Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তাবলীগের নেতৃত্বে উলামায়ে কেরামের প্রয়োজনীয়তা

মুহাম্মাদুল্লাহ আরমান | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০১৯, ৯:০৬ পিএম

‘হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বান্দাদের কাছ থেকে ইলম ছিনিয়ে নেবেন না; কিন্তু তিনি উলামায়ে কেরামকে উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে ইলমও উঠিয়ে নেবেন। এভাবে যখন কোনো আলেম অবশিষ্ট থাকবে না তখন মানুষ কিছু মূর্খ লোকের শরণাপন্ন হবে। অতঃপর (ধর্মীয় বিষয়ে) তাদের প্রশ্ন করা হবে, তারা ইলম ছাড়াই ফতোয়া দেবে। এর ফলে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবে এবং মানুষকেও গোমরাহ করবে।’-(সহীহ বুখারী ১/২০; সহীহ মুসলিম ২/৩৪০; জামে তিরমিযী ২/৯৩-৯৪; মেশকাতুল মাসাবীহ ১/৩৩)

তাবলীগের নেতৃত্বে উলামায়ে কেরামের প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব কতটুকু তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। কারণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই উলামায়ে কেরামের হাতে এ দায়িত্ব অর্পণ করে গেছেন। নবীজি বলেছেন, ‘আলেমরা নবীগণের ওয়ারিস, আর নবীগণ কাউকে স্বর্ণ-রুপার ওয়ারিস বানাননি। তাঁরা ইলমের ওয়ারিস বানিয়েছেন।’ সুতরাং আসমানী ইলম নবীগণের কাছে আসার পর তাঁদের যে দায়িত্ব ছিল, আলেমদেরও সেই একই দায়িত্ব থাকবে। আম্বিয়ায়ে কেরাম যেভাবে মানুষের কাছে দীন পৌঁছিয়ে দিয়েছেন, উলামায়ে কেরামও একইভাবে মানুষের কাছে দীনের দাওয়াত পৌঁছে দিবেন।
এই ধারা যতদিন অব্যহত থাকবে ততোদিন মানুষের কাছে সহীহভাবে দীন পৌঁছবে। আর যদি এই নিয়মে কোনো পরিবর্তন আসে তথা উলামায়ে কেরাম যদি এই জিম্মাদারি আদায় না করেন কিংবা উলামায়ে কেরামকে এই জিম্মাদারি আদায় করার সুযোগ না দেয়া হয় তাহলে পরিণতি সেটাই ঘটবে যা এই প্রবন্ধের শুরুতে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ মানুষ জাহেলদেরকে আমীর বানাবে। তারা ইলম ছাড়া উল্টা-পাল্টা ফতোয়া দিয়ে মানুষকে গোমরাহ করবে এবং নিজেরাও গোমরাহ হবে।
উক্ত হাদীসে দুটি বিষয় লক্ষণীয়- ১. উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব হলো সঠিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করা। ২. আর সাধারণ মানুষের দায়িত্ব হলো, মূর্খ লোকদের শরণাপন্ন না হয়ে উলামায়ে কেরামের কাছ থেকে সহীহ দীন শেখা। যদি তারা মূর্খদের শরণাপন্ন হয়ে তাদের কাছ থেকে দীন শেখেন তবে নিশ্চিতভাবে তারা পথভ্রষ্ট হবেন। আর হাদীসের ঘোষণানুযায়ী পথভ্রষ্টের ঠিকানা সোজা জাহান্নাম। সুতরাং দীনি কাজের নেতৃত্বে হক্কানী উলামায়ে কেরামের থাকা অতি অপরিহার্য একটি বিষয়। এটা উলামায়ে কেরামের জন্য যতটা না জরুরি তার চেয়ে বেশি জরুরি হলো সাধারণ মানুষের জন্য। কারণ দিকভ্রান্ত জনসাধারণকে হেদায়াতের পথ দেখাতে হক্কানী উলামায়ে কেরামের কোনো বিকল্প নেই। তাই আমি মনে করি, তাঁরাই সিদ্ধান্ত নিবেন তাঁরা কার নেতৃত্বে চলবেন, ঐক্যবদ্ধ হক্কানী উলামায়ে কেরামের নাকি দিকভ্রান্ত দলছুট কোনো ব্যক্তি বিশেষের! তাঁরা আরেকটু ভেবে দেখবেন, ভ্রষ্টের পিছনে ঘুরে নষ্ট হবেন নাকি হক্বের পিছনে ঘুরে হক্কানী হবেন !! তাইতো হযরতযী ইলয়াস রহ. বলেছেন, যেদিন আলেমগণ হাতে তাবলীগের কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন সেদিন আমার দিল প্রশান্তি লাভ করবে।
প্রিয় তাবলীগি সাথী ভাই! একটু ভেবে দেখবেন কি?
হযরতজী মাওলানা ইলয়াস রহ. তাবলীগের এ মেহনত চালু করার পর শুরু থেকেই উলামায়ে কেরাম এই মুবারক মেহনতকে সমর্থন করে আসছেন। মাওলানা ইলয়াস রহ. তাঁর সমকালীন দুইজন বড় আলেম সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এবং মাওলানা মনজুর নোমানী রহ. থেকে এ মেহনতের জন্য পরামর্শ নিতেন। তাঁরাও সময় ও পরামর্শ দিয়ে হযরতজীকে সহযোগিতা করতেন। এ ধারা এখনও অব্যহত আছে। ২০১৫ সালের আগে বিশ্বের কোনো আলেম তাবলীগী কোনো বিষয়ে কখনও হস্তক্ষেপ করেনননি। আজকের মাওলানা সাদ সাহেব হাফিযাহুল্লাহ-ও উলামায়ে কেরামের আস্থাভাজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। উলামায়ে কেরাম তাঁকে দিল থেকে মুহাব্বাত করতেন। ভালোবাসতেন। কথা হলো, উলামায়ে কেরাম যখন তাঁকে ভালোবেসেছেন, নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসেছেন। এর জন্য কারও কাছ থেকে তাঁরা দুই পয়সা পাননি। তাঁদের দুনিয়াবী কোনো লাভ হয়নি। আবার এই উলামায়ে কেরামই সাদ সাহেবের কুরআন-হাদীস বিরোধী কিছু কথার কারণে তাঁকে শোধরানোর নিয়তে তাঁর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এখানেও উলামায়ে কেরামের কোনো দুনিয়াবী স্বার্থ অর্জিত হয়নি, হবেও না। তাহলে উলামায়ে কেরাম এই বিপরীতমুখী অবস্থান কেন নিয়েছেন? এর কী কারণ? কারণ একটাই- ‘আল-হুব্বু ফিল্লাহ ওয়াল বুগযু ফিল্লাহ’- আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করা। খোদার কসম! উলামায়ে কেরাম এই একটা কারণেই মাওলানা সাদ সাহেবকে ভালোবেসেছেন এবং বিরোধিতা করছেন। এখানে দুনিয়াবী কোনো স্বার্থ নেই। কোনো লোভ ও লালসা নেই। আল্লাহর রসূলই উলামায়ে কেরামকে এই শিক্ষা দিয়ে রেখেছেন।
তাহলে প্রিয় বন্ধু! আপনি কেন নিজের মনে আলেমদের প্রতি বিদ্বেষ তৈরি করে রেখেছেন? আলেমদের শত্রু ভাবছেন? শুধু এটুকুতেই ক্ষ্যান্ত থাকেননি, আলেমদের মেরে রক্তাক্তও করেছেন!! একবারও কি ভেবে দেখেছেন, দিনশেষে আলেমদের প্রাপ্তি কি? কার জন্য তাঁদের এত মেহনত! এত হা হুতাশ এবং এত রক্তক্ষরণ!! আপনাদের জন্য। শুধুই আপনাদের জন্য। আপনাদের ঈমান-আকীদা এবং ইসলাম হেফাজত করার জন্য। মনে রাখবেন, মাওলানা সাদ সাহেবের ঈমান বিধ্বংসী বক্তব্যে উলামায়ে কেরাম কখনও পথভ্রষ্ট হবেন না। বিভ্রান্ত হবেন না। হবেন আপনারা। আপনার আশপাশের মানুষরা। তাই আপনাদের প্রতি হৃদয়ে দরদ রেখেই উলামায়ে কেরাম আপনাদেরকে হক-না হক এবং সত্য-মিথ্যা বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আপনারা উলামায়ে কেরামকে বুঝতে চেষ্টা করেননি। উলামায়ে কেরামের দিলের হাসরত এবং ব্যথা বুঝেননি। যে আলেমগণ আপনাদের ব্যথায় দু’চোখ সিক্ত করেন সে আলেমদের খুনে আপনারা তুরাগপাড় সিক্ত করেছেন! হায় আফসোস! আহা, আপনারা যদি বুঝতেন- আপনাদের মাথার ওপর থেকে যদি হক্কানী উলামায়ে কেরামের ছায়া এবং নেতৃত্ব উঠে যায় তাহলে আপনাদের ঈমান-আকীদা চিল-শকুনের খাদ্য হবে।
আমরা আপনাদের জন্য কেঁদে যাবো। আমাদের হৃদয়ের কথা আপনাদের বলে যাবো। মানা না মানা আপনাদের ব্যাপার। তবে একটি কথা মনে রাখবেন, আপনারা তাঁদের অমর্যদা করছেন যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আলেমদের মর্যাদা আল্লাহ বাড়িয়ে দেন’। আপনারা তাঁদের ব্যাপারে নির্ভয়ে মন্তব্য করেন যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মাঝে আলেমরাই আল্লাহকে ভয় করে’। প্রিয় বন্ধু! একজন ভুলে ভরা আলেমের ইতাআত করতে গিয়ে লক্ষ-কোটি আলেমকে বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন করা কখনোই মঙ্গল বয়ে আনবে না। সবশেষে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সীরীন রহ.-এর বিখ্যাত একটি উক্তি দিয়ে লেখা শেষ করছি। তিনি বলেন-‘নিশ্চয় ইলম হলো দীন। সুতরাং তোমরা দেখো কার কাছ থেকে দীন গ্রহণ করছো!’-(সহীহ মুসলিম ১/৮)

 



 

Show all comments
  • syed ali ashraf ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:২৮ এএম says : 0
    Very good.
    Total Reply(0) Reply
  • Syed Mamurul Islam ২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:৩৯ এএম says : 0
    can you pls explain point wise as what Moulana Saad told which going against Qur'an or sahih hadis. as we want to know that.
    Total Reply(0) Reply
  • shahidur Rahman ২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:৩৩ পিএম says : 0
    Good writing jajakalla
    Total Reply(0) Reply
  • Mahbub ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৫ পিএম says : 0
    please explain about mowlana sad. what he told?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তাবলীগ

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ