Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রঙতুলির চিত্রকর্মে ভিসির দুর্নীতির প্রতিবাদ

জাবিতে আন্দোলন অব্যাহত

জাবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:১৬ এএম, ৯ নভেম্বর, ২০১৯

 

অচল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, ক্যান্টিন, ডাইনিংসহ ক্যাম্পাসের সব খাবার দোকান বন্ধ থাকার পরও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তারা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গতকাল শুক্রবারও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রং তুলির চিত্রকর্মের মাধ্যমে ভিন্নধর্মী কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। সেখানে রং তুলির চিত্রকর্মে ভিসির বিভিন্ন দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়। পরে বিকাল চারটার দিকে এই চিত্রকর্ম নিয়ে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে আলোচনায় বসেন আন্দোলনকারীরা। আলোচনা শেষে রাত পৌঁনে ৮টার দিকে কলা ও মানবিকী অনুষদের সামনে থেকে আরেকটি মিছিল নিয়ে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় তাদের বাইরে থাকতে সমস্যা হচ্ছে। তাই তারা হলে প্রবেশের চেষ্টা করবেন।
নতুন কর্মসূচির বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম পাপ্পু জানান, আমরা আজ বিকেল ৪টায় পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থিত ‘উপাচার্য অপসারণ মঞ্চে’ জড়ো হব। তারপর সেখান থেকে কাপড়ে আঁকা ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে মিছিল বের করবো। মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে যাব, সেখানে দাড়িয়ে আমরা ব্যঙ্গচিত্রটি প্রদর্শন করবো। এই আন্দোলনকারী আরো বলেন, আমরা প্রশাসনকে দ্রুতই হল খুলে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। যদি প্রশাসন আমাদের আহ্বান না শুনেন তাহলে আমরা আজ জোড় করে হলেও হলে ঢোকার চেষ্টা করবো।

এদিকে চিত্রকর্ম সম্পর্কে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয় বলেন, আমরা এই চিত্রকর্মের মাধ্যমে ভিসির অপসারণের দাবি, ভিসির দুর্নীতির চিত্র, হল বন্ধ ও ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদসহ ভিসির নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা আগেও ৩০ গজের একটি চিত্রকর্মে ভিসির অনিয়ম, দুর্নীতি তুলে ধরেছি। কিন্তু সেটা ভিসিপন্থী শিক্ষক ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছিঁড়ে ফেলার প্রতিবাদে এবার আমরা ৬০ গজ লম্বা চিত্রকর্ম অঙ্কন করে প্রতিবাদ জানিয়েছি।

এদিকে এই চিত্র অংঙ্কনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, চিত্রাঙ্কন হলো তাদের প্রতিবাদের অন্যতম ভাষা। যা মুখে এতো দিন বলে আসছিলেন তা রঙ-তুলির মাধ্যমে প্রকাশ ঘটবে।
চিত্রশিল্পী ও জাবি চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী শান্ত জানান, রঙের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠবে আমাদের অব্যক্ত কথাগুলো। আমাদের চলমান আন্দোলনের ঘটনাগুলো চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ পাবে। এটা অনাচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি শৈল্পিক প্রতিবাদ।
আরেক চিত্রশিল্পী ও প্রতœতত্ত¡ বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিদা শহিদ ভিসির দুর্নীতিকে চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করছিলেন। তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক ভিসির চরিত্রকে চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছি। তার দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, নারী নিপীড়কদের প্রশ্রয়, শিক্ষাকে ব্যবসায় রূপান্তর করা ইত্যাদি অঙ্কিত হচ্ছে।
আন্দোলনের সংগঠক অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে উপাচার্যের দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত গতকাল রাতে দেয়া হয়েছে। আমরা গতকাল সকাল থেকেই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। পাশাপাশি চিত্রাঙ্কন চলছে। দুর্নীতিবাজ ভিসি অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রাকিবুল রনি বলেন, হামলা-মামলা ও হুমকি অগ্রাহ্য করে নৈতিকস্খলন ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ভিসিকে অপসারণ এবং দুর্নীতিতে জড়িত সকলের রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আন্দোলনকারীরা ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অনিয়ম, দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে প্রায় ৭০ পাতার তথ্য-উপাত্ত তৈরি করেছে। এই তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষামন্ত্রীর বাসভবনের দিকে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক খবির উদ্দিন। তিনি বলেন, ভিসির নানা অনিয়ম নিয়ে ৬ পাতার অভিযোগ পত্র এবং ৭০ পাতার তথ্য-উপাত্ত আমরা তৈরি করেছি। এসব নিয়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে শিক্ষক অধ্যাপক তারেক রেজা ও খন্দকার হাসান মাহমুদ শিক্ষামন্ত্রীর একান্ত সচিব ড. আলিম খানের কাছে জমা দেয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।

খাবার সঙ্কটে শিক্ষার্থীরা:
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন, ডাইনিংসহ ক্যাম্পাসের আশপাশের সব খাবার দোকান বন্ধ থাকায় খাবার সঙ্কটে মানবেতর জীবনযাপন করছে আন্দোলনকারীসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে থাকা শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরাট একটি অংশ টিউশনি করে নিজের খরচ বহন ও পরিবারকে সহয়তা করে থাকেন। এসব শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়েই ক্যাম্পাসের আশপাশে থাকতে হচ্ছে। কারণ বাসায় চলে গেলে টিউশনি চলে যাবার শঙ্কা আছে। এই জন্যই তারা কষ্ট করে থেকে টিউশনি চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদকর্মীরাও খাবার সঙ্কট ও আবাসনের সঙ্কটের মধ্যে দিনযাপন করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ