Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বরিশাল মহানগরীর পুকুর ও লেকগুলোর দুরাবস্থা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বরিশাল মহানগরীর সরকারি পুকুর ও বদ্ধ জলাশয়গুলো পরিবেশসহ নগরীর বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারি অবকাঠামো নির্মাণসহ জনস্বার্থে এসব জলাধারগুলো খননসহ এর সৌন্দর্য বর্ধনে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হলেও তা এখন নগরবাসীর বিড়ম্বনাসহ জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। অথচ সিটি কর্পোরেশনের কনজার্ভেন্সি শাখায় নগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থাসহ পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় বিপুল জনবল রয়েছে। বর্তমান নগর প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পরে রাতের বেলা নগরীর বর্জ্য অপসারণে যথেষ্ট সাফল্য আসলেও পয়ঃনিস্কাশনসহ পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি ঢিলেঢালা হয়ে গেছে। তবে নগরীর প্রানকেন্দ্র সদর রোড ও সন্নিহিত এলাকার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। এর আসেপাশে চোখ রাখলেই এ নগরীর পরিচ্ছন্নতার আসল চিত্র চোখে পড়বে।

নগরীর ডিসি লেক, কালেক্টরেট পুকর, জেলা পরিষদের সামনের পুকুর, রাখাল বাবুর পুকুর এবং নবগ্রাম রোড-চৌমহনীতে সরকারি হাতেম আলী কলেজ লেকটির অবস্থা দিন দিন পরিবেশসহ জনস্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। জেলা জজ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বাসার সামনের ডিসি লেকটির পানি দূষিত হয়ে প্রায়ই পঁচা দুর্গন্ধ ছড়ায়। ইতোপূর্বে লেকটির সাথে পার্শ্ববর্তী নদীর জোয়ার-ভাটার পানি চলাচলের একটি নালা থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের উদাসীনতায় তা ভরাট হয়ে পয়ঃনিস্কাশন বন্ধ।

উপরন্তু পার্শ্ববর্তী বঙ্গবন্ধু উদ্যান সংলগ্ন মডেল স্কুলের একটি ফাস্ট ফুড শপসহ একাধিক পথ খাবারের দোকানের নানা ধরনের বর্জ্য রাতের আধারে লেকটিতে ফেলা হচ্ছে। ফলে প্রায়শই পানি দূষিত হয়ে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমনকি পানি পচে মাছ মরে ভেসে উঠে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হচ্ছে। মৎস্য অধিদফতরের লোকজন কয়েক দফায় নানা ধরনের রাসায়নিক প্রয়োগ করে পানি পরিচ্ছন্ন করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কিছুদিন পরপরই এখানের পানির দুর্গন্ধে পার্শ্ববর্তী বঙ্গবন্ধু উদ্যানের ওয়াকওয়েতে হাঁটতে আসা নগরবাসীর দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। পরিবেশ অধিদফতরও কয়েক দফায় বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর করলেও জেলা প্রশাসনের লেকটি পানি দূষণমূক্ত করতে পারেন নি।

প্রায় একই অবস্থা নগরীর সরকারি হাতেম আলী কলেজ লেকটির। বরিশাল-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কের পাশের ওই লেকটির পানিও প্রায়শই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নগরীর অত্যন্ত জনবহুল ও ব্যস্ততম ওই এলাকার মানুষসহ পার্শ্ববর্তী মার্কাজ মসজিদের মুসুল্লিদের ওজু গোসলের একমাত্র জলাশয় ওই লেকটিতে প্রায়শই বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক দ্রব্যসহ পলিথিন ভাসতে দেখা যায়। লেকটির দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে রাজকুমার ঘোষ রোডে বিপুল সংখ্যক পথ খাবারের দোকানের বেশিরভাগ বর্জ্যই রাতের আধারে লেকটিতে ফেলা হচ্ছে। এমনকি লেকটির দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে যে ড্রেনটি রয়েছে, সেটির মধ্যেও পথ খাবারের দোকানের বর্জ্য ফেলে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে।

ফলে পার্শ্ববর্তী খালের সাথে লেকটির পানি চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে এখানের পানি দূষণ আরো তরান্বিত হচ্ছে। ইতোপূর্বে এ লেকটির চারিধারসহ এর পানিতে ভাসমান যেকোন বস্তু পরিস্কার করার জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে একজন দৈনিক মজুরিভিত্তিক পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োজিত থাকলেও বছরখানেক আগে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। রাতের বেলা যেসব পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বিভিন্ন বাসা-বাড়ির বর্জ্য সংগ্রহ করে লেকটির পূর্ব পাড়ে ডাম্পিং করে, তাদের পক্ষে লেকটি পরিস্কার রাখা দুরুহ হলেও কাগজে কলমে তাই হচ্ছে। ফলে রাতের অন্ধকারে লেকটিতে ভাসমান বর্জ্য যেমনি পরিস্কার হচ্ছে না, তেমনি লেকটির চারিধারের ওয়াকওয়েসহ রাস্তাও পরিস্কার হয় না। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী একাধিকবার নগর ভবনের কনজার্ভেন্সি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কোন অগ্রগতি হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি নগরীর যে ২২ নাম্বার ওয়ার্ডে এই লেকটি, গত এক বছরেও সেখানের বাসিন্দারা সুপারভাইজারের দেখা পাননি।

অথচ প্রায় দু’কোটি টাকা ব্যয়ে লেকটির তিন ধারে ওয়াকওয়ে এবং দক্ষিণপাড়ে মিনি পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে বিগত দুটি নগর পরিষদের সময়ে। বর্তমান নগর পরিষদও লেকটির উত্তর-পশ্চিম কোনে নতুন করে আরেকটি মিনি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে জনস্বার্থে করা এসব উন্নয়ন কর্মকা-ই এখন ভেস্তে যেতে বসেছে।

নগরীর ফকির বাড়ি রোডের রাখাল বাবুর পুকুরটিও বিগত নগর পরিষদের সময়ে বিপুল অর্থ ব্যয়ে উন্নয়ন করা হয়। প্রায় এক একর এলাকার ওই পুকুরটির চার পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ এর সংস্কারও করা হয়েছে বিপুল অর্থ ব্যয়ে। কিন্তু যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ইতোমধ্যেই এ পুকুরটিও এলাকাসীর দুঃখে পরিণত হয়েছে।

এছাড়াও নগরীতে সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে যেসব পুকুর ও বদ্ধ জলাশয়সহ ব্যবহার্য পানির আধার রয়েছে তার কোনটির অবস্থাই ভালো নয়। এসব বিষয়ে গতকাল সিটি কর্পোরেশনের কনজার্ভেন্সি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

 

 



 

Show all comments
  • ash ১৯ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:১১ এএম says : 0
    BARISAL MEOR KI KORE?? ONAR CHOKHE KI E SHOB PORE NA???
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুকুর

১৮ এপ্রিল, ২০২২
৩১ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ