Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মানহীন ইনসুলিন ও ওষুধ রুখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম


ডায়াবেটিস এখন বিশ্বব্যাপী একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বে চল্লিশ কোটির বেশি মানুষ এখন ডায়াবেটিসে ভুগছে। বাংলাদেশে এ সংখ্যা এক কোটির কাছাকাছি। গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার আগ পর্যন্ত অনেক রোগী জানেন না যে, তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। শুরুতে ধরা পড়লে এবং খাদ্যাভ্যাস, জীবন যাপনের পদ্ধতির পরিবর্তন ও নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোললে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের রোগ নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিন হচ্ছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা। বিশেষত বয়স্ক ও নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিনের উপর নির্ভর করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ইনসুলিন রোগীর জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দেশের লাখ লাখ ডায়াবেটিস রোগী বিদেশ থেকে আমদানি করা ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল। এটি অতি প্রয়োজনীয় এবং দামী ওষুধ হওয়ায় বিভিন্ন কোম্পানির ইনসুলিন বাজারে পাওয়া যায়। বর্তমানে দেশেও ইনসুলিন উৎপাদনের উদ্যোগ চলছে। তবে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, বাজারে নকল, মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ইনসুলিনও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিক্রয় ও ব্যবহার চলছে। এ কারণে অনেক ডায়াবেটিস রোগী ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে সব ধরনের ব্যবস্থাপত্র অনুসরণ করার পরও ডায়াবেটিসসহ অন্যসব স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে, নকল, ভেজাল ও মানহীন ইনসুলিনের কারণে অনেক রোগী মারা যাচ্ছে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বিকল্প ব্যবস্থাগুলো ব্যর্থ হলে বা প্রতিপালন সম্ভব না হলে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে ইনসুলিন গ্রহণ। ডায়াবেটিস রোগীরা পারতপক্ষে বাজারের সেরা ও নির্ভরযোগ্য ইনসুলিনটিই ব্যবহারের চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে বাজারে বেশি প্রচলিত দামী ইনসুলিনের নকল ও ভেজাল হচ্ছে বেশি। ইনসুলিনের চাহিদা ও মূল্য বেশি হওয়ায় অনেক বিমান যাত্রী বিদেশ থেকে লাগেজে করে ইনসুলিন নিয়ে আসেন। ইনসুলিন সংরক্ষণে বিশেষ তাপমাত্রার (কোল্ড চেইন) প্রয়োজন হওয়ায় লাগেজে নিয়ে আসা ইনসুলিনের মান অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হচ্ছে, বাজারের নামীদামী ব্রান্ডের ইনসুলিনের নকল ও ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বিক্রির তৎপরতা। বিদেশি কোম্পানির নকল মডার্ন ইনসুলিন বাজারে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে বলে গতকাল ইনকিলাবসহ বেশ কয়েকটি সহযোগী দৈনিকে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো নামীদামী দেশীয় কোম্পানির ইনসুলিনও এখন নকল হচ্ছে বলে জানা যায়। অপেক্ষাকৃত বেশি লাভের জন্য এক শ্রেণির ওষুধ বিক্রেতা এসব নকল ও মানহীন ইনসুলিন বিক্রি করে ডায়াবেটিস রোগীদের সাথে প্রতারণা করছে। এতে ডায়াবেটিস রোগীরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। ইনসুলিন ব্যবহারের পরও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় ডায়াবেটিস থেকে কিডনি, উচ্চ রক্তচাপ, চোখের সমস্যা, হৃদরোগসহ জীবন সংহারি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পতিত হন।

বিশ্ব ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসজনিত স্বাস্থ্য সমস্যার যে চিত্র প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এ স্বাস্থ্য সমস্যা ক্রমে ভয়াবহ আকার ধারণের চিত্র পাওয়া গেছে। তবে ডায়াবেটিসের ওষুধ বা নকল ইনসুলিনের মতো স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিশ্বের আর কোথাও আছে কি না তা আমাদের জানা নেই। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, শিশুখাদ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের নকল, ভেজাল ও মানহীনতা নিয়ে নাগরিক সমাজের উদ্বেগ দীর্ঘদিনের। এ থেকে মুক্তির কার্যকর পদক্ষেপ ও মাননিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় নজরদারি এখনো দেখা যাচ্ছে না। মাঝে মধ্যে ভেজাল বিরোধী অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এ ধরনের সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। ইনসুলিন এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধের নকল ও মানহীনতা প্রতিরোধে সর্বাত্মক পদেক্ষপ গ্রহণ জরুরি। এ নিয়ে ওষুধ প্রশাসন, বিএসটিআই, ডায়াবেটিক সমিতি এবং ভেজাল বিরোধী আন্দোলন ও মান নিয়ন্ত্রণের সাথে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। কোল্ড চেইনের বাইরে লাগেজে করে আনা বিদেশি ইনসুলিনের মান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় এ ধরনের ইনসুলিন দোকানে বিক্রির ব্যবস্থা কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। ডায়াবেটিস সচেতনতা গড়ে ওঠায় বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সুফল দেখা গেলেও বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে নকল ও ভেজাল ওষুধ ও ইনসুলিনের ভূমিকা রয়েছে। এ কারণে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ওষুধ বিহীন বিকল্প ব্যবস্থার উপর বেশি নজর দিতে হবে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে যে সব দেশীয় কোম্পানি ইনসুলিন উৎপাদন করছে তার মান নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নকল ও ভেজাল ইনসুলিন উৎপাদন ও বিক্রির সাথে জড়িতরা প্রকারান্তরে ডায়াবেটিস রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মান


আরও
আরও পড়ুন