Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঢাবিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ২দফা হামলায় ভিপি নুরসহ আহত ১৭

এনআরসির বিরুদ্ধে সমাবেশ

বিশ^বিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:১২ এএম, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

ভারতের বিতর্কিত নাগরিত্ব বিল এনআরসি ও সিএএ এর প্রতিবাদে আন্দোলনে পুলিশের হামলায় আহত সেদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি ও এ আইন বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে (ঢাবি) সমাবেশকারীদের ওপর ২ দফা হামলা চালিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এতে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর , সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ দাবি করেছে তাদের ৫জন সদস্য আহত হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানিয়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় ঢাবি শিক্ষাথীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাষ্কর্যে বিক্ষোভ মিছিল ও সংহতিতে নেতৃত্ব দেয় ভিপি নুরুল হক নুর। সমাবেশের নির্ধারিত সময়ের আগেই সেখানে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। সমাবেশে যোগ দিতে বিকেল ৪টার দিকে রাজু ভাষ্কর্যে আসলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন দলবল নিয়ে ডাকসুর ভিপি ও তার অনুসারীদের বাধা দেয়। এতে উভয় পক্ষের বাকবিতÐার এক পর্যায়ে শিক্ষাথীদের ওপর হামলা করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন বাংলাদেশে বসে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না বলেই নুরের উপর হামলা চালান মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নেতাকর্মীদের হামলায় ঘটনাস্থলে গুরুতর আহত হয়ে আইন বিভাগের সিফাত নামে এ শিক্ষার্থী পড়ে যান। এক পর্যায়ে তারা ডাকসু ভিপি নুরুল হক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসনসহ বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মাদ রাশেদ খাঁন, ফারুক হোসেনসহ অন্যদের উপর হামলা চালায়। পরে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
অন্যদিকে রাত ৮টায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহŸায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান, ফারুক হাসানসহ ৬/৭ জন নেতাকর্মী বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে ডাকসুর ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক আহত বিষয়টি অবহিত করতে যান। তারা গেটমেনের সাথে কথা বলে সেখানে অপেক্ষা করলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ২০ জনের মত নেতাকর্মী তাদের ওপর আবার হামলা চালায়। এতে ডাকসুতে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করা আকরাম হোসেন ও নাহিদ ইসলাম নামে দু’জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। তারা দুজনই সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
হামলা পরবর্তী এক সমাবেশে নুরুল হক মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চকে ‘র’ ও বিজিবির এজেন্ট বলে দাবি করেন। তবে ভারতীয় সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করে আমিনুল ইসলাম বুলবুল। নুরুল হক নুর বলেন, আমরা দেশের স্বার্থবিরোধী আর কোন সিদ্ধান্ত নিতে দিব না। বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ এই স্বৈরাচার সরকার। হামলায় আহত আখতার হোসেন সমাবেশের সামনে বসে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ভারতের আধিপত্য কায়েম হতে দিব না। সরকারের নীরব ভূমিকার জন্য দেশ আজ অন্যের হাতে।
বাংলাদেশে বসে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলতে না দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে আমিনুল ইসলাম বুলবুল ইনকিলাবকে বলেন, মূলত আমরা ডাকসুর ভোটার। ডাকসুর ভিপির কাজ হচ্ছে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে কথা বলা। তিনি কেন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন আমরা তার কাছে জানতে চেয়েছি। হামলার বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর প্রফেসর ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, রাজু ভাষ্কর্যে কাউকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। হামলা কোনভাবেই সমর্থণযোগ্য নয়।
নুরুল হক নুরকে ঢামেকের ইমার্জেন্সিতে রাখা হয়েছে। সেখানে বিশ^বিদ্যালয় ও সারাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা নুরসহ আহতদের দেখতে আসেন। সন্ধ্যায় আহতদের দেখতে ঢামেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খানের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল আসে। সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।


ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের গত শনিবার থেকে সরকারি-বেসরকারি শত শত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ শুরু হয়। রবিবার নয়াদিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বেধড়ক লাঠিপেটার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠে দেশটির শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা জামিয়া মিল্লিয়া ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। একই ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তর প্রদেশের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভারতের শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানাতে এ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে ভারতের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংহতি সমাবেশ পালন করেছিলো।
সম্প্রতি একাত্তরে মানবতাবরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত জামাত নেতা কাদের মোল্লাকে শহীদ উল্লেখ করে খবর প্রকাশ করায় দৈনিক সংগ্রাম অফিসে হামলা চালায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এতে নেতৃত্ব দেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন। এছাড়াও সংগঠনটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদল, বাম সংগঠন ও কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হামলার অভিযোগ রয়েছে।##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ