Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আওয়ামী লীগের সবাই প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা

আলোচনা সভায় গয়েশ্বর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

আওয়ামী লীগে যেসব মুক্তিযোদ্ধা আছে তারা প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে মুক্তিযোদ্ধা নেই-এই কথা বলা যাবে না, যথেষ্ট পরিমাণে আছে। তবে উনারা সবই হলেন প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা। রণাঙ্গনে যুদ্ধ করছেন যারা তাদের সিংহভাগ বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তার প্রমাণ হলো তারা নেতৃত্ব দিচ্ছে।
গতকাল (সোমবার) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাজাকার-আলবদর-আল শামস এর তালিকা হলে মুক্তিযোদ্ধার আলাদা তালিকার প্রয়োজন ছিলো না বলে মন্তব্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, বাংলাদেশে তৎকালীন সময়ে প্রতিটি মানুষই মুক্তিযোদ্ধা। যে আহার দিছে, যে পথ দেখাইছে, যে আমাদেরকে থাকার আস্তানা দিছে, সে সংবাদ দিছে সে প্রত্যেকেই মুক্তিযোদ্ধা। অর্থাৎ সারা দেশের মানুষই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষেই কাজ করছে। তাহলে আমাদের কাজটা (মুক্তিযোদ্ধার তালিকা) করার কী দরকার ছিলো? মুক্তিযুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছে রাজাকার-আলবদর-আল শামস- এর ছোট তালিকাটা যদি আমরা উপস্থিত করতাম তাহলে আলাদা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করার প্রয়োজন হতো না।
রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধার দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে গয়েশ্বর বলেন, যারা স্বাধীনতার যুদ্ধের কথা শুনছে তারা এখন গল্প করে। যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে তাদের গল্প করার সময় নাই। তাদের সংসার চলে না, তাদের সন্তানদের লেখা-পড়ার আহার জুটে না, তাদের চিকিৎসা জুটে না।
তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৭ বছর হয়। প্রতিবছর মুক্তিযুদ্ধের তালিকা বড় হয়, প্রতিবছর মুক্তিযুদ্ধের তালিকা যোগ হয়-এটা কী চলমান ফ্যাক্টরি। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চ্যাপ্টার শেষ, ওই দিনের পর্যন্ত যারা মুক্তিযুদ্ধ করছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা। শুধু তালিকা করে যারা মুক্তিযোদ্ধা হইছে একাত্তরে ১৬ ডিসেম্বরের পরে। এই তাদের তালিকা নবায়ন হয়, তাদের তালিকা নতুন করে হয়, পুরান করে আসে, যায়। যে মুক্তিযোদ্ধা নয়, সেও মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে ঘুরে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, আমরা সবাই যুদ্ধ করেছি কোনো চাকরি পাব, সার্টিফিকেট দেখাইয়া এটা পামু, সেটা পামু সেই আশায় যুদ্ধ করিনি। যুগে যুগে মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে সম্মানিত হবে- সকলের কাছে এই স্বীকৃতিটাই যারা যুদ্ধ করছে তাদের চাওয়া। মুক্তিযোদ্ধাদের বেশি যেটা চাওয়া ছিলো সেটা স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা পাই নাই। আজকে আমাদেরকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে।
জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে গয়েশ্বর বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কেউ কেউ হয়ত রাগ করবেন এটা শুনে যে, জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে কেনো? কারণ শেখ মুজিবুর রহমান তখন জেলে আটক ছিলেন। তাও এই দেশে নয়, সুদুর পশ্চিম পাকিস্তানে। তার অনুপস্থিতিতে জিয়াউর রহমান প্রথমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ভুল বুঝাবুঝি যেন না হয় সেজন্য পরে দ্বিতীয়বার সংশোধিত আকারে বললেন, ‘আমি মেজর জিয়া, স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিচ্ছি আমাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার এই কথাটা মানতে কষ্ট হয় কেনো? ওই সময়ে যাদের কান ছিলো তারাও কানে শুনেছিল রেডিওর মাধ্যমে। শেখ হাসিনা নিজেও শুনছেন। তিনি কেনো বললেন না, আমি শেখ হাসিনা বলছি, শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে আমি স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা করছি। রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব ছিলো এটা।
খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, আমরা একবছর ১০ মাস যাবত একটা বির্তকে জড়িয়ে পড়েছিলাম। সেটা খালেদা জিয়ার মুক্তি প্যারোলে না জামিনে। খালেদা জিয়া কী সাধারণ মানুষ। সাধারণের মধ্যে অসাধারণ গল্প-জীবন নিয়ে তার রাজনীতিতে আগমন। উনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে আপোষহীন নেত্রী হয়েছেন। জনগণের ভাষায় তিনি (খালেদা জিয়া) অভিসিক্ত হয়েছেন মাদার অব ডেমোক্রেসি। সুতরাং গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রীর মুক্তির জন্য আমরা আদালতে যাবো কেনো? একবছর ১০ মাস যদি আদালতের কথা না ভেবে আমরা যদি রাজপথ বেঁছে নিতাম তাহলে আমাদের নেত্রীকে আটকিয়ে রাখা শক্তি শেখ হাসিনার সম্ভব ছিলো না, এখনো নাই।
তিনি বলেন, যেখানে আইনের প্রয়োগ হয় না, যেখানে সুশাসন নাই, যেখানে আদালতে যারা বিচার করেন তারা চাকরি করেন, তাদের চাকরি চলে যেতে পারে সরকারের রোষানলে। এর প্রমাণ রয়েছে। সঙ্গতকারণে তারা আজকে ন্যায় বিচার করতে পারছেন না। ন্যায় বিচার করতে পারছেন না কেনো? ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) গত পরশু বলেছেন যে, সকল কিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আছে, পুলিশের ওপর নিয়ন্ত্রণ আছে। তাহলে আদালতও তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংগঠনের সভাপতি মাহফুজুল কবিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। ##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ