Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাংলাদেশকে অর্থ পাচারের হাত থেকে মুক্ত করা হবে: অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৯, ৭:০২ পিএম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশকে অর্থ পাচারের হাত থেকে মুক্ত করা হবে। অর্থ পাচার পুরোপুরি বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন আজ শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এখন এটি সারা বিশ্বের সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ, জাতি ও সমাজ একযোগে কাজ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।

রোববার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে প্রণীত জাতীয় কৌশলপত্র’ শীর্ষক সেমিনারে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও হেড অফ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইউ) এর প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। সেমিনারে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফজলে কবির।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসে অর্থায়ন করে একটি দেশকে, দেশের অর্থনীতিকে ধবংস করে দেওয়া হয়। একটি দেশকে দেশের মানুষকে মেরে ফেলার জন্য মানিলন্ডারিংই যথেষ্ট। তাই এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশ থেকে শতভাগ দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং ও জঙ্গিবাদ দূর করে জাতিকে মুক্তি দিবেন। আমরা সে লক্ষে কাজ করছি। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপকে অনুরোধ করবো আসুন মানিলন্ডারিং, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে আমরা একসাথে কাজ করি। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যেকোনো মূল্যে আমরা আমাদের দেশ থেকে মানিলন্ডারিং দূর করবো। একইসঙ্গে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে যে সব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অর্থায়ন হয় সেগুলো মোকাবিলা করবো।

সেমিনারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, মানিলন্ডারিং এবং জঙ্গী অর্থায়ন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। পৃথিবীর প্রতিটি দেশই এই সমস্যা কম বেশি মোকাবিলা করছে। ফলে এটি মোকাবিলা করতে হলে বিশ্বের প্রতিটি দেশকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানিলন্ডারিং, জঙ্গি ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করবো বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো আমাদের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলোকে ভালভাবে বুঝতে পারছেন। আমরা পশ্চিমা বিশ্বের একটি রাষ্ট্রকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি, সে দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা ধর্মীয় মূল্যবোধের অপব্যবহার করে টাকা সংগ্রহ করে বাংলাদেশের জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ উসকে দিচ্ছে। আমরা শত চেষ্টার পরেও সে দেশকে তা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু সম্প্রতি সে দেশটি নিজেদের কিছু সমস্যার মধ্যে পড়ে বিষয়গুলো অনেক দেরিতে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এদের উপলব্ধি যদি অনেক আগে আসতো তাহলে আমরা অনেক ক্ষতি সামাল দিতে পারতাম। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে বিশেষত সিঙ্গাপুরের সরকারের সাথে যোগাযোগ করে এই অর্থায়ন করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। শুধু সিঙ্গাপুর নয় অর্থ পাচার রোধে বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশকে এবং একে অপরের সহযোগিতা করা দরকার।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ওভার ইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমেই মূলত টাকা পাচার হয়। অর্থপাচারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সবাই একে অপরের সাথে তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতা করে। তাই অপরাধীদের চিহ্নিত করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসের অর্থায়ন বন্ধ করতে হলে দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সরকারি সকল এজেন্সিকে একযোগে কাজ করতে হবে। ২০১৮ সালে সারাবিশ্বে অর্থপাচারের অভিযোগে ২০৪০টি মামলা হয়েছে। এই সব মামলায় মাত্র ৫০০ মিলিয়ন ডলার আদায় হয়েছে। ফলে পাচারকৃত অর্থ আদায় করা বেশ জটিল প্রক্রিয়া। তাই সবাইকে এ বিষয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, বিদেশে অর্থপাচার ঠেকাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে বা দুদকের পক্ষে এককভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রীয় সকল সংস্থার কাজের মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে ট্রেড বেইস মানিলন্ডারিং হচ্ছে। এ বিষয়ের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্য ব্যাংকগুলোকে আরো বেশি কঠোর হতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, মানিলন্ডারিং হলো প্রাতিষ্ঠানিক অপরাধের অক্সিজেন। একটি দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে হলে এটা প্রতিরোধ করা খুবই জরুরি। অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে অর্থায়ন বর্তমান বিশ্বের একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যা দিনদিন বাড়ছে। তিনি বলেন, এই সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার যথেষ্ট সচেতন রয়েছে। এটি মোকাবিলায় সরকার বেশ কিছু আইনি পরিবর্তন এনেছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ তৎপর রয়েছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে জাতীয় কৌশলপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান। ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অর্থ পাচার রোধে মোট ১১টি কৌশল হাতে নেওয়া হয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং কর্তৃপক্ষ একত্রে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ