Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দেশের লুটেরাদের রানী হাসিনা ফাহিম হত্যায় জড়িত : খালেদা জিয়া

সকলের জন্য সমান ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান

প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১৭ পিএম, ২৪ জুন, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : ফাইজুল্লাহ ফাহিম হত্যা সাজানো ঘটনা দাবি করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বন্দুকযুদ্ধে নয়, ফাহিমকে পুলিশ হত্যা করেছে। পুলিশ হত্যা করা মানে হাসিনা এর সঙ্গে ইনভলবড। হাসিনা হলো হোম মিনিস্টার। ক্ষমতাসীনদের নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, হাসিনাকে লুটেরাদের রাজা বা রানী যাই বলেন না কেন তিনিই লুটেরাদের প্রধান।
গতকাল রাজধানীর গুলশানে ইমানুয়েলস কনভেনশন হলে এক ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে দলের আইনজীবীদের উচ্চতর আদালতের শরনাপন্ন হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির উদ্যোগে এই ইফতার মাহফিল হয়। এতে বিএনপি ও জোটের শরিকরা ছাড়াও পেশাজীবী নেতারা অংশ নেন।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, কয়েকদিন আগে ফাহিমকে (ফাইজুল্লাহ ফাহিম) হত্যা- এটা সম্পূর্ণভাবে একটি সাজানো ঘটনা। তাকে কোনো ক্রসফায়ারে নয়, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ফাহিমকে কোর্টে নিয়েছিলো, এরপর কোর্ট তাকে রিমান্ডে দিয়েছে। রিমান্ডের নিয়ে সেদিন দিনই শেষ রাতে তাকে হত্যা করা হয়েছে হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায়। তার মানে এটা যারা তখন দায়িত্বে ছিলো, পুলিশ তাকে হত্যা করেছে। ফাহিমকে হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় পাওয়া গেছে। পুলিশের কাস্টিডিউতে মারা গেছে। এই অবস্থায় কোর্ট খুললে আমাদের আইনজীবীদের এটা নিয়ে মুভ করা উচিৎ কিভাবে এই ছেলেটা মারা গেলো। দলীয় আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপার্সন।
মাদারীপুরে শিক্ষকের উপর হামলার সময় হাতেনাতে গ্রেফতার ‘জঙ্গি’ গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম গত ১৮ জুন পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
ফাহিমের দেয়া প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে ওই হামলার ঘটনায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। এরপর গত ১৫ জুন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের হেফাজতে নিয়েছিল পুলিশ।
নিহত ফাহিম ঢাকার উত্তরার একটি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। ১৮ বছর বয়সী এই তরুণ নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশের দাবি।
গত বুধবার মাদারীপুরে সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজের গণিতের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীর উপর হামলার পর জনতা ফাহিমকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে দিয়েছিল।
পুলিশের কঠোর সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, আজকে গণগ্রেফতারের নামে চলছে সারাদেশে বিএনপিসহ বিরোধী দলের লোকজন ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন। এই রমজান মাসে পর্যন্ত আমাদের দেশের ছেলেরা নিজের বাসায় শান্তিতে সেহেরি করতে পারে না। পুলিশ গ্রেফতারের নামে বাণিজ্য করছে।
ব্যবসা চলছে, ঈদের আগে তাদের (পুলিশ) অনেক টাকা বানানো দরকার। তাদের স্ট্যান্ডার্ড হাই হয়ে গেছে। তাদের ভালো ভালো বাড়ি হচ্ছে, তারা ভালো ভালো খাবার-দাবাড় খাচ্ছেন। সরকার থেকে তাদেরকে দেয় এবং অন্যদিকে তাদেরকে পুশে রাখার জন্য তারা বাণিজ্য করে ব্যাপক অর্থ উপার্জন করছে। এই হচ্ছে অবস্থা।
বিভাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা বিচার বিভাগে আছেন, তারা বুঝতে পারছেন, এই বিভাগকে পুরো দলীয়করণ করে শেষ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, আজকে সকলের জন্য সমান বিচার ও ন্যায় বিচার নেই। আওয়ামী লীগের জন্য একরকম বিচার আর বিএনপিসহ বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষের জন্য অন্যরকম বিচার। কেবল তাই নয়, জেলেও একই অবস্থা। আওয়ামী লীগের কেউ যত বড় অপরাধ করুক না কেনো জেলে গেলে কিছুদিন পর সে ছাড়া পেয়ে যাবে। আর বিএনপির লোকজন হলে তারা জামিন পেলে একটার পর একটা নতুন মামলা দিয়ে জেলে আটকিয়ে রাখা হয়।
কারাগারে বিএনপির নেতা-কর্মীদের চিকিৎসার পাওয়ার ক্ষেত্রেও ‘অবহেলা’ দেখানো হয় বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, বিএনপি ও সাধারণ মানুষ হলে জেলখানায় চিকিৎসা পাবে না। এভাবে কারাগারে আমাদের কয়েকজন চিকিৎসার অভাবে মারাও গেছেন।
‘সকলের জন্য সমান বিচার’ দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, আজকে সাধারণ মানুষ অপরাধী নয়। আজকে দেশের অপরাধ শিখিয়েছে আওয়ামী লীগ। আজকে অপরাধ সাধারণ মানুষের মধ্যে নেই। অপরাধ আওয়ামী লীগের মধ্যে আর পুলিশের মধ্যে অপরাধ। দেশের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপার্সন। আসুন, আমরা যা কিছু করছি, কিছু পাওয়ার জন্য নয়, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি হওয়ার জন্য নয়। আমরা যা কিছু করছি দেশকে বাঁচানোর জন্য, মানুষকে বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য।
বক্তব্যের পর লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদি, ফারুক রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট ফারুক রহমান, এমদাদুল হক চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম রাজু, আলাউদ্দিন আলী, মাহবুবুর রহমান খালেক, এডভোকেট উম্মে হাবিবা রহমান, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের সদস্য মো. সেলিম উদ্দিনকে নিয়ে এক টেবিলে বসে ইফতার করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।
এছাড়া ছিলেন- মুসলিম লীগের এএইচএম কামারুজ্জামান খান, এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপ-ভাসানীর আজাহারুল ইসলাম, এলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, বিজেপির সালাহউদ্দিন মতিন প্রকাশ প্রমুখ।
ইফতারে বিএনপির আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, আব্দুুল মান্নান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মেজর (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, আহমেদ আজম খান, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, ২০ দলীয় জোটের মসিউল আলম, খন্দকার লুৎফর রহমান, গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, মুস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, সৈয়দ মাহবুব হোসেন, লেবার পার্টির সামসুদ্দিন পারভেজ, মাহমুদ খান, হিন্দুরতœ রামকৃষ্ণ সাহা, মহসিন ভুঁইয়া, শামীমাম চৌধুরী প্রমুখ অংশ নেন। এছাড়া তুরস্ক ও অস্ট্রেলিয়ার দুইজন নাগরিকও ইফতারে ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দেশের লুটেরাদের রানী হাসিনা ফাহিম হত্যায় জড়িত : খালেদা জিয়া
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ