Inqilab Logo

রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হোলি আর্টিজান মামলার দৃষ্টান্তমূলক রায়

| প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

হোলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা মামলার রায়ে ৮জন অভিযুক্তের ৭ জনের ফাঁসি এবং একজনের খালাস দিয়েছেন ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনালের বিচারক। হামলার পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন এবং হামলাকারিদের সহায়তার অভিযোগে এই দন্ড দেয়া হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকার অভিজাত কূটনৈতিক এলাকায় হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলায় অন্তত ২২জন নিহত হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের জন্য গভীর উদ্বেগ ও ভাবমর্যাদার বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছিল। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হোলি আর্টিজান ক্যাফেতে হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা যাদেরকে জিম্মি করেছিল তাদের বেশিরভাগই বিদেশি নাগরিক। এদের মধ্যে ৭জন জাপানি এবং ৯জন ইতালীয় নাগরিক ছিলেন। এদের বেশিরভাগ ইঞ্জিনিয়ার ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। ঘটনার পর পর আন্তর্জাতিক জঙ্গী গোষ্ঠী আইএস’র একটি ওয়েবসাইটে হামলার জন্য আইএস দায় স্বীকার করেছে বলে খবর পাওয়া যায়। যদিও এই দাবীর কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং বাংলাদেশ পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এ দাবী প্রত্যাখ্যান করে। এর আগে ও পরে আরো কয়েকটি জঙ্গী তৎপরতা ও হামলা প্রচেষ্টার সাথে একটি আন্তর্জাতিক চক্রকে আইএস’র সংশ্লিষ্টতা প্রমানের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। তবে বাংলাদেশ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃঢ় অবস্থানের কারণে তাদের দাবী হালে পানি পায়নি। দেশ কাঁপানো জঙ্গি হামলা ও জিম্মিদশা থেকে ভিকটিমদের উদ্ধার করতে কমান্ডো বাহিনীর অভিযান ছিল প্রসংশনীয়। তবে ১০-১২ ঘন্টার জিম্মি নাটকের সময়ই ক্যাফের অভ্যন্তরে অধিকাংশ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। পুলিশের অভিযোগপত্র গঠনের মাত্র এক বছরের মধ্যেই এমন একটি চাঞ্চল্যকর মামলার রায় ঘোষিত হওয়া নি:সন্দেহে একটি প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত।

শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশের মানুষের মধ্যকার সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার উপর কালিমা লেপন করাই হোলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার মূল লক্ষ্য ছিল। এ কারণেই হামলার পর ঘটনাকে আইএস ও ধর্মীয় জঙ্গীবাদের সাথে সম্পৃক্ত করে দেখানোর প্রচেষ্টা দেখা গেছে। তথাকথিত নব্য জেএমবি বা অন্য কোনো জঙ্গী সংগঠনের প্রতি বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ন্যুনতম সমর্থন কখনো ছিল না, এখনো নেই। জনসম্পৃক্ত কোনো ধর্মীয় সংগঠন, রাজনৈতিক দল বা দেশের আলেম সমাজের কোনো অংশের সাথেই এ ধরনের জঙ্গীবাদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যায়না। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম কখনো নিরস্ত্র-নিরীহ মানুষের উপর হামলাকে সমর্থন করেনা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলামের শত্রুরা ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে ভীতি সৃষ্টি করতে ধর্মীয় ছদ্মবেশী জঙ্গীদের ব্যবহার করছে। একইভাবে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য এবং অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করতেই হোলি আর্টিজান জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছিল বলে ধারনা করা যায়। মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণেও এই প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। হোলি আর্টিজান হামলায় বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার জাপান এবং বাণিজ্যিক অংশীদার ইটালিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সমুহ আশঙ্কা থাকলেও সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সে আশঙ্কা থেকে রক্ষা পেয়েছে দেশ। তবে হোলি আর্টিজান হামলার পরোক্ষ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে অনেক।

বিভিন্ন সময়ে দেশে জঙ্গী হামলার ঘটনা, সামগ্রিক সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আইনের শাসন ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিয়ে দেশে এক ধরনের ধোঁয়াশা ও দোষারোপের সংস্কৃতি দেখা গেছে। তবে হোলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পর পুরো জাতির মধ্যে এক ধরনের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান দেখা গেছে। মামলার রায়ের পর সরকারের পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশিত হলেও বিরোধি রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া এ নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে এ ধরনের অপরাধের মাত্রা যেমন কমবে, তেমনি দ্রুত বিচারের রায় জঙ্গীদের জন্য একটি কড়া বার্তা হিসেবে চিহ্নিত হবে। তবে আসামী পক্ষের আইনজীবী ন্যায়বিচারের দাবীতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ধরনের মামলায় মৃত্যুদন্ডের রায় চুড়ান্ত পরিনতি লাভ করতে আরো কয়েক ধাপের বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করার আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখনো অনেক প্রশ্নে জবাব অস্পষ্ট। হোলি আর্টিজান জঙ্গী হামলা ও কমান্ডো অভিযানে নিহত অনেকের অবস্থান নিয়ে কিছু সংশয় এখনো কাটেনি। একইভাবে মামলার রায় ঘোষণার দিন আদালত প্রাঙ্গনে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর মাথায় আইএস জঙ্গীদের টুপি পরিয়ে দেয়ার ঘটনা অনেক বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, হোলি আর্টিজানে হামলার সাথে আইএস সম্পৃক্ততা প্রমানে সচেষ্ট নেপথ্যের চক্র এখনো সক্রিয় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা চক্রের তৎপরতা থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। আমরা আশা করবো, এ বিষয়ে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে এবং হোলি আর্টিজানে হামলায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন