Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সউদী তরুণ সমাজের অগ্রনায়কে পরিণত হয়েছেন প্রিন্স মোহাম্মদ

প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সউদী আরবে আধুনিকীকরণ সংস্কারের পেছনের শক্তিশালী তরুণ প্রিন্স তার দেশের তরুণদের অগ্রনায়ক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন এবং এ সপ্তাহে সিলিকন ভ্যালি পরিদর্শন ছিল সে ভাবমর্যাদা জোরালো করার লক্ষ্যেই।
৩১ বছর বয়স্ক উপ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান শান্ত ইসলামী দেশটিতে মেধা, সম্ভাবনা ও আত্মোৎসর্গ সদ্ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার চেয়ে বয়সে ছোট ৭০ শতাংশ তরুণের মনে দ্বিধাহীনভাবে ‘ভিশন ২০৩০’ সংস্কার গেঁথে দিয়েছেন।
তিনি সউদীদের পাশ্চাত্যের অনুসরণ প্রবণতা কাটিয়ে উঠে তার বাজারমুখী সংস্কার ও দেশের সামাজিক রূপান্তরের স্বপ্ন বিক্রির জন্য বিদেশী মিডিয়ার সাথে বৈঠক করছেন। সিলিকন ভ্যালিতে ডেনিম পরিহিত প্রিন্সের ছবি উভয় উদ্দেশ্যকেই ধারণ করেছে। তার আধুনিকীকরণ বার্তা সামাজিক মাধ্যমে তরুণ সউদীদের মাঝে জোরালো সাড়া জাগিয়েছে, যাদের উদ্বেগ কখনো কখনো রাজপরিবারের প্রবীণরা ভুল বুঝেছেন বা উপেক্ষা করেছেন।
জেদ্দার এক ব্যাংকার ও দু’কিশোরীর মা মানাল আল শরিফ বলেন, সউদী তরুণ ও সরকার শেষ পর্যন্ত একই ভাষায় কথা বলছে।
সউদীরা তরুণ শাসকদের পায় না। বাদশাহ সালমানের বয়স ৮০, বাদশাহ আবদুল্লাহ ৯০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন, তার পূর্বসূরি বাদশাহ ফাহদ ৮৪ বছর বয়সে ২০০৫ সালে মারা যান। তারা প্রত্যেকেই বৃদ্ধ রাজকীয় উপদেষ্টা মহল পরিবেষ্টিত ছিলেন।
গত শতকে তেলের রমরমা অবস্থার কারণে সউদী আরবে দ্রুত উন্নয়ন ঘটে, যার পরিণতিতে জন্মহার বৃদ্ধি পায়। দেশের জনসংখ্যার সিংহভাগই এখন তরুণ, নগরবাসী এবং আরব বিশ্বে তাদের সগোত্রীয়দের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন।
ফেসবুক প্রধান নির্বাহী মার্ক জুকারবার্গের সাথে প্রিন্স মোহাম্মদের বৈঠকের ছবি সউদী সংবাদপত্রগুলোতে ২৩ জুন ফলাও করে ছাপা হয়।
পশ্চিমা রাজনৈতিক নেতাদের চাইতে সউদী ঐতিহ্যবাহী রক্ষণশীলতার মতো আমেরিকার টেলিভিশন শো’র উদারপন্থীদের সাথে স্বচ্ছন্দ সিলিকন ভ্যালির সামাজিক মাধ্যমের প্রভাবশালীরা এসব তরুণ সউদীর সাথে অনেক বেশি সংশ্লিষ্ট।
প্রিন্স মোহাম্মদের সফরের জবাবে টুইটারে ২৩ জুন যে আবেগ ও উৎসাহ প্রকাশ করা হয় তার মধ্যে ছিল রক্তবর্র্ণ হৃদয় প্রদর্শন, হাততালি, বুড়ো আঙ্গুল উত্তোলন ও প্রিন্স অব ইয়ুথ নামে তাকে আখ্যায়িত করা। অন্য একজন টুইটে বলেন, তারুণ্যের প্রিন্স হচ্ছেন আমাদের সকলের আশা।
মহিলাদের কাজের সুযোগ বৃদ্ধি, বিনোদনের উন্নয়ন ও প্রাক-ইসলামী যুগের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উদযাপনসহ প্রিন্স মোহাম্মদের বিভিন্ন কার্যকলাপ উদার ব্যবস্থা সম্পর্কে ইতোমধ্যে ভীত রক্ষণশীলদের শঙ্কিত করেছে।
সউদীরা তাদের নেতাদের সাদা পোশাক, চেককাটা কাপড়ের মস্তকাবরণ সম্বলিত জাতীয় পোশাক এবং বিদেশ সফরের সময় কালো পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখতে অভ্যস্ত। তাদের যে ছবি প্রকাশিত হয়, তাতে তাদের বিরাট সফরসঙ্গী দলের সদস্য ও প্রিন্স পরিবেষ্টিত অবস্থায় দেখা যায়।
সুতরাং ক্যালিফোর্নিয়ায় জিন্স, জ্যাকেট ও গলা খোলা শার্ট পরা, ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য ওয়াশিংটনে স্যুট ও টাই পরাসহ প্রিন্স মোহাম্মদের পশ্চিমা পোশাক পছন্দ এবং এ ধরনের সফরকালে সচরাচরের চেয়ে কম জাঁকজমক প্রদর্শন পরিষ্কার ইঙ্গিত বহন করে।
দেশেও তিনি এ কাজ করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ সউদীরা যে রকম সুন্দর পোশাক পরে, তিনি তা না করে সাধারণ পোশাকে এবং খালি মাথায় বিভিন্ন স্থানে উপস্থিত হন, যা তার বাবার প্রজন্মের সময় অকল্পনীয় ছিল।
জেদ্দার ৩০ বছর বয়স্কা নারী দিনা সুলেইমান বলেন, তার সফরের প্রতিক্রিয়া হয়েছে দু’রকম। একদিকে তিনি সউদী আরবের এমন একটি দিক প্রদর্শন করেছেন, যা পাশ্চাত্যে আগে কখনো দেখা যায়নি। অন্যদিকে তিনি তার বয়সের সুবিধাকে ইতিবাচক কাজে ব্যবহার করছেন।
তার ছোট বোন ১৬ বছরের কিশোরী রান্ডা অনুসন্ধিৎসু। তিনি প্রিন্সের ডাকনাম ব্যবহার করে বলেন, আমি মনে করি এমবিএস আসলেই ঠা-া এবং তিনি যেভাবে ইতিবাচক পন্থায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তাতে আমি গর্বিত।
তরুণ সউদীরা ব্যাপক বেকারত্বের সম্মুখীন, তাদের রয়েছে দক্ষতার অভাব, তারা সঠিক বাসস্থানের সমস্যার শিকার এবং দেশের তেলসম্পদ বাবদ আয় হ্রাস পাওয়ায় অর্থনৈতিক চাপের কারণে দ্রুত বর্ধমান জনসংখ্যার প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থানে অক্ষম।
গত বছরের গোড়ার দিকে অর্থনীতি ও উন্নয়নবিষয়ক সুপার কমিটির প্রধান নিযুক্ত হওয়ার সময় থেকে প্রিন্স মোহাম্মদ এ দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জকে অগ্রাধিকার প্রদান করেন। তার ভিশন ২০৩০ ও এতদসংশ্লিষ্ট জাতীয় রূপান্তর পরিকল্পনা এ প্রচেষ্টারই অংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে তার সফরের সময় প্রিন্স মোহাম্মদ সউদী আরবকে আমেরিকান কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন কোম্পানির সাথে সউদী আরবে প্রকল্প গ্রহণের চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছেন।
দেশের তরুণদের জন্য নতুন বেসরকারি খাতে চাকরি সৃষ্টির চূড়ান্ত লক্ষ্যে একটি গতিশীল অর্থনীতি হিসেবে সউদী আরবকে উন্নীত করার ধারণায় অতীতের পরিসংখ্যায়ক মডেল থেকে বন্ধনমুক্ত হওয়া সংস্কারের অংশ।
প্রিন্স অভ্যন্তরীণ সমস্যার বিনিময়ে আকর্ষণীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করায় কিছু সউদীর সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন।
একটি টুইটে বলা হয়, একজন সউদী নাগরিক হিসেবে আমার প্রয়োজন আবাসন। বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিনিধিদলের সাথে তার বৈঠক নিয়ে আমার কিছু যায়-আসে না, কারণ তাতে আমার কোনো লাভ নেই।
অন্যরাও এ ব্যাপারে অনমনীয়। আবদুল আজিজ আল আবদুল্লাহ নামের জেদ্দার ৩৪ বছর বয়স্ক এক উদ্যোক্তা বলেন, এগুলো যে আমাদের জন্য ভালো হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
সামাজিক মাধ্যমে রক্ষণশীলদের প্রিন্সের সমালোচনা সরাসরি সমালোচনা না হয়ে সাংকেতিক ভাষায় হচ্ছে। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে ধর্মীয় পুলিশের উপর নতুন আইন আরোপের সিদ্ধান্ত চরম রক্ষণশীলদের মধ্যে ব্যাপক হৈচৈ সৃষ্টি করেছে।
রক্ষণশীলদের মধ্যে সিলিকন ভ্যালিতে আসা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসহ পাশ্চাত্যের প্রযুক্তি উদ্ভাবন প্রায়ই প্রশংসিত হলেও তার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবকে সউদী আরবের নৈতিক সাধুতার ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকি বলে গণ্য করা হয়।
তাই সামাজিক মাধ্যমে প্রিন্স মোহাম্মদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিত্যাগ দেশের জনসমাজে কিছুটা কাঁপুনি তুলে থাকতে পারে। টুইটারে একটি মন্তব্য ছিল এ রকমÑহে রাজপরিবারের মহামান্য, আপনি কখন একবার আপনার জনগণের সাথে হাঁটবেন?
রক্ষণশীল কাসিম প্রদেশ থেকে আসা একটি সুপার মার্কেট চেইনের ২৮ বছর বয়স্ক ম্যানেজার মোহাম্মদ বিন আতেফ বলেন, মোহাম্মদ বিন সালমান একটি তরতাজা পরিবর্তন আনছেন এবং তা দেশের একটি বিশেষ গোষ্ঠীর পাল্টা প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে পারে। তবে ইনশাআল্লাহ তরুণদের এ প্রিন্স ‘পরিবর্তনের প্রিন্স’ নামে পরিচিত হবেন। সূত্র রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সউদী তরুণ সমাজের অগ্রনায়কে পরিণত হয়েছেন প্রিন্স মোহাম্মদ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ