Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাবরি মসজিদ মামলায় হিন্দু পক্ষের উদ্ভট দাবি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

অযোধ্যা ভ‚মি মামলায় হিন্দু পক্ষের আইনজীবীরা উদ্ভট দাবি উত্থাপন করেছেন। তারা মসজিদ পুনর্গঠনের দাবিকে অযৌক্তিক বলে মনে করেন। খবরে বলা হয়, বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভ‚মি মামলায় ‘রাম লাল্লা বিরাজমান’-এর প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীরা তাদের হলফনামা জমা দিয়ে বলেছেন, রাম মন্দির নির্মাণের জন্য এই বিতর্কিত জমি হস্তান্তর করা হোক তাদের কাছে। হিন্দু পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি উত্থাপন করে যে, যেখানে বাবরি মসজিদের আর অস্তিত্বই নেই সেখানে মুসলিম আবেদনকারীরা এই জমি নিয়ে কোনও দাবির অধিকারী হতে পারে না।
আইনজীবীরা আরও বলেন, নির্মোহী আখড়া জমিটিও দেওয়া উচিত নয়, কারণ এটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল যে ভগবান রামের জন্মস্থানকে একটি আইনত সত্তা হিসাবে আদৌ বিবেচনা করা যায় কিনা। হিন্দু পক্ষ তাদের হলফনামায় আরো বলেন, ‘অযোধ্যা একটি পবিত্র স্থান এবং তীর্থস্থান। হিন্দুদের বিশ্বাস যে এখানে মন্দির বা বিগ্রহ না থাকলেও এই জায়গাসহ গোটা অযোধ্যার একটি আধ্যাত্মিক তাৎপর্য রয়েছে’।
‘বিতর্কিত স্থানে মসজিদ পুনর্গঠন করার দাবি একটি অযোগ্য এবং অন্যায্য দাবি এবং হিন্দু ধর্ম, ইসলামী আইন এবং ন্যায়বিচারের সমস্ত নীতিগুলির পরিপন্থী। যে অঞ্চলটি নিয়ে এই বিতর্ক সেটি এক এবং অবিভাজ্য, তাই পুরো অঞ্চলটিই রাম জন্মভ‚মি হিসাবে উপাসনা করার জন্য দেওয়া উচিত’, বলা হয় হলফনামায়।
বুধবার ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারকের সাংবিধানিক বেঞ্চ অযোধ্যা মামলায় চল্লিশ দিনের দৈনিক শুনানি শেষ করে। মনে করা হচ্ছে আগামী ১৭ নভেম্বর নিজের অবসরের আগে রাম জন্মভ‚মি-বাবরি মসজিদ সংক্রান্ত এই মামলার রায় ঘোষণা করতে পারে রঞ্জন গগৈ। রায় ঘোষণার প্রত্যাশায় গত সপ্তাহ থেকেই অযোধ্যা জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।
প্রসঙ্গত, এর আগে একটি সূত্র দাবি করে যে, অযোধ্যায় মন্দির-মসজিদ নিয়ে বিতর্কিত এলাকার জমির দাবি ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এবং রাম মন্দিরের জন্য সরকার জমিটি নিলে, তাদের কোনও আপত্তি নেই। বাবরি মসজিদের জমির দাবি ছেড়ে দেয়ার পাশাপাশি ওয়াকফ বোর্ড নাকি জানিয়েছে, অযোধ্যায় যে মসজিদ রয়েছে, তা সংস্কার করবে সরকার। অন্য যে কোনও উপযুক্ত জায়গায় মসজিদ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে ওয়াকফ বোর্ড বলেও জানায় সূত্রটি।
কিন্তু তারপরেই শুক্রবার অযোধ্যা মামলার মুসলিম পক্ষের এজাজ মকবুল সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের সম্পর্কে সূত্র মারফৎ করা দাবি খারিজ করে দেন। মুসলিম আবেদনকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী পাঁচ আইনজীবীর একটি দল একটি মধ্যস্থতা প্যানেলের এ জাতীয় কোনও প্রস্তাবে সম্মতি দেয়ার করা অস্বীকার করে একটি বিবৃতি দেয়। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি হলফনামাও জমা দেয় তারা। ওই মামলার অন্যতম আবেদনকারী এম সিদ্দিকের প্রতিনিধিত্বকারী এজাজ মকবুল বিশদ বিবৃতিতে বলেছেন, ওয়াকফ বোর্ডকে বাদ দিয়ে বাদ দিয়ে অন্য মুসলিম দলগুলি সুপ্রিম কোর্ট-নিযুক্ত মধ্যস্থতা প্যানেলের প্রস্তাবিত বন্দোবস্তের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করছে।
মুসলিম পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, ‘প্রধান হিন্দু দলগুলি যখন প্রকাশ্যেই বলেছে যে, তারা কোনও বন্দোবস্তের বিষয়ে রাজি নয় এবং অন্যান্য সমস্ত মুসলিম আবেদনকারীরাও এটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে, তারাও মানবে না’।
এদিকে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী শাহিদ রিজভি বলেন, ‘আমরা মধ্যস্থতাকারী প্যানেলকে আমাদের মতামত দিয়েছি, তবে আমরা মধ্যস্থতার বিস্তারিত পরিকল্পনা জানাতে পারি না, যেটি আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। এটা সবার জন্যই ইতিবাচক ‘হিন্দু ও মুসলিম, খুশি হবে’। এই মধ্যস্থতায় দুপক্ষই খুশি হবে কিনা, সে প্রশ্নের উত্তরে আইনজীবী শাহিদ রিজভি বলেন, ‘হিন্দু ও মুসলিম, দুপক্ষেরই জয়ের মতো পরিস্থিতি’।
হিন্দু ও মুসলমান উভয় পক্ষই এই জমির দাবি করেছে। তবে হিন্দুদের অনেকে বিশ্বাস করেন যে, এই স্থানটি ভগবান রামের জন্মস্থান ছিল এবং সেখানে একটি প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপর একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। ঘটনাস্থলে থাকা ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত বাবরি মসজিদটি ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় উন্মত্ত হিন্দু জঙ্গিরা। মসজিদ ধ্বংস হওয়ার ওই ঘটনায় সেই সময় ভারতে প্রবল দাঙ্গা ছড়ায় এবং এতে হাজার হাজার মুসলিমের প্রাণহানি ঘটে। সূত্র : এনডিটিভি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ