Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মাদারীপুরে শিক্ষক রিপন চক্রবর্তী হত্যাচেষ্টা

প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মামলা দায়েরের এক সপ্তাহেও গ্রেফতার নেই তদন্তে নেই কোনো অগ্রগতি
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা : মাদারীপুরে সরকারি নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে কুপিয়ে জখম করে হত্যাচেষ্টা মামলায় এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও মামলার কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কথিত বন্দুকযুদ্ধে আটককৃত ১০ দিনের রিমান্ডে থাকা আসামি গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম নিহত হবার পর আর কোনো আসামি আজ পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশ শীঘ্রই বাকি আসামিদেও গ্রেফতারের ব্যাপারে ইতিবাচক ফলাফল দেখাতে পারবে এমন আশাবাদ পুলিশ বিভাগের।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বারেক করিম বলেন, আসামি গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার আগে অন্য পাঁচ আসামির পরিচয় বললেও তাদের সঠিক ঠিকানা বলতে না পারায় ওই আসামিদের শনাক্তকরণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে পুলিশের বিভিন্ন টিম তদন্তের কাজে সহায়তা করছে বিধায় শীঘ্রই বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশ সক্ষম হবে বলে দাবি এই কর্মকর্তরা।
এদিকে এই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত একমাত্র আসামি গোলাম ফায়জুল্লাহ ফাহিম কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় মামলার অগ্রগতি নিয়ে শংঙ্কা প্রকাশ করেছে আহত শিক্ষকের আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
মাদারীপুরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সরেজমিনে গিয়ে আলাপকালে জানা যায়, মামলায় গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার ঘটনা এবং অন্য পাঁচ আসামির সঠিক পরিচয় এখনো জানতে না পারার ব্যাপারটি নিয়েও মাদারীপুরের জনমনে চলছে নানা প্রশ্ন। শহরের পাশাপাশি গ্রামগুলোতে মানুষ এসব প্র্রশ্ন নিয়ে নানা কথা বলছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন জানান, এখনো যদি পাঁচ আসামির পরিচয় খুঁজে বের করতে না পারে পুলিশ, তাহলে তাদেও গ্রেপ্তার করবে কীভাবে। এত বড় একটি ঘটনা, তা কি ফাহিম নিহতের সঙ্গে সঙ্গেই সব চিহ্ন আলামত হারিয়ে যাবে, নাকি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে আদৌ পারবে না পুলিশ।
ঘটনার পর এত দিনেও অন্য কোনো আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় আহত শিক্ষকের স্ত্রী মনিমালা রায় বলেন, “আমরা হতাশ। এতদিনেও অন্য কোনো আসামি গ্রেফতার হচ্ছে না কেন। কোনো কারণে অন্যদের আটক করা সম্ভব হচ্ছে না। একমাত্র আসামিও বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। এখন আমরা শঙ্কিত, এই ঘটনার বিচার কি পাব না। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আহত শিক্ষকের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেকটা ভালো এবং সে সবার সাথে কথা বলতে পারছেন বলে তার স্ত্রী মনিমালা রায় জানান।
সরকারি নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ হিতেন চন্দ্র মন্ডল জানান, মামলা নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে আমরা চাই আমাদের সহকর্মীকে সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনতে। সেই সাথে এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে আইনের আওতায় আনবে পুলিশ। আমরা কলেজের শিক্ষকরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছিও।
মাদারীপুর সদর থানার ওসি মো. জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, ‘ফাহিম বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের দিয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী গুরুত্ব সহকারে পুলিশ কাজ করছে। মাদারীপুরবাসীকে সতর্ক থাকতে এবং অপরিচিত লোকদের আনাগোনা দেখলে সংশ্লিষ্ট থানায় তথ্য দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
এ ব্যাপারে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন জানান, মামলার তদন্তে ক্রমেই অগ্রগতি হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, গত ১৫ জুন বুধবার বিকেলে মাদারীপুর সরকারি নাজিমউদ্দীন কলেজের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীকে তার বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় তাঁর চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালাতে থাকে। স্থানীয় জনতা ধাওয়া করে ফয়জুল্লাহ ফাহিমকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরদিন বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় পুলিশের এসআই আইয়ুব আলী বাদী হয়ে আসামি ফাইজুল্লাহ ফাহিমসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মাদারীপুর সদর থানায় মামলা করে। ফয়জুল্লাহ ফাহিমের দেয়া তথ্য মতে, বাকি ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি পাঁচ আসামি হচ্ছে: সালমান তাকসিন ওরফে সালিম (১৯), শাহরিয়ার হাসান ওরফে পলাশ (২২), জাহিন (২৩), রায়হান (২৪) ও মেজবাহ (২৪)। শুক্রবার মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাইদুর রহমানের আদালতে ১৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ড মঞ্জুরের ১৫ ঘণ্টায় মাদারীপুর সদর উপজেলার মিয়ারচর গ্রামে শনিবার ভোর রাতে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ফাহিম নিহত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদারীপুরে শিক্ষক রিপন চক্রবর্তী হত্যাচেষ্টা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ