Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে বেশি লাভবান হবেন

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:১৮ এএম

বিদেশি ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেকোনও দেশের চাইতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে বেশি লাভবান হবেন। কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমরা বেশি সুবিধা দিচ্ছি, যা অন্য কোনও দেশ দিতে পারবে না। শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ১২টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমরা দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জায়গা করে দিতে চাই। বিদেশে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টিতে সরকার সবসময় সক্রিয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সবধরনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন এবং সরকারের পক্ষ থেকেও সম্ভব সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস।

গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘৩য় বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো-২০১৯’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প এবং বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন এবং লেদার ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এক্সপোার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (এলএফএমইএবি) সভাপতি সাইফুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। আরো উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তজাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। অনুষ্ঠানে দেশের চামড়া শিল্পের অগ্রগতি নিয়ে একটি ভিজ্যুয়াল পেজেন্টেশনও পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী আলোচনা পর্ব শেষে বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন এবং স্টল ঘুরে দেখেন। ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চলবে ।

শেখ হাসিনা বলেন, চামড়া খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। রফতানি আয়ের দিক দিয়ে চামড়াজাত পণ্যের অবস্থান দ্বিতীয়। তৈরি পোশাকের পরেই এর অবস্থান। এজন্য এ শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত ১০ বছরে চামড়া ও পাদুকা শিল্পের উন্নয়নে কাজ করা হয়েছে। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে সাভারে নেওয়া হয়েছে। যাতে করে আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে শ্রমিকরা কাজ করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরও অন্তত ৫ বছর আর্থিক প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া বৈষম্যমূলক প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে। ব্যবসায়ীদের সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময়। সবাই আমার কাছে জানতে চায়, এত অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে আমরা এই উন্নয়নটা করলাম?

সরকার প্রধান বলেন, গত অর্থবছরে চামড়া খাত থেকে প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। আমাদের ক্রমবর্ধমান কাচা চামড়া সরবরাহের পুরোাই ফিনিশড প্রোডাক্ট তৈরি করে রফতানি করতে পারলে আমরা অনায়াসে ২০২২ সালের মধ্যে এ খাত থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় করতে সক্ষম হব। ’৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়ন এবং দারিদ্র বিমোচনের মাধ্যমে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই এবং সেজন্য মানবসম্পদ উন্নয়নকে আমরা গুরুত্ব দেই।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তি, স্বনির্ভরতা ও সমৃদ্ধি অর্জনের যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন আমরা তা বাস্তবায়নের জন্যই কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হবে ২০২১ সালে। আর ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করবো। আমরা এরই মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুৃধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি, ৩য় বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো-২০১৯-আয়োজন এ খাতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের প্রায় সাড়ে ১০ বছরের শাসনামলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের খন্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে এখন উন্নয়নের বিস্ময়। কারণ এই প্রশ্নটা অনেকেই আমাকে সবসময় করেন যে, এই অল্প সময়ের মধ্যে আমরা কিভাবে এই উন্নয়নটা করলাম।

রপ্তানী বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরে এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণে তার সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা একাধিক টার্মিনাল ও নতুন নৌ-বন্দর স্থাপনের কাজ শুরু করেছি। আঞ্চলিক যোগাযোগ অবকাঠামোর সঙ্গে বাংলাদেশ নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা আমরা সৃষ্টি করেছি। সরকারের গত দুই মেয়াদে প্রণোদনা এবং নীতি সহায়তায় পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য কারখানার প্রসার ঘটেছে এবং বিনিয়োগে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে।এখন এই খাতের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশ আসছে পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য থেকে।

তিনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং চামড়া শিল্পের আধুনিকায়নে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে আধুনিক শিল্প নগরীতে এই শিল্প স্থানান্তরেও সরকাররের উদ্যোগ তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জনে চামড়া ও পাদুকা শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকলে এগিয়ে আসবেন।

জ্বালানি খাতে আগ্রহী কাতার
বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সফররত কাতারি জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী সাদ শেরিদা আল-কাবি। তিনি বলেন, আমরা দু’দেশের পারস্পারিক স্বার্থে বাংলাদেশের জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতে কাজ করতে আগ্রহী। গতকাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎকালে তিনি এ আগ্রহের কথা জানান।

বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের একথা জানান। গত এক দশকে বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়নের বিষয়ে উল্লেখ করে সাদ শেরিদা আল-কাবি বলেন, আপনাদের যত উন্নতি তত বেশি শক্তি দরকার। কাতারের প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ ফুটবল- এর আগে তারা আরো বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে।

অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেছে ডব্লিউআইইএফ এবং এসইএসিও
ওয়াল্ড ইসলামিক ইকনোমিক ফোরাম (ডব্লিউআইইএফ) এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় কোঅপারেশন (এসইএসিও) ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দ বিগত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতির ভূয়সি প্রশংসা করেছে। ডব্লিউআইইএফ’র সেক্রেটারি জেনারেল আহমদ ফুজি আবদুল রাজ্জাকের নেতৃত্বে ডব্লিউআইইএফ এবং এসইএসিও’র সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আজ বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎকালে তারা এ প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বিগত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

ডব্লিউআইইএফ’র সেক্রেটারি জেনারেল ২০২০ সালে কাতারে অনুষ্ঠিতব্য ডব্লিউআইইএফ এবং এসইএসিও’র পরবর্তী সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি ২০২১ সালে ডব্লিউআইইএফ এবং এসইএসিও’র সম্মেলনের জন্য স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম প্রস্তাব করেন।

প্রধানমন্ত্রী ডব্লিউআইইএফ এবং এসইএসিও যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠকের আলোচ্যসূচির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, দেশে আরো শিল্পায়ন ও অধিক কর্মসংস্থানের লক্ষে একশতটি ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, এই জোনে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য প্লট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।



 

Show all comments
  • MD Hasanur Rahman ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৪০ এএম says : 0
    এখানে সবকিছু হাতের নাগালে পাওয়া যায়
    Total Reply(0) Reply
  • Md Sultan Mahamud ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৪২ এএম says : 0
    Thousands of Congratulations to "Mother of Humanity ".
    Total Reply(0) Reply
  • Sheikh Burhan Khan Poran ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৪২ এএম says : 0
    বাংলাদেশের যারা পড়াশোনা করে বেকার অবস্থায় আছে। তাদের জন্য চাকরি একটা ব্যবস্থা করে দেন???
    Total Reply(0) Reply
  • Mahmud Hussain ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৪৪ এএম says : 0
    Good job guys! It's a long journey to reach the point that we are in now.
    Total Reply(0) Reply
  • M Jasem ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৪৪ এএম says : 0
    বক্তব্য খালি আমাদের বক্তারাই দিয়ে যান কিন্তু যারা বিনিয়োগ করবেন তাদের কোনো বক্তব্য আসলে দেখি না. একে বলা হয় মূর্খ জাতিকে আরো মূর্খ বানাই.
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Lutfar Rahman ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৪৪ এএম says : 0
    Dear all concerned, We are hopeful for invest from the investor. But government should ensure safety of everything and make our nation/ all concerned government officer's, MP, minister corruption free. If it's possible to do like that, investor will come in our country to invest because of cheap wages.
    Total Reply(0) Reply
  • Jahidul Islam ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৪৫ এএম says : 0
    বিদেশিদের বড় বড় বিনিয়োগে আজ চীন ভিয়েতনাম মালয়েশিয়া সিংগাপুর হংকং তাদের আর্থিক সক্ষমতা এইস্থানে নিয়ে এসেছে। আমাদের অগ্রগতি বড় বড় বিনিয়োগের উপর নির্ভরশীল। এটাই খুব দরকার। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার কোন দরকার নাই। এই খেলা খেললে কেউ বিনিয়োগে আসবেনা। যেমন পাকিস্তান।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ