Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গণভোট শুরু

প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৯:৩৫ পিএম, ২৩ জুন, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক : ইইউতে থাকা না থাকা নিয়ে ভোট দিচ্ছেন যুক্তরাজ্যের সাড়ে চার কোটি ভোটার, যার দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় এই ভোটগ্রহণ শুরু হয়। আজ শুক্রবার বিকাল নাগাদ ফলাফল জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, এই গণভোট ঘিরে স্পষ্টত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্য। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনসহ দেশটির প্রধান রাজনৈতিক নেতারা ইইউতে থাকার পক্ষে। তাদের যুক্তি, এতে করে দেশটি হবে আরো সমৃদ্ধ এবং থাকবে আরো নিরাপদ। অন্যদিকে ইইউ-বিরোধীদের মত, দেশের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে ফিরিয়ে আনার এটাই মোক্ষম সময়। এ নিয়ে ব্রিটেনের বাইরেও চলছে ব্যাপক আলোচনা। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ ইওঙ্কার সর্তক করে বলছেন, গণভোটের ফলে ইইউ থেকে একবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সেটাই হবে চূড়ান্ত।
জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ প্রশ্নে এমন দ্বিধায় আর কখনও ভুগতে দেখা যায়নি যুক্তরাজ্যবাসীদের। বিভিন্ন জনমত জরিপের ফলগুলোর ফল বলছে, দুই পক্ষই সমান-সমান অবস্থায় রয়েছে। ‘ইইউতে থাক’ আর ‘ইইউ ছাড়’- দুই পক্ষের প্রচারের ডামাডোলেও কিছু ভোটার এখনও দ্বিধায় রয়েছেন বলে সব জরিপেই উঠে এসেছে। ডেইলি মেইলের এক জরিপের দেখা গেছে এই হার ১১ শতাংশ। দ্বিধায় থাকা এই ভোটাররাই জয়-পরাজয় নির্ধারণের নিয়ামক হবেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ব্রিটিশ, আইরিশ ও কমনওয়েলথ নাগরিকদের মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বা তার বেশি এবং বিদেশে অবস্থানরত যুক্তরাজ্যের যেসব নাগরিকের নাম অন্তত ১৫ বছর ধরে ভোটার তালিকায় আছে- তারা এই গণভোটে অংশ নিচ্ছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, উভয় পক্ষের ব্যাপক প্রচার থাকলেও কতো সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে যাচ্ছে তার ওপরও ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করছে।
এদিকে, ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটের পূর্ব মুহূর্তের জরিপে বেশ এগিয়ে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকা ‘রিমেইন’ পক্ষ। আইটিভি ও দ্য ডেইলি মেইলের উদ্যোগে কমরেস নামের এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা যায় ইউরোপিয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষ ‘লিভ’-এর চেয়ে ৭ পয়েন্ট এগিয়ে আছে রিমেইন পক্ষ। জরিপের এ ফল প্রকাশিত হয় গত বুধবার রাতে। একই রাতে নির্বাচনের প্রাক্কালে জরিপ প্রকাশ করে ইউগভ। রাত ১০টায় প্রকাশিত এ জরিপে দেখা যায়, রিমেইন পক্ষের দিকে ঝোঁক বেশি। এতে দেখা যায় রিমেইন পক্ষকে সমর্থন করছেন শতকরা ৫১ ভাগ মানুষ। এক্ষেত্রে আগের চেয়ে শতকরা ২ ভাগ সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে ‘লিভ’ পক্ষকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৪৯ ভাগ মানুষ।
উল্লেখ্য, ৪১ বছর আগে ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটিতে (ইইসি) যোগ দেওয়ার প্রশ্নে গণভোটে ৬৭ শতাংশ পক্ষে ভোট দিয়েছিল। ইইসিই পরে ইইউতে রূপ নেয়। কত শতাংশ ভোটার ভোট দিতে যাচ্ছেন তা বুথফেরত জরিপেও স্পষ্ট কোনো ধারণা মিলবে না বলে মনে করা হচ্ছে। ভোট গণনার পর ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে আঞ্চলিক ফল ঘোষণা হবে। সবগুলো সমন্বয় করে চূড়ান্ত ফল হবে ম্যানচেস্টার থেকে।   
২৮ জাতির ইইউ জোটের সঙ্গে চার দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করে নতুন পথে হাঁটার প্রশ্নে যুক্তরাজ্যের এই গণভোটকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে ‘ব্রেক্সিট’। ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে যারা প্রচার চালাচ্ছেন, তাদের আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে অভিবাসনের বিষয়টি। আর যারা ইইউতে থাকার পক্ষে বলছেন, তাদের প্রচারের ভিত্তি হল অর্থনীতি। ‘ভোট লিভ’ এর প্রচারকরা অভিবাসীদের ব্রিটেনে আসা বন্ধ করতে চায়। বিশেষ করে ইউরোপ থেকে কেউ যাতে অবাধে যুক্তরাজ্যে এসে বসবাস করতে না পারে, সে দিকেই সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন তারা।
অন্যদিকে ‘রিমেইন গ্রুপ’ বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এলে ৫০ কোটি মানুষের বাজার হারাবে ব্রিটেন। তাতে অর্থনীতিতে আবার ‘ধস’ নামবে, যা এক যুগেও কাটিয়ে ওঠা যাবে না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে ভোট দিলে তা হবে ‘একটি বিরাট ভুল’ এবং তা দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে। বিরোধী লেবার পার্টির নেতারাও ইইউতে থাকার পক্ষে ভোট দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এরমধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী ও টিউলিপ সিদ্দিকও রয়েছেন। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, সাবেক দুই উপ প্রধানমন্ত্রী মাইকেল হেজেলটাইন ও নিক ক্লেইগও সানডে অবজারভারে প্রকাশিত এক যৌথ চিঠিতে ইইউতে থাকার পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে ইইউ ত্যাগের পক্ষের অন্যতম নেতা কনজারভেটিভ পার্টির মাইকেল গোভ প্রধানমন্ত্রীর আশঙ্কা নাকচ করে জনগণকে বলছেন, ‘ভোট ফর হোপ’। বিবিসি, এএফপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গণভোট শুরু
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ