Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দেশে দেশে মাহে রমজান

প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জিনজিয়াংয়ের মুসলমানরা রোজা পালন করছেন
ইনকিলাব ডেস্ক : চীনের উত্তর-পশ্চিমে জিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়াই মুসলমানরা রোজা পালন করছেন। চীনা কর্তৃপক্ষ অবশ্য পার্টি সদস্য, সরকারী কর্মচারী ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্রছাত্রীদের জন্য রোজা রাখা নিষিদ্ধ করেছে।
পবিত্র রমজানের তৃতীয় সপ্তাহ শুরু হয়েছে। চীনের বৃহত্তম মসজিদ কাশগড় ঈদগাহ মসজিদে প্রতিদিন হাজার হাজার মুসলমান পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছেন। জিনজিয়াং ডেইলির সাথে সংশ্লিষ্ট উইচ্যাট অ্যাকাউন্টের খবরে বলা হয়, মসজিদের উপপ্রধান আবদুল কাদির সাবত বলেন যে ধর্মীয় কর্মকা- যাতে সুন্দরভাবে পরিচালিত হয় তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতির পাশাপাশি খাদ্য, গ্যাস ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা আগাগোড়া পরিদর্শন করেছে।  
মসজিদের মুসল্লিরা সূর্যোদয়ের আগে তাদের ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য সহজে মসজিদে আসতে পারেন সে জন্য সকাল ৬টা থেকেই ঈদগাহ মসজিদের আশেপাশের মোড়গুলোতে ট্রাফিক পুলিশরা তাদের কাজ শুরু করেন।
জিনজিয়াংয়ের রাজধানী উরুমকিতে মসজিদগুলোতে রমযান মাসে মুসল্লিদের ভিড় বেশি হয়।
বাই নামের উরুমকির ফেংজিয়াং মসজিদের একজন কর্মচারী গ্লোবাল টাইমসকে বলেন যে মসজিদে প্রতিদিন নামাজ আদায়কারী মুসল্লিদের সংখ্যা কম-বেশী হয়। তবে সাধারণত রমজান মাসে মুসল্লিদের সংখ্যা বেশী হয়।
বাই বলেন, ধর্মীয় কর্মকা-ে কেউ কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করে না বা বাধা দেয় না।
দক্ষিণ জিনজিয়াংয়ের হোতানে জিয়ামাই মসজিদে রমজান মাসে নামায আদায়ের জন্য রোজ প্রায় দশ হাজার মুসল্লির আগমন ঘটে। এ সময় মসজিদের খাদেমদের সংখ্যা থাকে অপ্রতুল। এ অবস্থায় সাব-ডিস্ট্রিক্ট সরকারী অফিসের কর্মচারীরা শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করে বলে সহকারী ইমাম আবদুল রহমান ইবরাহিম জানান।
খোতান সরকার বয়স্ক ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ভ্রমণের ব্যবস্থাও করে।
কোনো কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ রমজানের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে।
নিউজ ওয়েবসাইট জেডজেডনিউজ.গভ.সিএন জানায়, তাচেং-এর এমিন কাউন্টিতে কম্যুনিটি কর্মকর্তারা রমজানের সময় সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, বিষপ্রয়োগ বা অন্য যে কোনো প্রকার হামলাসহ ধর্মীয় কর্মকান্ডের উপর শত্রুতামূলক হামলা রোধের লক্ষ্যে ১ জুন থেকে স্থানীয় মসজিদগুলোতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা টহলের ব্যবস্থা করেছে।
২০১৪ সালের জুলাই মাসে ঈদগাহ মসজিদের তৎকালীন ইমাম জুমি তাহিরকে ফজরের নামাজের পর সন্ত্রাসীরা ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।
জিনজিয়াংয়ের শাচে কাউন্টিতে রমজান মাসের শেষ দিনে সরকারী অফিস ও থানাগুলোতে উপর্যুপরি হামলায় সন্ত্রাসীরা ৩৭ ব্যক্তিকে হত্যার দু’দিন পর তাকে হত্যার ঘটনা ঘটে।
এ বছর জিনিজিয়াং সরকার পার্টি সদস্য, সরকারী কর্মচারী ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের রোজা না রাখার জন্য পুনরায় আহবান জানায়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও আইনজীবরিা বলেন, তারা এ আইনকে চীনের ধর্মরিপেক্ষ চেতনার প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন যার অর্থ ধর্ম ও রাজনীতি অবশ্যই পৃথক থাকবে। জিনজিয়াংয়ের টাক্সোর্গান তাজিক স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টির টাক্সোর্গান শহরের এক উপপ্রধান দাইয়িমিক দিওয়ানা গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, রমজানের সময় শহরের সরকারী অফিসগুলোতে দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম চলে। খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকলে প্রশাসনিক কর্তব্য পালন ব্যাহত হতে পারে আশংকায় সরকারী কর্মচারীদের রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়।
চীন বহু দশক ধরেই এ রাজনৈতিক শৃঙ্খলা বহাল রেখেছে যে চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্যদের নাস্তিক হতে হবে ও তারা কোনো ধর্ম পালন করতে পারবে না।
দক্ষিণ জিনজিয়াংয়ের আকসুর আওয়াত কাউন্টির এক শিক্ষা কর্মকর্তা লিউ গাং সোমবার গ্লোবাল টাইমসকে বলেন যে স্বাস্থ্য গত উদ্বেগ থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্র-ছাত্রীদের রোজা রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
লিউ বলেন, রমজান জিনজিয়াং ব্যাপী মধ্য ও উচ্চশ্রেণির স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বিভাষিক বক্তৃতা প্রতিযোগিতাসহ শিক্ষা কর্মকান্ড ব্যাহত করে না।
জিনজিয়াংয়ের আইনে বলা হয়েছে যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ধর্মীয় কর্মকান্ডে অংশ নিতে প্ররোচিত বা বাধ্য করতে পারবে না। চীনের রাষ্ট্রীয় আইনেও বলা হয়েছে যে শিক্ষা ও ধর্ম আলাদা হতে হবে এবং শিক্ষায় কোনো ধর্মীয় প্রভাব থাকতে পারবে না।
২ জুন চীন জিনজিয়াংয়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ে এক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে যাতে বলা হয়েছে, চীন তার নাগরিকদের ধর্মীয় প্রয়োজনের প্রতি পূর্ণ সম্মান জানায় এবং জিনজিয়াংয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা আজ কোনোভাবেই ইতিহাসের কোনো অধ্যায়ের সাথে মেলে না।
এতে আরো বলা হয় যে চীন সরকার ধর্মীয় বিষয়কে রাজনীতিকীকরণের যে কোনো চেষ্টার কঠোর বিরোধী। এ প্রসঙ্গে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং গত বছর তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতির উল্লেখ করা হয় যাতে বলা হয়েছিল যে উইঘুরদের রোজা পালন নিষিদ্ধ করার খবরে তুর্কিরা দুঃখিত।
উল্লেখ্য, জিনজিয়াং হচ্ছে চীনের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ। চীনে ২ কোটির মত মুসলমান রয়েছে। জিনজিয়াংয়ে মুসলমানদের সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ। এ প্রদেশে বর্তমানে ২৪ হাজার ৪শ’ মসজিদসহ ২৪ হাজার ৮শ’ ধর্মীয় স্থান রয়েছে। সূত্র গ্লোবাল টাইমস।  



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দেশে দেশে মাহে রমজান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ