Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যুবলীগ চেয়ারম্যানের ভাগ্য নির্ধারণ রোববার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:২৪ এএম


আগামী রোববার ভাগ্য নির্ধারণ হবে যুবলীগের প্রতাপশালী চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর। স্পষ্টভাষী আর ‘একক সিদ্ধান্তে’ সংগঠন পরিচালনায় সিদ্ধহস্ত ওমর ফারুক হঠাৎ করেই দলের ভেতরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। তাকে বাদ দিয়ে দিব্যি চলছে সবকিছুই। রোববার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন যুবলীগ নেতারা সেখানেও ওমর ফারুক চৌধুরীকে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তার সঙ্গে আরো নিষেধ করা হয়েছে সংগঠনটির প্রেসিডিয়াম মেম্বার নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনকে।

সূত্র জানায়, রোববারের এই বৈঠকটি যুবলীগের সম্মেলন উপলক্ষে হলেও এতে যুবলীগ চেয়ারম্যানের ইস্যুটি প্রধান্য পাবে। এছাড়া যুবলীগের নেতৃত্বে যারা আসবে তাদের বয়স নির্ধারণ নিয়েও নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় সূত্র জানায়, গত ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হওয়া যুবলীগের প্রেসিডিয়াম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না ওমর ফারুক। এ বৈঠকে দফতর সম্পাদক আনিসুর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া সম্প্রতিক ক্যাসিনো ইস্যুতে যুবলীগ চেয়ারম্যানের জড়িত থাকা, সংগঠনে টাকার বিনিময়ে পদ দেয়া, দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ বেশ কিছু অভিযোগের বিষয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতে, এসব অপকর্মের কারণে শাস্তি হিসেবে যুবলীগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কী ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে সে সিদ্ধান্তের অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুবলীগ নেতারা বিস্তারিত প্রমাণাদিসহ বক্তব্য তুলে ধরবেন।

সূত্র জানায়, যুবলীগের সকল কর্মকান্ড থেকে ওমর ফারুককে বিরত রাখতে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রোববারের বৈঠকে হয়তো তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যহতি দেয়া হতে পারে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। এছাড়া সম্মেলনের নানা দিক নিয়েও নির্দেশা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
যুবলীগের নেতারা জানিয়েছেন, ওই দিন যুবলীগ নেতাদের পদ পেতে বয়স নির্ধারণ করে দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুবলীগ নেতাদের সর্বোচ্চ বয়স ৪৫ নির্ধারণ করা হতে পারে।

এদিকে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ ইনকিলাবকে বলেন, রোববার গণভবনের বৈঠকে বিতর্কিত কোন নেতাদের নেয়া হবে না। প্রেসিডিয়াম মেম্বার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনকি সম্পাদকরা এদিন গণভবনে যাবেন। তবে কেন্দ্রীয় সম্পাদক ম-লীর সদস্যরাও বৈঠকে যেতে চাচ্ছেন কিন্তু তারা যাবেন কি না এখনো ঠিক করা হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাদের গণভবনে নেয়া হবে না এ লিস্ট এখনো তৈরী করা হয়নি। তৈরী হলে আপনারা জানবেন। সূত্র জানায়, রোববার গণভবনের বৈঠকে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে শহিদ সেরনিয়াবাত, শেখ শামসুল আবেদীন, আলতাব হোসেন বাচ্চু, মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, মো. ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরন, আবদুস সাত্তার মাসুদ, মো. আতাউর রহমান, বেলাল হোসাইন, আবুল বাশার, মোহাম্মদ আলী খোকন, অধ্যাপক এবিএম আমজাদ হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার নিখিল গুহ, শাহজাহান ভুইয়া মাখন, ডা. মোখলেছুজ্জামান হিরু যাবেন। এছাড়া যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, মঞ্জুর আলম শাহীন, মামুনুর রশিদ, সুব্রত পাল, নাসরীন জাহান চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে, সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ, আমির হোসেন গাজী, বদিউল আলম, ফজলুল হক আতিক, আবু আহমেদ নাসিম পাভেল, ফারুক হাসান তুহিন, এমরান হোসেন খান উপস্থিত থাকবেন। তবে এদের মধ্য থেকে কেউ বিতর্কিত কর্মকান্ডে যুক্ত থাকলে তিনি বৈঠকে যাওয়া থেকে বাদ পড়বেন।
গেল মাসের শেষে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান জোরদার হলে যুবলীগ চেয়ারম্যানের নাম বিভিন্নভাবে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে আসে। অভিযানে আটক যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে ওমর ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠতা ও ‘অবৈধ কর্মকান্ডের পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে তার সম্পৃক্তার চিত্র গোয়ান্দা সংস্থার প্রতিবেদনে পাওয়া যায় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গত ৩ অক্টোবর যুবলীগ চেয়ারম্যানের সমস্ত ব্যাংক হিসেব তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট। তিনদিন ৬ অক্টোবর সরকারের অনুমতি ব্যতীত ওমর ফারুক চৌধুরীর দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত এক মৌখিক নির্দেশনার কথা জানান ইমিগ্রেশন পুলিশের কর্মকর্তারা। এরপর থেকেই যুবলীগ চেয়ারম্যানকে নিয়ে নানা গুঞ্জন ডালপালা ছড়াতে থাকে। অনেকটা স্বেচ্ছায় অন্তরালে চলে যান ওমর ফারুক চৌধুরী।

জানা গেছে, হাঠাৎ চাপে পড়ে গ্রেফতার এড়াতে সরকারের শীর্ষ মহলে তদবির শুরু করেন তিনি। এমনকি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বেশ কয়েকবার গণভবনে প্রবেশ করেন ওমর ফারুক। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।
সূত্র জানায়, গত ৬ অক্টোবর রাতে প্রধানমন্ত্রী দিল্লি সফর শেষে গণভবনে ফিরে এলে সেখানে যুবলীগের চেয়ারম্যানকে দেখে তাকে এড়িয়ে গিয়েছেন। তার সঙ্গে কথা বলেননি। বরং গণভবনে তার উপস্থিতি কিভাবে হলো সেটাও অন্যদের কাছে জানতে চেয়েছেন সরকারপ্রধান।

যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৩ নভেম্বর। সবশেষ ২০১২ সালে যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই কংগ্রেসে যুবলীগ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ওমর ফারুক চৌধুরী।###

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ