Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সৈয়দপুরে রাস পদ্ধতিতে মাছ চাষ

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

নীলফামারীর সৈয়দপুরে পল্লীতে শুরু হয়েছে পুকুরের পরিবর্তে ইট সিমেন্টে তৈরি ট্যাংকে মাছ চাষ। আধুনিক এ পদ্ধতিটির নাম রিসার্কুলেটিং একুয়াকালচার সিস্টেম সংক্ষেপে ‘রাস’। অল্প জায়গায় এমনকি বাড়ির ছাদেও এ পদ্ধতিতে মাছের চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। উপজেলার বাঙালীপুর ইউনিয়নের মছে হাজীপাড়া গ্রামের বাড়ির উঠানে প্রকল্পটি স্থাপন করা হয়েছে। আর সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এ প্রকল্পটি গড়ে তুলেছেন মো. কামরুজ্জামান কনক। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষে সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন তিনি।
কনক জানান, পদ্ধতির উদ্ভাবন চীনে হলেও বর্তমানে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশে। প্রকল্পটি লাভজনক হওয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে। দেশেও বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা রাস পদ্বতিতে মাছ চাষে সফলতা অর্জন করেছেন। নীলফামারী জেলার মধ্যে কামরুজ্জামানই প্রথম উদ্যোক্তা যিনি এ ব্যয়বহুল পদ্বতিতে মাছ চাষ করছেন। এ পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো অল্প ঘনত্বে অধিক পরিমাণে মাছ উৎপাদন করা। এ পদ্ধতিতে একই পানি পুনরায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে পরিশোধিত হয়ে মাছের ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়। ফলে পানি তেমন অপচয়ের সুযোগ নেই। এছাড়াও মাছের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য প্রয়োজন সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। নিবিড় পরিচর্যার মধ্যে থাকায় এ্যান্টিবায়েটিক এবং কোনো রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। আর এ পদ্ধতিতে অর্গানিক খাবার খাওয়ানোর কারণে পুকুরে চাষ করা মাছের চেয়ে এর মাধ্যমে উৎপাদন করা মাছ অনেক বেশি সুস্বাদু হয়। কনক বলেন, কাজটি শুরুর আগে পদ্ধতিটি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন। পুকুরে যারা মাছ চাষ করেন সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক এ পদ্ধতিটির বিষয়ে সামান্য প্রশিক্ষণেই কাজটি শুরু করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, এ পদ্ধতিতে ছোট পোনা ছাড়া উচিৎ নয়। একটু বড় অর্থাৎ চাপের পোনা ছাড়লে কম সময়ে উৎপাদন বেশি হয়। এ বড় পোনায় বছরে চারবার হারভেস্টিং করা সম্ভব। এতে প্রতি কেজি মাছের উৎপাদন খরচ পড়ে ২০০ টাকা। পাবদা, দেশি শিং ও মাগুর, গুলশা, টেংরা জাতের মাছ চাষ করলে লাভ বেশি। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের মছে হাজিপাড়ার মো.খালেকুজ্জামানের তিন সন্তানের মধ্যে বড় কামরুজ্জামান কনক। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে আবাদি জমি অনেক কমে আসছে। যদি আমরা মাছ চাষের জন্য অধিক হারে পুকুর খনন করি তাহলে আমাদের ফসলী জমি কমে যাবে অনেক। পুকুর না কেটে অল্প জমিতে এ পদ্বতিতে পুকুরের চেয়ে ৩০গুণ বেশি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, পুকুরে যেখানে দুই কেজি খাবারে মাত্র এক কেজি মাছ উৎপাদন করা যায়, সেখানে রাস পদ্বতিতে মাত্র এক কেজি খাবারে দেড় কেজি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।
চাকরি ছেড়ে এ কাজ করার ব্যাপারে বলেন, নতুন এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করে নিজের আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি প্রযুক্তিটি এলাকায় ছড়িয়ে দিতে চাই। যাতে দেশের বেকার যুবকরা সোনার হরিণ চাকরি পিছে আর না ঘুরে এ কাজে মনোনিবেশ করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হতে পারেন।
নীলফামারীর মৎস্য কর্মকর্তা মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, পদ্ধতিটি একেবারেই নতুন, আমরা ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। প্রকল্প স্থাপনে খরচ বেশি হলেও সফল হলে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ