Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রশ্ন : মদ হারাম ত্যাজিলে কি জীবনে আরাম আসে?

উত্তর দিচ্ছেন: মির্জা সরকার | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

উত্তর : মদ মানবজীবনকে অচল ও পঙ্গু করে দেয়ার প্রধান উপাদান। হাদিসে মদকে উম্মুল খাবায়স অর্থ্যাৎ সকল অগাচরের উৎস বা জননী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। যে দ্রব্য জ্ঞান বুদ্ধি লোপ করে দেয়, নেশা সৃষ্টি করে, ধ্বংস করে মানবীয় গুনাবলী এবং ধ্বংস করে দেয়, সমাজ ও সভ্যতাকে সেটি হচ্ছে মদ। ইসলাম হারাম দ্রব্যজিনিসের উপর যুগযুগ ধরে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা নিরিক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে, এর মধ্যে ধ্বংসাত্মক পরিণতি ছাড়া মানবজাতীর কল্যাণ কোন কিছুই নেই। যাও বা সামান্য পরিমাণে রয়েছে তা পুরোপুরিভাবে ধ্বংস হওয়ার পূর্ব লক্ষণ।

এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ”হে ইমানদারগণ নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শর্ত সমূহ শয়তানের কাজ”। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাক যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করতে পারো। শয়তান চায় মদ এবং জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের সম্পর্কের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে। আল্লাহর স্বরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব তোমরা এখনও কি নিবৃত হবে না? (সুরা মায়েদা ৯০:৯১)

রাসূল সাঃ বলেছেন, মাদকাসক্ত ১০ ধরনের ব্যক্তির উপর লানৎ করেছেন। যথা: (১) যে ব্যক্তি মদ জাতীয় বস্তুর নির্যাস বের করে (২) যে ব্যক্তি মদ প্রস্তুত করে (৩) যে ব্যক্তি মদ পান করে।(৪) যে ব্যক্তি মদ পান করায় (৫) যে ব্যক্তি মদ আমদানী করে (৬) যার জন্য মদ আমদানী করা হয় (৭) মদ বিক্রেতা (৮) মদ ক্রেতা (৯) অন্যকে সরবরাহ কারী (১০) মদের লাভের অংশ ভোগকারী (ইবনে মাজাহ) ।

ইসলামে মাদক বিরোধীতা পাশ্চাত্য জাতীগুলোর কাছে উপহাসের ব্যাপার ছিল। কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে এটি এখন নির্মূলের জন্য বিশ^ব্যাপী আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ক্যারোলিনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ড. মালকিন কিন্সলি এবং তার সহকর্মী প্রমান করেছেন যে, ১ গ্রাম অ্যালকোহল মগজের কিছু কোষ ধ্বংস বা মেরে ফেলে। মানুষ যতবার এই অ্যালকোহল পান করে ততবারই এই সর্বনাশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। আমেরিকার ইন্ডিয়ানা পুলিশের সংবাদ সংস্থা ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির মেডিকেল প্রফেসর ডাক্তার লোহর জয়ের একটি গবেষনা প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে যে, মদের নেশার প্রভাব সবচেয়ে বেশি ব্রেনের উপর পড়ে। উহা পান করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রক্তের সাতে মিশে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌছে যায়। পরিমাণে অল্প সেবন করলেও এর প্রভাব থেকে রেহাই পাওয়া যায় না।

মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরে এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, মাদকাশক্তির ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় দেখা দেয়। নেশার মাত্রার তারতম্য হলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। হৃদপিন্ড যখন অচল হয়ে যায় তখন দেহের অন্যান্য সবকটি যন্ত্র চালু থাকলেও মূল মানুষটিকে আর জীবন্ত বলা যায় না। ডাঃ মোহাম্মদ তারেক মাহমুদ বলেন, মদ পানের ফলে হৃদপিন্ডের সর্বশেষ মূল্যবান অনূভুতি যন্ত্রের মিলিত হওয়ার স্থানে ছাকনির কাজ দেয়। কিন্তু শরাব বা অ্যালকোহল এই এনাজুক কাজটিকেও ব্যহত করে। মদের ক্ষতিকর প্রভাব কলিজার উপর পতিত হয়। মানুষের কলিজা ওই অনুভূতি গবেষনা কেন্দ্র যার শরীরে প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দুকেও বিষের ন্যায় অনুভূতি প্রবন করে তোলে। উক্ত অঙ্গ দুটির উপর অনুভূতিশীল বিশেষ এক ধরনের আবরন থাকে। অ্যালকোহল পান করার কারণে উক্ত আবরণটির উপর বিরুপ প্রভাব পড়ে। ফলে অঙ্গদ্বয় ক্রমশয়ে দূর্বল হতে থাকে। অঙ্গদ্বয়ের মধ্যে ক্যান্সার সৃষ্টির মূল কারণ হিসেবে মদ বা অ্যালকোহলের ব্যবহার ধরে নেয়া হয়। শরাব পানের কারণে কলিজা সংকোচিত হয়। রক্ত উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খর্ব হয়ে যায়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে আরও প্রকাশ যে, ব্যক্তি মদ পান করে তার পাকস্থলীতে ধ্বংসাত্মক ব্যধির সৃষ্টি হয়। এমন কি তার পাকস্থলী প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে। ক্ষধা অত্যন্ত কম হয়। ফলে অন্ন আহার করে দিন দিন পুষ্টিহীনতায় ভোগে। শরীর শুকিয়ে যায়। ওজন কমে যায় অনেক সময় যক্ষা রোগের সৃষ্টি হয়। কিডনীর ক্ষতি হয়। বার্ধক্য ত্বরান্বিত হয়। যৌনশক্তি লোপ পায়। বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়।

ইমাম নাসাই হযরত ওসমান রাঃ হতে বর্ণনা করেন, হযরত ওসমান বলেন, তোমরা মদ্যপান থেকে বিরত থাক। কেননা এটি সকল অপরাধের মূল। (তিনি এ সম্পর্কে একটি কাহিনি বর্ণনা করেন) তোমদের পূর্বেকার যুগে একজন আবিদ লোক ছিল। এক ভ্রান্ত মহিলা তার পিছু লাগল। লোকটির কাছে একজন দাসী প্রেরণ করল। দাসী আবিদ লোকটিকে বলল , আমরা আপনাকে স্বাক্ষর দেয়ার জন্য আহ্বান করছি। লোকটি দাসীর সাথে রওনা হলো। এক ঘরে প্রবেশ করা মাত্র দাসী প্রতিটি দরজা বন্ধ করে দেয়।

শেষ পর্যন্ত লোকটি উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট মহিলার কাছে প্রবেশ করল, যার কাছে একজন যুবক ও একটি বড় মদের পাত্র ছিল। মহিলা বলল, আমি আল্লাহর নামে কসম করে বলছি, আমি তোমাকে স্বাক্ষ্য দেয়ার জন্য ডাকিনি, বরং ডেকেছি, তুমি যেনো আমার সাথে সহবাস কর। অথবা এখান থেকে এক পেয়ালা শরাব পান করবে, কিংবা এ যুবককে হত্যা করবে। লোকটি বলল, আমাকে এখান থেকে এক পেয়ালা শরাব পান করাও। আমি তাকে এক পেয়ালা মদ পান করালাম। সে বলল, আমাকে আরো বাড়িয়ে দাও, তারা আরো বেশি দিলো। শেষ পর্যন্ত সে মদ্যপান অবস্থায় মহিলার উপর পতিত হলো এবং যুবককেও হত্যা করল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ