Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ওবায়দুল কাদের না অন্য কেউ

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে গুঞ্জন

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এদেশের যত অর্জন, আন্দোলন সংগ্রাম আর ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে জড়িয়ে রয়েছে অন্যতম প্রাচীনএই দলটির নাম। খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যুগে যুগে বহু নেতা তৈরি করেছে এই দল। তৃণম‚ল পর্যায় থেকে উঠে আসা এসব নেতাকে ধীরে ধীরে দল পরিচালনায় অন্তর্ভুক্ত করে আওয়ামী লীগ এখন মহীরুহ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০টি জাতীয় সম্মেলন হয়েছে আওয়ামী লীগের। ২০-২১ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে দলটির ২১তম জাতীয় সম্মেলন। আর মাত্র বাকি ৯ দিন। অতিতের প্রতিটি সম্মেলনে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে কার্যনির্বাহী কমিটি পর্যন্ত নির্বাচিত হয়েছেন শত শত নেতা। তবে এখন পর্যন্ত সভাপতি হয়েছেন ৭ জন।

টানা তিন দফায় ক্ষমতায় থাকা দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতিদ্ব›িদ্ব নেই। মূলত তার ইমেজের ওপর ভর করেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করছে দলটি। দলটির লাখ লাখ কর্মী ও কোটি কোটি সমর্থক মনে করছেন শেখ হাসিনাই আবারও সভাপতি পদে থাকছেন। কিন্তু সংগঠনিক দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদক? ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন না নতুন কেউ আসছেন? ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টালে দেখা যায় এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ১০ জন। সবচেয়ে বেশি চারবার করে হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমান। এছাড়া তাজউদ্দিন আহমেদ তিনবার, আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দুইবার করে, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, আবদুল জলিল, ওবায়দুল কাদের একবার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

এবারের সম্মেলনে প্রতিবারের মতোই সবার কৌতুহল কে হচ্ছেন দলের সাধারণ সম্পাদক? কর্মীবান্ধব ওবায়দুল কাদের কী সাধারণ সম্পাদক থাকছেন? না এ পদে পরিবর্তন আসবে? আর পরিবর্তন হলে কে আসবেন এ পদে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চোখ এই একটি পদের দিকে। দলটির বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডিস্থ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের মধ্যে কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক তা নিয়ে চলছে আলোচনা, গুঞ্জন ও বিতর্ক।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওবায়দুল কাদের কর্মীবান্ধব হিসেবে পরিচিত। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া রুপসা থেকে পাথুরিয়া পর্যন্ত ছুটে দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রেখেছেন। জিল্লুর রহমানের পর দলটির নিকট অতীতের সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন আবদুল জলিল ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সফল। কিন্তু আশরাফুল ইসলাম পরিচ্ছন্ন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও কর্মীদের তেমন সময় দিতেন না বলে অভিযোগ ছিল। এ ক্ষেত্রে ওবায়দুল কাদেরের তুলনা শুধুই ওবায়দুল কাদের। কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেকড় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে তিনি সমান এবং স্পষ্টভাষি হিসেবে পরিচিত। কেউ কেউ বলছেন, ওবায়দুল কাদের আরো কয়েক বছরের জন্য অত্যাবশ্যকিয়। ফলে এবার সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম। তিনি (ওবায়দুল কাদের) এখন বেশ সুস্থ আছেন এবং দলের জন্য যথেষ্ট সময় দিচ্ছেন। সারাদেশে জেলা-উপজেলার সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে দল পুনর্গঠনে পরিশ্রম করছেন। এরপরও যদি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা চান তাহলে এ পদে পরিবর্তন আসবে। যা দলীয় গঠণতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী একান্তই শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত। নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, কর্মীবান্ধব এবং দল ও নেতাকর্মীদের যথেষ্ট সময় দিতে পারবেন এমন নেতা যেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। যিনি পুরোদুস্তুর রাজনৈতিক ব্যক্তি। কারণ আওয়ামী লীগের মতো দলে সাবেক আমলা জাতীয় নেতাদের সাধারণ সম্পাদক পদে বসানো দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড সংকুচিত করার নামান্তর। তবে এবার ওবায়দুল কাদের ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদে আরো আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এর বাইরেও আরো কয়েকজনের নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।

২০১৬ সালের ২২-২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। সে সময় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আর সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন তৎকালীন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের, কাজী জাফরউল্লাহ।
সম্মেলনে সাধারন সম্পাদক পদে রদবদল প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সভাপতি বাদে অন্য যেন কোন পদে পরিবর্তন আসতে পারে। তিনি বর্তমানে বেশ সুস্থ রয়েছেন এবং দ্বিতীয়বারের মত সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনে অনীহা নেই।

এদিকে এ বছরের মার্চ মাচের শুরুতে ওবায়দুল কাদের হঠাৎ হার্ট এ্যাটাক করে গুরুতর অসুস্থ হলে দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা নিয়ে আলোচনার তৈরী হয়। সে সময় থেকে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ আলোচনায় আসেন। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর ওবায়দুল কাদের এখন পুরোপুরি সুস্থ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওবায়দুল কাদের ও ড. আব্দুর রাজ্জাক উভয়ের বয়স ৬৮ থেকে ৭০ এর মধ্যে। মাহবুব-উল-আলম হানিফের বয়স অপেক্ষাকৃত কম। দলে শক্ত অবস্থান তার। জাহাঙ্গীর কবির নানকের রাজনৈতিক জীবনও বর্ণাঢ্য, কিন্তু গত জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। তাকে বাদ দিয়ে একজন স্থানীয় নেতাদের নমিনেশন দেয়া হয়। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নানকের আলোচনা রয়েছে। আর সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সবার তুলনায় তরুণ। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। অনেকেই মনে করছেন যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণ কোন নেতাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেছে নেন তাতে খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নাম অনেকটা এগিয়ে থাকবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, দলের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ জানেন না। এছাড়া দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কে থাকবেন, কে থাকবেন না তা-ও শুধু দলীয় সভাপতি জানেন। অনেকাংশে দলের সাধারণ সম্পাদকও এ বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না।

তবে এবারের জাতীয় কাউন্সিলে নতুন কমিটি গঠনে দুর্নীতি, বিতর্কিত, ক্যাসিনো কান্ড, শুদ্ধি অভিযান বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। মন্ত্রিপরিষদে রয়েছেন এমন কিছু নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা নিয়ে হাই-কমান্ডে কিছুটা মতভেদ রয়েছে। তাদের বক্তব্য আওয়ামী লীগ বড় দল। কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন এমন হাজার হাজার নেতা রয়েছেন। কয়েকজন নেতার মধ্যে একজন যদি একাধিক পদ আকড়ে ধরে রাখেন তাহলে অন্যরা যাবে কোথায়। তাছাড়া শুদ্ধি অভিযানের ধারাবাহিকতা এবং অঙ্গও সংগঠনগুলোর মতোই কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিতর্কিতদের সরিয়ে পরিচ্ছন্নদের যায়গা দেয়া উচিত। আবার কয়েকজন নেতা মনে করেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যাদের রাখলে সংগঠন শক্তিশালী হবে তাদের পদে রাখতেই হবে।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে জন্ম নেয়া আওয়ামী মুসলিম লীগ; ১৯৫৫ সালের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগে শুরু থেকেই মাঠ পর্যায় থেকে উঠে আসা নেতারা নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রভাবশালী বা অভিজাত হিসেবে পরিচিতরা সেভাবে দলের নেতৃত্বে আসেনি। দেশের অন্যান্য দল থেকে আওয়ামী লীগ এই ক্ষেত্রে এখনো ব্যাতিক্রম। #



 

Show all comments
  • মাসুম ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৭ এএম says : 0
    আমার মনে হচ্ছে আবারও ওবায়দুল কাদের সাহেব থাকবেন
    Total Reply(0) Reply
  • সফিক আহমেদ ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
    আলোচনায় যারা আছেন তাদের মধ্যে ওবায়দুল কাদেরই ভালো
    Total Reply(0) Reply
  • মাহফুজ আহমেদ ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
    এদের বাদ দিয়ে সোহেল তাজকে করলে অনেক ভালো হবে
    Total Reply(0) Reply
  • শাহে আলম ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
    খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নাম অনেকটা এগিয়ে থাকবে।
    Total Reply(0) Reply
  • জামিল ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
    বর্তমান সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এই তিন জনের কাউকে দেয়া উচিত হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • নোমান ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    সৎ ও ত্যাগী নেতাকে দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • রাসেল ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    ভালো কিছু খবরের প্রত্যাশায় সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকলাম
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Shafiul Quader ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:৩৩ এএম says : 0
    Obaidul Quader is better than other one
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Shafiul Quader ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:৩৩ এএম says : 0
    Obaidul Quader is better than other one
    Total Reply(0) Reply
  • আলমগীর হোসেন ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:৪৬ এএম says : 0
    মাহাবুল হক হানি, রাজ্জাকএর জাফর উল্লাহ ভাল এ হলে নিক্সন যে মাজে মাজে ওনাকে রাজাকার বলে তা আর শুনতে হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • আলমগীর হোসেন ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:৪৬ এএম says : 0
    মাহাবুল হক হানি, রাজ্জাকএর জাফর উল্লাহ ভাল এ হলে নিক্সন যে মাজে মাজে ওনাকে রাজাকার বলে তা আর শুনতে হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • আলমগীর হোসেন ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:৪৭ এএম says : 0
    মাহাবুল হক হানি, রাজ্জাকএর জাফর উল্লাহ ভাল এ হলে নিক্সন যে মাজে মাজে ওনাকে রাজাকার বলে তা আর শুনতে হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • ফয়ছাল ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:৪৭ এএম says : 0
    ড. আব্দুর রাজ্জাক সাহেবকে ক্লিন ইমেজের মনে হয়।স্বল্পভাষী একইসাথে উচ্চ শিক্ষিত। অতিকথন দলের জন্য বিপদ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওবায়দুল কাদের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ