Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাসা-বাড়িতে গ্যাস ব্যবহারে নতুন চিন্তা

| প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগের সুযোগ শেষ হয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এখন নতুন বাড়ি-ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে আগের মতো পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ পাওয়া যাবে না, এমনটা ধরে নিয়েই পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশ প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর ভাসছে, কোনো কোনো মহল থেকে অতীতে এমন দাবি করা হলেও আরো বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা কমতে শুরু করেছিল। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণসহ শিল্পখাতে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে অনেক আগে থেকেই গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইনগুলোতে গ্যাসের চাপ কমতে শুরু করেছিল। এহেন বাস্তবতায় নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও উন্নয়ন ছাড়া গৃহস্থালি বা শিল্পখাতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে আবাসন খাতের হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়ে। গ্যাস সংযোগ না থাকায় নতুন নতুন বাড়ি ও হাউজিং প্রকল্পগুলোর বিনিয়োগ ও বেচাকেনা গতিহীন হয়ে পড়ে। এহেন বাস্তবতায় ইতোমধ্যে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের উপর নির্ভর করে আবাসন খাতে নতুন চিন্তাধারার উন্মেষ ঘটতে শুরু করেছে। বিশ্বের অনেক দেশেই পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগের সুযোগ নেই। তাদেরকে সিলিন্ডার গ্যাস বা বিকল্প ব্যবস্থায় রান্না-বান্নার কাজ সারতে হয়। পরিবর্তিত বাস্তবতায় আমাদেরকেও নতুন ব্যবস্থাকে গ্রহণ করার মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে সেই বাস্তবতাকেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

প্রাকৃতিক গ্যাসকে প্রক্রিয়া ও সিলিন্ডারজাত করে ব্যবহারে বাড়তি খরচ ও ঝক্কি-ঝামেলার বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না। সেই সাথে সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস-সিলিন্ডার বিষ্ফোরণের ঝুঁকি বড় ধরনের নিরাপত্তা সংকটের জন্ম দিয়েছে। গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে গৃহস্থালিতে গ্যাস ব্যবহারে নানাভাবে অপচয় এবং অস্বচ্ছতার সুযোগ থাকলেও দশকের পর দশক ধরে এভাবে গ্যাস ব্যবহারে তেমন কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখা যায়নি। বিদ্যমান ট্রান্সমিশন লাইনের ত্রæটি, সিস্টেম লস এবং গ্রাহক পর্যায়ে অপচয় ও অমিতব্যয়িতা দূর করে ট্রান্সমিশন অব্যাহত রাখার বিষয়েও সরকারের সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে। বৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ থাকলেও সারাদেশে হাজার হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ এখনো বহাল রয়েছে। এসব গ্যাস সংযোগ থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে সরকার। দুর্নীতি, সিস্টেম লস ও অপচয় রোধ করে গ্যাস ট্রান্সমিশন সিস্টেমের সংস্কার, আধুনিকতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে গ্যাস থেকে সরকারের রাজস্ব যেমন আরো বাড়ানো সম্ভব, সেই সাথে ট্রান্সমিশন লাইনে গ্যাস সরবরাহের সুযোগও আরো বাড়ানো অসম্ভব নয়। এ সব বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার আগ পর্যন্ত চলমান বাস্তবতায় আমাদেরকে গৃহস্থালিতে গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সিলিন্ডারসহ সম্ভাব্য বিকল্পগুলো মাথায় রাখতে হবে এবং আবাসিক খাতের উদ্যোক্তাদের সেভাবেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

গত এক দশকে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের সাফল্য অনেক। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উন্নয়নে তেমন কোনো উদ্যোগ না থাকলেও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বিকল্প উদ্যোগগুলোর সাফল্য অস্বীকার করা যায় না। বিশেষত মাতারবাড়িতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ এবং আমদানিকৃত এলএনজি সরবরাহের পাইপলাইন নির্মাণের মধ্য দিয়ে দেশের জ্বালানি খাত নতুন যুগে পর্দাপণ করেছে। আমদানিকৃত এলএনজি দেশের শিল্পখাতের গ্যাস সংকট লাঘবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। তবে এলএনজি কেনায় অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি, অপচয় ও ভর্তুকি যেন সরকারের ইতিবাচক উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। আবাসন খাতে গ্যাস সংযোগের বদলে সিলিন্ডারের ব্যবহার সুলভ, সহজসাধ্য ও নিরাপদ করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষত গ্যাসের সিল্ডিার বিষ্ফোরণে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে একে জনপ্রিয় বা গ্রাহকের আস্থায় আনা সম্ভব নয়। সেই সাথে সিলিন্ডারের মূল্য, সঠিক ওজন এবং ভেজাল নিয়ন্ত্রণে মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে আরো জোরালো ও বিস্তৃত করা আবশ্যক। নতুন বহুতল আবাসিক ভবনে সিলিন্ডার গ্যাস সংযোগ ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে সহজ, গ্রাহকবান্ধব ও আধুনিক বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে। একনেক বৈঠকে আবাসিক ভবনে যে সব নতুন সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার পাশাপাশি গ্যাস সংযোগ, সিলিন্ডার ব্যবহারে নিরাপত্তার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া দেশে গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে এলেও নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও উন্নয়নের সম্ভাবনা নিঃশেষ হয়ে যায়নি। ভোলার শাহজাদপুরে যে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে তাতে ট্রিলিয়ন কিউবিক মিটারের নতুন মজুদের কথা জানা যায়। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকারকে এখন সে দিকে নজর দিতে হবে।



 

Show all comments
  • সচেতন জনতা ১৭ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:৩৯ পিএম says : 0
    গ্যাস ব্যাবহার সরবারহ বিষয়াদি নিয়া আপনার আরও খোলামেলা লেখা চাই।আর বেশ কিছুদিন মোবায়দুর রহমান সাহেবের লেখা দেখছিনা।তার ও লেখা চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • দীনমজুর কহে ১৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:০৫ পিএম says : 0
    প্রিয়, সম্পাদক সাহেব ভক্তিপুর্ন সালাম নিন।আমি মেজর জলিলের একজন কর্মি ছিলাম। তাই তার সমর্পকে লিখতে চাই।মুক্তমন্চে লেখা যাবে কিনা জানালে একটু খূশি হবো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন