পানি টেলিনরের। দক্ষিণ এশিয়ায় সম্ভবত গ্রামীণফোনই হচ্ছে টেলিনরের সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ।

সারাবিশ্বেই এখন টেলিযোগাযোগ খাতে ডিজিটাইলাইজেশনের জয়জয়কার। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রবক্তা বর্তমান সরকারের আমলে দেশের প্রতিটি সেক্টরকেই ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসার কাজ চলছে। বলা হচ্ছে, ডিজিটালাইজেশন হলে সরকারি সেবাখাতের সুযোগ-সুবিধা জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে। ই-গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠিত হলে জনগণের ভোগান্তি কমার পাশাপাশি স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ঘুষ-দুর্নীতির প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে। ডিজিটালাইজেশন সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে বলে প্রত্যাশা করা হলেও ডিজিটালাইজেশনকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানিগুলোর অস্বচ্ছতা ও স্বেচ্ছাচারিতায় নাকাল হচ্ছে দেশের কোটি কোটি গ্রাহক। তারা একদিকে নানা পন্থায় প্রতারণার মাধ্যমে দেশের মানুষের সম্পদ লুণ্ঠন করছে। অন্যদিকে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে সরকারকে সরাসরি রাজস্ব বঞ্চিত করছে এবং বিদ্যমান রাজস্ব কাঠামোর আওতায় সরকারের প্রাপ্য রাজস্বও ঠিকমত পরিশোধ করছে না। বছরের পর বছর ধরে অনাদায়ী রাজস্ব এখন সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। নতুন সিম বিক্রি ও রিপ্লেসমেন্টে ভ্যাট আইনে ৪টি মোবাইল ফোন কোম্পানির কাছে সরকারের ৮৮৩ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির খবর প্রকাশিত হয়েছিল আরো ২ বছর আগে। কলরেট, কলড্রপ, নেটওর্য়াক বিড়ম্বনা, ইন্টারনেটের গতিসহ মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর সেবায় নানামুখী বঞ্চনা ও প্রতারণার শিকার কোটি কোটি গ্রাহকের আর্থিক ক্ষতির অংক সঠিকভাবে নিরূপণ করা কঠিন।

টেলিযোগাযোগ ও মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং নেটওয়ার্ক ভোগান্তি লাঘবে বিটিআরসি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। তারা না পারছে অপারেটর কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে রাজস্ব খাতের পাওনা আদায় করতে, না পারছে জনগণের ভোগান্তি কমিয়ে এনে এ খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে। একসময় কলড্রপের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে বাধ্য হলেও এখন টেলিকম কোম্পানিগুলো তাও গ্রাহ্য করছে না। থ্রিজি, ফোরজি ইন্টারনেট সেবা ও গতির কথা বলা হলেও গ্রাহকরা ন্যূনতম গতির নিশ্চয়তা পাচ্ছে না। ডিজিটাল বাংলাদেশে কোটি কোটি মোবাইলফোন ব্যবহারকারী ও ইন্টারনেট গ্রাহক মোবাইলফোন অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের দ্বারা প্রতারণার শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে বিটিআরসি আয়োজিত গণশুনানিতে ভুক্তভোগীরা এসব বিষয়ে বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিকার, জবাবদিহিতা বা ক্ষতিপূরণের কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। টেলিযোগাযোগ সেক্টর বর্তমানে দেশের বৃহত্তম সেবাখাত এবং রাজস্ব আয়ের অন্যতম বড় উৎস। এ খাতের বিশৃঙ্খলা, অস্বচ্ছতা এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও রেগুলেটরি সংস্থার স্বেচ্ছাচারিতা জাতির সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে সরাসরি ব্যাহত করছে। টেলিযোগাযোগ খাতের দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, সেচ্ছাচারিতা বন্ধের সাথে সাথে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নিশ্চিত করা না হলে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ও সম্ভাবনা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া অসম্ভব। সারাবিশ্ব এখন ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তির মহাসরণী ধরে এগিয়ে চলেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে কোটি কোটি মোবাইলফোন-ইন্টারনেট গ্রাহক কতিপয় মোবাইলফোন অপারেটর ও আইএসপি কোম্পানির কাছে বছরের পর বছর ধরে জিম্মি থাকতে পারে না। এ ক্ষেত্রে বিটিআরসি এবং সরকারের সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা চিহ্নিত করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর কর্মকান্ডে অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে বিটিআরসির সক্ষমতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন