Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ক্রিকেটে সঙ্কট : দ্রুত নিরসনই কাম্য

| প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ক্রিকেটই হচ্ছে নতুন প্রজন্মের ভরসার জায়গা। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের যা অর্জন ও সুখ্যাতি তার প্রায় পুরোটাই ক্রিকেটকে ঘিরে। দেশের ক্রিকেটার ও ক্রিকেট বোর্ডের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও অনেক বেশি। জাতীয় দল ও প্রথম সারির ক্রিকেটে যে কোনো অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও অনাকাঙ্খিত বিশৃঙ্খলা জাতির জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা ও পারস্পরিক বোঝাপড়া ছাড়া জাতীয় দলের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম, শিরোপা অর্জন ও অক্ষুন্ন রাখা অসম্ভব। এ কারণেই দেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের চলমান আন্দোলন, অসন্তোষ ও দাবি-দাওয়া পুরণসহ সংকট নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষত যৌক্তিক দাবীগুলো পুরণের প্রাথমিক আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্টদের এক্ষুনি এগিয়ে আসতে হবে। অন্যদিকে দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট খেলা থেকে দূরে থাকার যে ঘোষণা ক্রিকেটাররা সোমবার সংবাদ সম্মেলনে দিয়েছেন তাও পুনর্বিবেচনার দাবী রাখে। তবে ক্রিকেটাররা যে ১১ দফা দাবি পুরণের জন্য আন্দোলন করছেন, তার বেশিরভাগই বাস্তবায়নে তাৎক্ষণিকভাবেই ঘোষণাযোগ্য। ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(কোয়াব)’র নতুন নির্বাচনের দাবি,ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে প্লেয়ার্স ড্রাফ্ট তুলে দেয়া, বিদেশি ক্রিকেটারদের সাথে স্থানীয়দের পারিশ্রমিকের ব্যবধান কমিয়ে আনা, ট্রেনার, আম্পায়ার, মাঠকর্মী ও ফিজিওদের বেতন বাড়ানো,ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচ বাড়ানোর মত দাবীগুলোর সাথে দ্বিমত পোষণের কোনো অবকাশ নেই।

ক্রিকেট অঙ্গণে বিরাজমান বৈষম্য, অসন্তোষ ও সমন্বয়হীনতা হঠাৎ করেই দেখা দেয়নি। দীর্ঘদিনে এই পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। তবে হঠাৎ করে ক্রিকেটারদের সংক্ষুব্ধ আন্দোলনের ঘোষণা বিষয়টিকে এখন জনসম্মুখে নিয়ে এসেছে। এ সব সমস্যা ও দাবি-দাওয়া ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অজানা থাকার কথা নয়। ক্রিকেটারদের ১১ দফা দাবি প্রকাশিত হওয়ার পর বিসিবি প্রেসিডেন্ট এসব বিষয়ে তাদের কাছে ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে আগে দাবি জানানো হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন। বিষয়গুলো নিজেদের মধ্যে ঘরোয়া আলোচনা ও মীমাংসার উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হলেই কেবল বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়া যেত। যাই হোক, এখন সবকিছু সামনে চলে এসেছে, ক্রিকেটাররা কোনো আকাশ কুসুম দাবি করেন নি। হয়তো এসব দাবির বাইরেও ক্রিকেটাঙ্গনে আরো অনেক কিছুই করণীয় আছে। ক্রিকেটারদের আন্দোলনে আবেগের আতিশয্য থাকতে পারে, তাদের দাবীগুলো যখন যৌক্তিক তখন আন্দোলন ও দাবি-দাওয়ার পেছনে ষড়যন্ত্র খুঁজে কোনো লাভ নেই। খেলোয়ারদের কাজ হচ্ছে নিরলস প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে কাঙ্খিত দক্ষতা অর্জন করা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের জন্য গৌরব বয়ে আনা। রাজনীতির মাঠকর্মীদের মত আন্দোলনে সময় ক্ষেপণের সুযোগ তাদের নেই। আগামী মাসে নির্ধারিত ভারত সফর এবং প্রিমিয়ার লীগের জন্য এক্ষুনি মাঠের অনুশীলনে ব্যস্ত থাকাই তাদের কাছে দেশবাসির প্রধান প্রত্যাশা। বিদ্যমান বাস্তবতায় ষড়যন্ত্র খোঁজা বা বেøইম গেমে লিপ্ত হওয়া ক্রিকেটার- কর্মকর্তাদের জন্য অনভিপ্রেত ও বেমানান।

ফুটবলসহ অন্য যে কোনো খেলার চেয়ে ক্রিকেটে দেশ এগিয়েছে। সেই সাথে বেড়েছে ক্রিকেটারদের সম্মান, মর্যাদা ও পারিশ্রমিক। বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ থেকে শুরু করে টেস্ট ক্রিকেটের ক্লাবে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট আন্তর্জাতিক অঙ্গণে সম্মানের আসনে উন্নীত হয়েছে। তবে দেশের ক্রিকেটের সামগ্রিক অর্জন ও এগিয়ে চলার পথে স্থিতিশীলতার অভাব প্রকটভাবেই ধরা পড়ে। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে টাইগারদের হোয়াইটওয়াশ হওয়া এবং বেশ কয়েকটি টেস্ট সিরিজে অপ্রত্যাশিত ও শোচনীয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম হয়েছে। সামগ্রিকভাবেই ক্রিকেটে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা এবং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ক্রিকেটাররা মাঠে খেলেন, কিন্তু সেটা মাঠে গড়ানোর আগে তার প্রত্যাশিত ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করে সঠিক প্রক্রিয়ায় টীম নির্বাচন, উপযুক্ত প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণসহ আরো অনেক কিছুর উপর। বোঝাই যাচ্ছে বিসিবি সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্রিকেটারদের প্রত্যাশা ও করণীয় সম্পর্কে অনেকটাই উদাসীন। এহেন বাস্তবতায় খেলোয়াড়দের অসন্তোষ ও বিক্ষোভ থাকতেই পারে। তবে খেলোয়ারদের বিদ্রোহ বা নিরাপোষ আন্দোলনে যাওয়া উচিত নয়। অবস্থা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে ঊর্ধ্বতন তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরী। সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের মধ্যেও ক্রিকেটের সাথে অতীতে ও বর্তমানে সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ রয়েছেন, তারা এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। বিশেষত অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক সময় বিসিবি এবং আইসিসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি সালমান এফ রহমান এমপি বিপিএল ক্রিকেট দলের সাথে যুক্ত আছেন। তাদের যথাযথ ভূমিকা বিসিবি, কোয়াব এবং ক্রিকেটারদের মধ্যকার সমন্বয়হীনতা ও সংকট দূর করতে সহায়ক হতে পারে। উদ্ভুত সংকটের দ্রুত নিরসন ঘটুক, এটাই সকলের প্রত্যাশা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন