Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আইলচারায় জমে উঠেছে শ্রমিকের হাট

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ধান কাটা আর ছাড়ার কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। চড়া দাম দিয়েও শ্রমিক মেলানো যাচ্ছে না। কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার আইলচারা এলাকায় শ্রমিকের চাহিদার কারণে বিভিন্ন স্থানের শ্রমিকদের আগমনে শ্রমিকের হাট জমে উঠেছে। প্রতিদিন বড় আইলচারা হিলাল মোড়ে শত শত শ্রমিক আসলেও তাদের ভাগে মেলানো দায়। সকলেরই চাহিদা শ্রমিকের তাই চড়া মজুরি দিয়েই শ্রমিক কেনা লাগছে গৃহস্থদের। এতে দারুণ কদর বেড়েছে শ্রমিকদের। অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও শ্রমিক না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গৃহস্থদের।
জানা যায়, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড় আইলচারা হিলাল মোড়ে শ্রমিক বেচাকেনার হাট বসে। বড় আইলচারা গ্রামের মন্ডল পাড়ার মরহুম হিলাল মন্ডল এখানে শ্রমিকদের ডেকে হাট বসানোর পর থেকে এ শ্রমিকের হাটটি এখন পর্যন্ত জাঁকজমকভাবে চলে আসছে। এখানে দেশের উত্তরাঞ্চল, পাবনা, ফরিদপুরসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নিম্নআয়ের লোকজন শ্রম বেচাকেনার জন্য আসে। ফজরের আজান দেওয়ার পর পরই বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচি, ঝুড়ি, কোদালসহ কাজের জন্য শ্রমিকেরা জড়ো হয় কুষ্টিয়ার বড় আইলচারা হিলাল মোড়ে। এই মোড়ের ব্রিজের উপরসহ দীর্ঘ মোড়ে শ্রমিকে শ্রমিকে কানায় কানায় ভরে যায়। সকালে শ্রমিকদের শোরগোল আর চিৎকার ২/১ মাইল দূর থেকে শোনা যায়। বছরের সব সময়ই এ শ্রমিকের হাট বসে। শ্রমিক এ হাটের সুনাম থাকায় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে গৃহস্থরা মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল নসিমন, করিমন নিয়ে এ হাটে ছুটে আসে। গৃহস্থদের চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিকদের বিভিন্ন দামে কিনে নিয়ে যায়। শুধু ধান লাগানো, ধান-কাটা আর পাট কাটা ধোয়ার জন্যই নয়। সব ধরনের কাজের জন্য পাবেন বিভিন্ন পেশার শ্রমিক। রাজমিস্ত্রী, টিনের ঘরের মিস্ত্রীও পাওয়া যায় এখানে। কোন কাজের জন্য দিনব্যাপী শ্রমিক ও চুক্তিতেও শ্রমিক কেনাবেচা হয় এ হাটে। এখন চাষিদের ধান লাগানো আর পাট কাটার ধুম পড়ায় এ হাটে শ্রমিক এসে দাড়াতেই পারছে না। ফজরের পর থেকেই গৃহস্থরা অপেক্ষা করে আছে এ হাটে। শ্রমিক আসলেই শ্রমিকরা দাম বলা মাত্রই তাদেরকে নিয়ে চলে যাচ্ছে গৃহস্থরা। প্রতিদিনই শত শত শ্রমিক আসলেও তাদেরকে মেলানো দায় হয়ে যাচ্ছে। অনেক গৃহস্থ ২/৩ দিন ধরে ঘুরে সুযোগ মত শ্রমিক কিনতে হচ্ছে। তবে শ্রমিকের অনেক দাম। ৩শ’ সাড়ে ৩শ’ টাকা মজুরি নিয়ে শ্রমিকেরা গৃহস্থদের কাজে যাচ্ছে। এক বেলা খাবার দিয়ে তাদেরকে কাজ করাতে হচ্ছে। তাও আবার বেলা ১২টা পর্যন্ত। টাকা মাঠ থেকেই নগদ প্রদান। এরপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এখন সবচাইতে বেশি মজুরি পাওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিকরা এ বাজারে ছুটে আসছে। এখন আর ভোর নয় গৃহস্থদের চাহিদা থাকায় দিনের বেলাতেও শ্রমিক কিনে কাজে লাগাচ্ছে। আর এ ভাবেই কুষ্টিয়ার বড় আইলচারা হিলাল মোড়ে আবহমান কালের শ্রমিক হাট বসছে।
শফি, রাহাত, জামিরসহ কয়েকজন শ্রমিক জানায়, তাদের বাড়ি কুর্শা ইউনিয়নে তারা খুব ভোরে এখানে সাইকেলযোগে আসেন। সারা বছরই কামলা দেন। তারা কাজের মৌসুমে ভালো দাম পান বলে জানান। মজিদ নামে এক শ্রমিক জানান, এখন ধান লাগানো আর পাট কাটা ধোয়ার ভরা মৌসুম। এখন শ্রমিকদের চাহিদা একটু বেশি। কিছুদিন পর এ চাহিদা কিছুটা কমবে।
বেশ কিছু শ্রমিক অভিযোগ করেন, তারা দূর-দূরান্ত থেকে এখানে কামলা দিতে আসেন। কিন্তু হিলাল মোড়ে কোন পায়খানা-প্রসাবখানা না থাকায় তারা চরম দুর্ভোগ পোহায়। পাশে মসজিদের পায়খানা গিয়ে তাদের এ কাজটি সারতে অনেক কষ্ট হয়।
কয়েকজন শ্রমিক ক্রেতা জানান, তারা মাঠে কাজ করার জন্য শ্রমিক নিতে এসেছেন কিন্তু শ্রমিকের বাজার খুব চড়া। কত দাম জানতে চাইলেই ঘাড় ঝাঁকিয়ে বলছেন সাড়ে ৩ শ’ টাকা। দামাদামি করতেই অন্য গৃহস্থ এসে তাদেরকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আইলচারা, বল্লভপুর, খাজানগর এলাকায় ধান-চাতাল ও অটো রাইচ মিল গড়ে ওঠায় অত্র এলাকার শ্রমিকরা আর এখানে শ্রম দিতে আসেনা। তারা বিভিন্ন মিলে চাকরি করছেন। ফলে শ্রমিক সংকট এ এলাকায় সব সময়। অনেক সময় শ্রমিকের চাহিদা থাকা সত্তে¡ও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
আইলচারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আইলচারা ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মোতালেব হোসেন জানান, দূর-দরান্ত থেকে শত শত লোক এখানে শ্রম দিতে আসে। তাদের কোন ধরণের সমস্যা যাতে এখানে না হয় সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখি। কারো দ্ব›দ্ব সংঘাত হলেও এ মোড়ে বসে তা সমাধান করে এ মোড়ের ঐতিহ্য আমরা ধরে রেখেছি।
হক্কানী দরবারের পরিচালক মাওলানা খালিদ হোসাইন সিপাহী বলেন, এ মোড়ে প্রতিদিনই সকালে শ্রমিকের হাট বসে। শ্রমিকদের জন্য পায়খানা প্রসাবের জন্য মসজিদের বাথরুম ফ্রি সেবা দেয়া হয়।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড় আইলচারা হিলাল মোড়ে বৃহত্তম শ্রমিকের হাট বসছে প্রতিদিনই। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী কুষ্টিয়া জেলায় ব্যাপক সুনাম বয়ে এনেছে। এ হাটটি বসায় গৃহস্থ ও কৃষকদের অনেক কল্যাণ বয়ে আসছে। নিম্নবিত্ত আয়ের লোকজন এখানে এসে রুটি রুজির পথ পাচ্ছে। এ হাটে আসা শ্রমিকদের সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষ এ মোড়ে পায়খানা-প্রসাবখানার ব্যবস্থা করবেন এ দাবি সকল শ্রমিক ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ