Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কক্সবাজার কর্নার

প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা, কক্সবাজার থেকে : আমাদের কুইন্সটাউন
বিশ্বের সবচেয়ে সুদৃশ্য ক্রিকেট ভেন্যুর তালিকায় শীর্ষে রাখা হয় নিউজিল্যান্ডের কুইন্সটাউনকে। চারপাশে পাহাড়, সবুজ মনোরম পরিবেশে গ্যালারি বিহীন ক্রিকেট ভেন্যু। পাশেই বিমানবন্দর, টেক অফ, ল্যান্ডিংÑসব দেখা যায়। মাঠের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে একটার পর একটা প্রপেলার, সি প্লেন, ফকারÑএসবই আকর্ষন বাড়িয়ে দিয়েছে কুইন্সটাউনের। কক্সবাজার শেখ কামাল স্টেডিয়ামে কিছুক্ষণ অবস্থান করলে এমন দৃশ্য দেখতে পাবে যে কেউ। অবতরণের সময় ফ্লাইটগুলোর গতিপথ স্টেডিয়ামের ঠিক উপর দিয়ে। পার্থক্য কুইন্সটাউন যেখানে পাহাড় বেষ্টিত, সেখানে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দর্শনার্থীদের সবচেয়ে ব্যস্ততম পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম! দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে ঝাউবন, উত্তর দিকে ছোট পাহাড় কক্সবাজারের এই ক্রিকেট ভেন্যুর সৌন্দর্য দিয়েছে বাড়িয়ে। ৪৫ একরের এই ক্রিকেট ভেন্যুতে বেষ্টনী ঘেঁষে লাগানো হয়েছে ৪শ’ নারকেল গাছ। নিজের পকেটের টাকা দিয়ে চকোরিয়া থেকে ৩শ’ টাকা হারে উচ্চফলনশীল এসব নারকেলের চারা কিনে এনে লাগিয়েছেন বিসিবি’র গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান হানিফ ভুঁইয়া। ৩ বছরের মধ্যে গাছগুলো থেকে পাওয়া যাবে নারিকেল, তখন ভেন্যুটির চেহারা যাবে আরো বেড়ে, নারকেল দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের দাওয়াতটা আগে-ভাগেই দিয়েছেন তিনি। তবে ২০১৩ সালে ২৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় আয়তনের এই ক্রিকেট কমপ্লেক্সে আরো এক দফায় কাজে হাত দিতে হচ্ছে বিসিবিকে। বর্তমানে যে উচ্চতায় দাঁড়িয়ে মাঠটি, তা যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন হানিফ ভুঁইয়াÑ ‘বর্ষাকালে এখানে হাঁটু পানি থাকে। তাই মাঠের উচ্চতা বাড়াতে হবেই।’ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর পরই বিসিবি এমন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিসিবি’র সহ-সভাপতি মাহাবুব আনামÑ ‘স্টেডিয়ামটিতে ভূগর্ভস্থ ড্রেনেজ সুবিধার আওতায় আনার একটি প্রকল্প বিসিবির আছে। তা করতে পারলে মাঠটি আরো অন্তত ২ ফুট উঁচু করা সম্ভব।’ এই স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সে এখন আছে ৩৬টি পিচ। সে কারণেই স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সটিকে পরিকল্পিত ক্রিকেট একাডেমিতে পরিণত করে, ডরমেটরি স্থাপন করে, বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের কথা ভাবছেন হানিফ ভুঁইয়া। আভ্যন্তরীণ আয় থেকে স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের খরচ নির্বাহে এটাই যে উত্তম আইডিয়া তার।

সাবাশ ‘আমরা’
২০০৩ সাল থেকেই বাংলাদেশের ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে ভেন্যুতে ইন্টারনেট সুবিধা দিয়ে আসছে ‘আমরা’। বিশ্বকাপই বলুন, কিংবা টি-২০ বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ, বিপিএল, সকল আন্তর্জাতিক সিরিজ, প্রতিটি আসরেই মিডিয়ার ইন্টারনেট সুবিধা দিয়ে আসছে বিসিবি’র এই ইন্টারনেট পার্টনার। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অনুষ্ঠিত কক্সবাজার শেখ কামাল স্টেডিয়ামের খেলাগুলোতেও মিডিয়াকে আশ্বস্ত করেছে এই ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান। এক ভেন্যুতে ২টি মাঠ, এক সঙ্গে চলছে ২টি মাঠে খেলা। তাতেও কোনো ত্রæটি নেই। ২টি মাঠেই ওয়াইফাই ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করেছি ‘আমরা’। একাডেমি মাঠে ৩০ এমভি, মূল স্টেডিয়ামে ৭০ এমভি পিএস ব্যান্ডউইথ নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২টি মাঠ মিলিয়ে অন্তত ৭০ জন মিডিয়ার ম্যাচ কভারের ব্যবস্থা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মিডিয়াকে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সুবিধা দিয়ে আসাদ কামাল তানিমের নেতৃত্বে ‘আমরা’র ৪ জনের চৌকস দলটি সারাক্ষণ থাকছে ব্যস্ত। ছোটদের বিশ্বকাপে বড় আয়োজনে প্রশংসা পেতেই পারি ‘আমরা’।

বিয়ে বাড়ির আমেজ
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার দেখতে জড়ো হন যারা, লাবনী পয়েন্টে সেইসব পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে। সেই পয়েন্টেই কক্সবাজার শেখ কামাল স্টেডিয়ামের প্রধান প্রবেশ দ্বার। অথচ, পর্যটকদের বাড়তি বিনোদন দিতে যে ক্রিকেট ভেন্যু নির্মাণ করা হয়েছে, সেই ভেন্যুতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ম্যাচ দর্শনের সুযোগ পায়নি পর্যটকরা! মূল স্টেডিয়ামে ১৬শ’ আর একাডেমি মাঠে ৩’শ দর্শকের বেশি একজনকেও খেলা দেখার সুযোগ নেই। এবং অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ৮টি ভেন্যুর মধ্যে কক্সবাজারের ২টি মাঠে রাখা হয়নি টিকিটের ব্যবস্থা, এটাই বঞ্চিত করেছে পর্যটকদের। নিজেদের শহরে খেলা, অথচ ব্রাত্য কক্সবাজারের স্থানীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা, কৌতূহলী স্থানীয় ক্রিকেট প্রেমীরা স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হলেও পাননি মাঠে ঢোকার অনুমতি । ১৯শ’ সৌজন্য টিকিটের সবক’টিই যে বন্টনের দায়িত্বটা নিয়েছে বিসিবি। তবে কক্সবাজারে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের খেলা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে যাদের, বিয়ে-বাড়ি আমেজ পেয়েছে তারা। সাংবাদিকহীন একাডেমি মাঠে প্লেয়ার্স ড্রেসিং রুমের পাশে বাশ ও কাঠ দিয়ে, সামিয়ানা টানিয়ে ৩শ’ দর্শকের খেলা দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৩০ জন সাংবাদিকের বসার জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থাও দারুণ। আর মাঠের উত্তর প্রান্তকে ঢেকে দেওয়া হয়েছে কালো কাপড়ে! প্যাভিলিয়নের গ্যালারিতে বার্গার, কফি বিক্রি হয়েছে দেদার। বিয়ে-বাড়ি আমেজ অন্য এক আনন্দ দিয়েছে দর্শকদের।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার কর্নার

১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ