Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

একতরফা সম্পর্ক কাম্য নয়

| প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি বলেছেন, ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া জরুরি। তাহলে আমাদের দেশের রাজস্ব আয় বাড়বে এবং চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নতি হবে। তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতে তার সফরের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, কিছুদিন আগে আমি উত্তর-পূর্ব ভারতে ঘুরে এসেছি। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করার জন্য তারা খুব করে চাইছে। তারা বলেছে কলকাতা বন্দর ব্যবহার করতে হলে তাদেরকে ১২০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর তাদের জন্য ৬০০ কিলোমিটার। তাই ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া জরুরি। ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রও বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিছক বন্ধুত্বের নয় বরং অনেক আত্মত্যাগ, জীবনদান এবং রক্তের বিনিময়ে এটি অর্জিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর লক্ষীবাজারে মহানগর মহিলা কলেজে নারী শিক্ষার প্রসার এবং নারীর ক্ষমতায়ন শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রিভা গাঙ্গুলী। গত শুক্রবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের সাথে চট্টগ্রামে এক বৈঠকে বলেন, ভারত বাংলাদেশের অকৃত্রিম ও পরীক্ষিত বন্ধু এবং ভারত বাংলাদেশের উন্নয়নের সহযোগী রাষ্ট্র। বলার অপেক্ষা রাখে না, মন্ত্রী ও মেয়রদ্বয়ের এ কথায় ভারতের প্রতি আমাদের বন্ধুত্বের দরদ শতভাগ প্রকাশিত হলেও তা একতরফা। আমরা ভারতের সাথে সর্বোচ্চ নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নিদর্শন রাখলেও তার কাছ থেকে ছিঁটেফোটাও পাই না। 

ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বের বিষয়টি এমন হয়ে পড়েছে যে, ভারত যখন যা চেয়েছে, বিনাবাক্যে বাংলাদেশ তা দিয়ে দিয়েছে। কোনো ধরনের দরকষাকষি বা বিনিময় চায়নি ও পায়নি। ভারত তা বাস্তবে আদায় করে নিলেও, বাংলাদেশের চাওয়ার বিষয়টি কেবল আশ্বাসের মধ্যেই রেখেছে। আমাদের সরকারও এই আশ্বাসে আস্থা রেখে চলেছে। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, দ্বিপাক্ষিক কোনো বিষয়ে ভারতের একটু সমস্যা হলেই আমাদের অনেকে যেন দুঃখে কাতর হয়ে পড়ে এবং তৎক্ষণাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ পর্যন্ত ভারত তার প্রয়োজনে বাংলাদেশের কাছ থেকে চেয়ে পায়নি, এমন নজির নেই। ভারতের কাছ থেকে আমাদের জরুরি চাওয়ার মধ্যে অন্যতম তিস্তা চুক্তিটি ভারত বছরের পর বছর ধরে নানা অজুহাত ও আশ্বাসের মধ্যে ঝুলিয়ে রেখেছে। এই ঝুলিয়ে রাখার মধ্যেই ভারত তার ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে তার স্বার্থের অনুকূল সবকিছুই আদায় করে নিয়েছে। আমাদের সরকারও ভারত আর কি চায় বা চাইতে পারে এই অপেক্ষায় যেন পথ চেয়ে থাকে। মন্ত্রী-মেয়রদের কথা-বার্তার মধ্যেও আমাদের সমস্যার চেয়ে ভারতের সমস্যার প্রতি বেশি সহনুভূতি ঝরে পড়ে। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার নিয়ে এ বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হবে মর্মে এ চুক্তি হয়েছে। তবে তার আগে ভারতের এ বন্দর ব্যবহার নিয়ে আমাদের ব্যবসায়ী মহল বেশ আপত্তি তুলেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, চট্টগ্রাম বন্দরের যে সক্ষমতা তাতে আমাদের আমদানি-রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডেলিং করতেই বেগ পেতে হয়। এর জায়গা ও সুযোগ-সুবিধায় অপ্রতুলতা রয়েছে। তার ওপর যদি ভারতীয় পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়, তাতে সুযোগ-সুবিধা আরও সংকুচিত হয়ে পড়বে। এর বিরূপ প্রভাব দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে পড়বে। এমন হতো আমাদের বন্দরের সক্ষমতা ব্যাপক, তাহলে একটা কথা ছিল। দুঃখের বিষয়, এসব দিক বিবেচনা না করে ভারতের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আমরা রাজস্ব পাব। প্রশ্ন হচ্ছে, এতে আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে সমস্যা ও ক্ষতি হবে, তা কি ভারতীয় মালামাল আনা-নেয়া থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের চেয়ে কম? বন্দরের সক্ষমতার দিক বিবেচনা না করেই ভারতকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের সুযোগ দেয়া কি যৌক্তিক? বলা বাহুল্য, প্রতিবেশীর সাথে আমরা কেউই খারাপ সম্পর্ক চাই না। পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ ও সমতাভিত্তিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক চাই। দেখা যাচ্ছে, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কটি একতরফা হয়ে গেছে। আমরা ভারতের সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত আন্তরিক, অথচ ভারত আমাদের সমস্যার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র অন্তরিকতা দেখাচ্ছে না।
ভারতের সকল সমস্যা এবং চাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্রুততার সাথে পাশে দাঁড়ায়। ভারতের প্রতি মানবিকতা দেখানোর ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ অবস্থানে আমরা রয়েছি। মানবিক কারণে আমরা যেমন বাংলাদেশের উপর দিয়ে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাজ্যে খাদ্য সরবরাহ করার পথ করে দিয়েছি, তেমনি ফেনী নদীর পানি উত্তোলন করতেও দিয়েছি। এর বিপরীতে আমাদের প্রতি ভারত মানবিকতার কোনো উদাহরণ আজ পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারেনি। সে কেবল তার দিকটা দেখেছে, আমাদের দুঃখ-কষ্টের দিকটা বিন্দুমাত্র আমলে নেয়নি, নিচ্ছেও না। এক তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় যে আমাদের উত্তরাঞ্চলের একটি অংশের জীববৈচিত্র এবং মানুষের জীবনধারায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, তাতে ভারতের একটুও বিচলন নেই। দেশের মানুষ দেখছে, ভারত কেবল নিয়েই যাচ্ছে, বিনিময়ে কিছুই দিচ্ছে না। বিশ্বে আর কোথাও এমন একতরফা সম্পর্ক রয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই। ভারত পারস্পরিক সহযোগিতার কথা বলে তার সবকিছু একে একে আদায় করে নিচ্ছে। এসব সহযোগিতা যে একান্তই তার স্বার্থে, তা এদেশের একজন সাধারণ মানুষও জানে। আমরা মনে করি, ভারতের কাছ থেকে আমাদের ন্যায্য পাওনা আদায়ে সরকারকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। ভারত আমাদের কাছ থেকে কি নিয়েছে এবং আমরা কি পেয়েছি, তার হিসাব-নিকাশ করতে হবে। বন্ধুত্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সান্তনামূলক কথা বলে দেশের স্বার্থ ভুলে গেলে চলবে না।



 

Show all comments
  • jack ali ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ৪:৩৮ পিএম says : 0
    We fought pakistan---not to be slave of India.....I ask the government ----this is our country ----not your personal property.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন