Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফড়িয়াদের ধানে সরকারি গোডাউন ভর্তি সরকারের নিকট ধান বিক্রি করতে পারেনি প্রান্তিক চাষিরা

প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. আবু শহীদ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সংবাদদাতা : দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ফড়িয়াদের ধানে ভর্তি হয়ে গেছে সরকারি গোডাউন, সরকারের নিকট ধান বিক্রি করতে পারেনি প্রান্তিক ধান চাষিরা। এতে সরাসরি কৃষকের নিকট ধান কেনার সরকারি উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে।
উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক পল্লী চিকিৎসক ওয়াজেদুর রহমান বলেন, তিনি মাদিলা হাট গোডাউনে ধান বিক্রি করতে গিয়ে ওই গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তার ধান নেয়নি, একই কথা বলেন, রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক মাহাবুর রহমান, রসুলপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম, রুস্তম আলী, স্বজন পুকুর গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান মানিক। কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, তাদের সামনে এলাকার চি‎িহ্নত ফড়িয়া ধান ব্যবসায়ীরা কোনো প্রকার পরীক্ষা ছাড়াই গোডাউনে ধান দিলেও প্রান্তিক চাষীদের ধান নিতে টালবাহানার কারণে কৃষক তার উৎপাদিত ধান ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মধু সুধন দত্ত বলেন, গতকাল শনিবার পর্যন্ত উপজেলার দুটি খাদ্য গুদামে প্রায় ৯০ ভাগ ধান কেনা শেষ হয়েছে। জানা গেছে চলতি সনের, গত ২৩ মে থেকে সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক, সরাসরি কৃষকের নিকট বোরো ধান কেনা শুরু হয়। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই উপজেলায় ১৯৭৫ মে, টন ধান কেনার বরাদ্ধ দেয়া হয়। এতে এই উপজেলার ৩২ হাজার কৃষকের মধ্যে গড়ে, সাড়ে ৩হাজার কৃষক সরকারের নিকট ধান বিক্রি করার সুযোগ পাওয়ার কথা। যার ফলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এহেতেশাম রেজার নেতৃত্বে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হামিম আশরাফ, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মধুসুধন দত্ত ও সংশ্লিষ্ঠ জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি প্রান্তিক চাষিদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেন। এরই মধ্যে গত ১৪ই জুন আবার একটি সিদ্ধান্ত হয় যেখানে খাদ্য কর্মকর্তারা নিজেরাই সরাসরি ধান ক্রয় করতে পারবেন। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই তারা নিজেরাই ধান কেনা শুরু করে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রান্তিক চাষিদের নিকট ধান না কিনে, তাদের পূর্ব পরিচিত ফড়িয়াদের নিকট ধান কিনে গোডাউন ভর্তি করে। যার ফলে সরকারের নিকট ধান বিক্রি করতে পারেনি প্রান্তিক চাষিরা।
ফুলবাড়ী গোডাউনের অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারী বরাদ্দ অনুযায়ী ১৯৭৫ মে.টন ধানের মধ্যে ফুলবাড়ী গোডাউনে ৯৭০ মে.টন ধান কেনার বরাদ্দ হয়। তার মধ্যে গত ২৩ মে থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত ২৪দিনে উপজেলা বাছাই কমিটির কৃষক তালিকা থেকে ৮০ জন কৃষকের নিকট থেকে মাত্র ১৫০ মে.টন ধান ক্রয় করলেও গত ১৭ জুন থেকে গতকাল শনিবার ২৫ জুন পর্যন্ত ৮দিনের ব্যবধানে ফড়িয়াদের কাছ থেকে ৭০০ মে.টন ধান ক্রয় করেছে ফুলবাড়ী খাদ্য গুদাম। বাকী আছে মাত্র ১২০ মে. টন ধান।
একই অবস্থা মাদিলাহাট গোডাউনের। সেখানে ১ হাজার ৫ মে. টন ধান ক্রয়ের বরাদ্ধের মধ্যে ১৬ জুন পর্যন্ত উপজেলা কমিটির দেয়া কৃষকের নিকট থেকে মাত্র ১২০ মে. টন ধান ক্রয় করলেও গত ৮দিনের ব্যবধানে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ধান ক্রয় করেছে ৭২০ মে. টন।
এ বিষয়ে মাদিলাহাট খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, যথাসময়ে ধান সংগ্রহের সরকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আমরা তড়িঘড়ি করে ধান সংগ্রহ করছি। এদিকে অভিযোগ উঠেছে সরকারীভাবে বরাদ্ধকৃত বস্তা ভ্যানযোগে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল ইসলাম তার মনোনীত ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছায়ে সেই বস্তায় ট্রাক ভর্তি করে ধান এনে সরাসরি গুদামজাত করছে। প্রান্তিক চাষিরা বলছেন, তাদের ধান মিটার পাস করার পরেও টনপ্রতি ২হাজার থেকে ৩হাজার টাকা উৎকোচ নিচ্ছেন খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। উৎকোচের টাকা না দিলে কৃষককে ধান নিয়ে ফেরত যেতে হচ্ছে। এসব অভিযোগের বিষয় তিনি এড়িয়ে গেলেও কিছু অনিয়ম যে আছে তা স্বীকার করে নেন।
ফুলবাড়ী গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজ আল হাসান বলেন, কৃষকের ধান ১৪% শুকনা না থাকায় ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে যে ধানগুলো ক্রয় করা হচ্ছে তা সবই চাতালে শুকানো। তিনি বলেন, আগামী ২৮ জুনের মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাকি ধান ক্রয় করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এহেতেশাম রেজা বলেন, উপজেলা থেকে প্রকৃত প্রান্তিক চাষিদের তালিকা তৈরীর কাজ চলছিল, কিন্তু গত ১৪ জুন গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ সরসরি ধান কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় এই সম্যসার সৃষ্টি হয়েছে। তবে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মধু সুধণ দত্ত বলেন ধানের কোয়ালিটি দেখে ধান কেনা হয়েছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফড়িয়াদের ধানে সরকারি গোডাউন ভর্তি সরকারের নিকট ধান বিক্রি করতে পারেনি প্রান্তিক চাষিরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ