Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

৯৫৩ স্থাপনা উচ্ছেদ

সারা দেশে নদী-খাল রক্ষায় অভিযানের প্রথম দিন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

নদী ও খালের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত এবং দূষণ রোধে ও প্রাকৃতিক জলাশয় উদ্ধারে সারা দেশে এক যোগে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে অভিযান শুরু হয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় উচ্ছদ অভিযানের যোগাযোগের স্বার্থে মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সারাদেশে শুরু হওয়া প্রায় ৪৪ হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে ফল আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামবো না। প্রয়োজনে আমরা আইনী প্রক্রিয়ার শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার।

গতকাল সোমবার সকাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৬৪টি জেলায় এ অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন উচ্ছেদ অভিযান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঢাকা জেলা পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটি আয়োজিত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ৩ দশমিক ১০ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট রামচন্দ্রপুর খালের প্রায় ৭০ টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিদর্শনকালে পানি সচিব একথা বলেন।

এদিকে উচ্ছেদের প্রথম দিনে বাগেরহাট শহরে ভৈরব নদীর তীর দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় এবং নোয়াখালীতে বড় খাল পাড়ের ১৫০০ একর সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়েছে।

পানি সম্পদ সচিব বলেন, আজ থেকে সারাদেশে শুরু হওয়া প্রায় ৪৪ হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে ফল আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ছাড়বো না। প্রয়োজনে আমরা আইনী প্রক্রিয়ার জন্যও প্রস্তুত রয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডেল্টা প্ল্যানের সহায়ক একটি পদক্ষেপ হচ্ছে এই উচ্ছেদ অভিযান। তিনি বলেন, পানি আইন-২০১৩ দ্বারা গঠিত জেলা পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটি যেখানে জেলা পশাসক সভাপতি দীর্ঘ ১ বছরব্যাপী কাজ করে এ তালিকা তৈরী করেছে। উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রবিউল আলম, ঢাকা জেলার তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আব্দুল মতিন সরকার, ঢাকা-২ জানের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আইনুন হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সারাদেশের নদ-নদী, খাল ও প্রাকৃতিক জলাশয়ে প্রায় ৪০ হাজার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছেন তারা। এ সব উচ্ছেদের ব্যাপারে গত ৫ নভেম্বর এ মন্ত্রণালয় থেকে জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ পাঠানো হয়।

গাজীপুর জেলার টঙ্গী রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান জানান, ৬৪ জেলার নদ, নদী, খাল, ছড়াসহ অন্যান্য সরকারি জলাধারের তীরের তালিকা করা অবৈধ স্থাপনা একযোগে উচ্ছেদ শুরু হচ্ছে সোমবার থেকে। তবে অবৈধভাবে নির্মিত কারখানার ভবন, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি ছিন্নমূল মানুষের আশ্রয়ও ভেঙে ফেলার খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সময় ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পাড় উদ্ধারের অভিযান চালানো হলেও পরে তা আবার দখল হয়ে যেতে দেখা গেছে। এবার তাই দখল মুক্ত করার পরপরই সেসব জায়গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের চলমান প্রকল্পের কাজে লাগানোর কথা ভাবছে কর্মকর্তারা। জেলায় উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদন।

বগুড়া ব্যুরো : গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে শুরু হওয়া এই উচ্ছেদ অভিযানের সময় জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমদ, এডিসি (রেভিনিউ) আব্দুল মালেক, এসি ল্যান্ড বীর আমির হামজা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন । মোট ১৬টি দখলদার, বাড়ি, দোকান, হোটেল ও অফিসের মধ্যে যেগুলো টিন শেড এবং সেমি পাকা সেগুলো বিকেলের মধ্যেই উচ্ছেদ হযে যায়।

বিকেলের পর বগুড়া শহরের বৃহত্তম কাঁচা মালের আড়ত রাজাবাজারের সোহরাব হোসেনের মালিকানাধীন একটি ৬ তলা ভবন, আরতী রানী প্রসাদের ৫ তলা ভবন এবং সোহরাব হোসেনের ৪ তলা ভবনের কাজ শুরু হয়েছে । বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডিই শফিকুল আলম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োজিত ৪০ জন দক্ষ শ্রমিক মোটামুটি ভাবে অভিযানের প্রথম দিনেই শেষ করতে লাগবে । তবে বহুতল ভবন ভাঙার কাজ সম্পন্ন করতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে ।

কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন ও কামাল আতাতুর্ক মিসেল জানান,গোমতীর নদীর দুই তীরে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ভবন থেকে শুরু করে ছোটখাটো সব অবৈধ স্থাপনা। সোমবার সকাল ১০ টা থেকে পরিচালিত অভিযানে ১৫৪ টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর থেকে দক্ষিণ রসুলপুর পর্যন্ত গোমতী নদীর ১৫৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

স্টাফ রিপোটার, চাঁদপুর থেকে জানান, চাঁদপুর সদরের পানি উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন লেকে ১৫টি অবৈধ স্থাপনা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হয়েছে। সকাল ১১টা থেকে বিকেল পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ।সকাল ১১টায় চাঁদপুর শহরের ষোলঘর পানি উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন লেকের পাশে থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হয়। এ ব্যপারে জেলা প্রশাসক মো মাজেদুর রহমান খান জানান, সবেমাত্র দখলমুক্ত করা লেকের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ অতিদ্রুতই শুরু করা হবে।

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন যথাক্রমে বালিথুবা পূর্ব, বালিথুবা পশ্চিম, সুবিদপুর পশ্চিম এবং গুপ্টি পুর্ব ইউনিয়নের ১২কিলোমিটার ব্যাপি খালের উপর ২২৭জন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারী স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। ইতোপূর্বে দখলে আক্রান্ত খালগুলো পরিদর্শন করা হয়। এগুলোর কারণে পানি গতিপ্রবাহ বিঘ্নিত হওয়ায় বোরো মৌসুমে পানি প্রবাহে ব্যঘাত ঘটে। যার ফলে প্রতিবছর কৃষকদের ভুগতে হয়। ফরিদগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) শারমিন আক্তার জানান, দখলদারদের ইতিমধ্যেই নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)আব্দুল্যা আল মাহমুদ জামানের নেতৃত্বে অভিযানে উপস্থিত ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রফিক উল্যাহ, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান, সড়ক ও জনপথ বিভাগ চাঁদপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম, উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মোশারফ হোসেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলি হরি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবিদা সুলতানাসহ জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসন ভূমি অফিস এবং বিপুল সংখ্যক পুলিশ একযোগে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করে।

স্টাফ রিপোর্টার,গোপালগঞ্জ থেকে জানান, সকালে শহরের গেটপাড়া, চরনারায়নদিয়া ও বেদগ্রামে পানিউন্নয়ন বোর্ড উচ্ছেদ অভিযান করে। ৫২ টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে পানি উন্নয় বোর্ড অন্তত ৫ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করে। এ দিন সকালে সড়ক বিভাগ পুলিশ লাইন থেকে উচ্ছেদ অভিযান আরম্ভ করে।

ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান,ঝালকাঠিতে পেয়ারার রাজ্যখ্যাত সদর উপজেলার বাউকাঠি থেকে ভিমরুলী বাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটার খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. জোরহ আলীর নেতৃত্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এসময় খালের দুই পাশে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ১৫টি বসতঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলা হয়। এর পরেও যারা অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়নি, তাদের বসতঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে ফেলা হয়। ছোট নদী, খাল এবং জলাশয়ে পানি প্রবাহ সচল রাখতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আতাউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এসএম ফরিদ উদ্দিন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) জহিরুল ইসলাম।

মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, উচ্ছেদ নোটিশ দেয়ার পরেও অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নেয়ায় মাদারীপুরের রাস্তি খাল উদ্ধার অভিযানে নেমেছে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। সোমবার বেলা ১২টার দিকে মাদারীপুর পৌর শহরের পুরানবাজার ব্রীজের নিচ থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, প্রায় অর্ধশত বছর আগে মাদারীপুর পৌরসভা, রাস্তি ও পাঁচখোলা মৌজার প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তি খালটি এলাকার শতাধিক লোকজন অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে বসবাস ও ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছে। গত একবছর আগ থেকে খালটি উদ্ধারে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড একাধিকবার সভা-সমাবেশ করেছেন। পরে তারা ১৫০ জন দখলদারের তালিকা করে উচ্ছেদ নোটিশ দেন। তাতেও দখলদারটা কর্ণপাত করেনি। মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রমথ রঞ্জন ঘটক বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে বার বার অনুরোধ করা হলেও দখলদাররা কোন কর্ণপাত করেনি। তারা নিজেরা মালামাল সরিয়ে নিলে এবাবে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে হতো না। তবে ব্যবসায়ী আর ক্ষতিগ্রস্থ্যদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেই উচ্ছেদ অভিযান চলবে। মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, সরকারের নির্দেশে সারাদেশে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাস্তি খালটি পুরো অবৈধ স্থাপনা মুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

স্টাফ রিপোর্টার মাগুরা থেকে জানান : উপজেলার দ্বারিয়াপুর বাজারের পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হানুনদী তীরবর্তি অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হয়। এসময় প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা জানান, নওগাঁর মান্দায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্পত্তি দখল করে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করা হয়েছে। একটি খাল দখলমুক্ত করতে গতকাল সোমবার সকাল থেকে মান্দা উপজেলার সতিহাট বাজার এলাকায় এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে পাউবো। নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানান, মান্দার পাঠাকাটা থেকে সতিহাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি খাল রয়েছে। এ খালের দু’ধার দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। উচ্ছেদের প্রথম দিন সতিহাট এলাকায় ৪৬টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পর্যায়ক্রমে পুরো খালটি দখলমুক্ত করা হবে।

পিরোজপুর জেলা সংবাদদাতা জানান : পিরোজপুর সদর উপজেলার খালের পাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান সহ স্থাপনা উদ্ধার করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সোমবার দুপুরে সদর উপজেলার সিকদার মল্লিক ও কদমতলা ইউনিয়নের পিরোজপুর-নাজিরপুর সড়কের পাশে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানান পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী। এ সময় খালের প্রায় ৯ কিলোমিটার জায়গায় গড়ে ওঠা ১০৯টি অবৈধ স্থাপনা ও দোকানঘর উচ্ছেদ করা হয়।
ভোলা জেলা সংবাদদাতা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ ইনকিলাবকে বলেন, চরফ্যাশন বাজার সংলগ্ন ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে অনেক অবৈধ দখলদারদের অবৈধ স্থাপনা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রায় এক দশক ধরে অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে । খালটির দুই পাড়ে পাকা ও আধাপাকা প্রায় অনেক অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতার জানান, ঘুইংগারহাট খালের অবৈধ দখলদারকে তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে অনেকবার নোটিশ দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ভোলার সকল খাল-ও জলাশয়কে অবৈধ দখলদারদের দখল থেকে মুক্ত করা হবে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রিদওয়ানুল ইসলাম বলেন, খালের দু’পাশ থেকে সম্পূর্ণ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে এবং যারা এগুলো নির্মান করেছে তাদের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথভাবে ওই উচ্ছেদ শুরু করে। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতে নেতৃত্ব দেন টঙ্গী রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম মোর্শেদ খান। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, সরকারি পানিধার তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের তালিকা অনুযায়ী সোমবার টঙ্গী বাজার (নদী বন্দর) এলাকায় তুরাগ পাড়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা শতাধিক দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছে।

সহকারী কমিশনার গোলাম মোর্শেদ খান জানান, টঙ্গীর পাগাড় এলাকায় তুরাগ নদের তীরে অবৈধভাবে নির্মিত দি মার্চেন্টস্ লিমিটেডের স্থাপনা গত এপ্রিলে উচ্ছেদ করা হয়। তারা তুরাগ নদের সীমানায় কারখানার শেড নির্মাণ ও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আবার দখল করেছে। এই অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান অব্যহত থাকবে।

শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সকাল ১০টায় শরীয়তপুর শহরের ডাকবাংলা এলাকায় এ অভিযান শুরু হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সারা দেশে উচ্ছেদ অভিযানের অংশ হিসেবে শরীয়তপুরে সরকারি খালের উপর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ বলেন, শরীয়তপুর ডাকবাংলা মোড়ে ৭০টি প্রতিষ্ঠান, বটতলায় কয়েকটি আধাপাকা ও টং দোকান ভেক্যু মেশিন দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

এ সময় ব্যবসায়ীরা দোকান পাট ও দোকানের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় চাইলে ও সময় দেওয়া হয়নি বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। এর আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ১ নম্বর খাশ খতিয়ানের জমি পরিমাপ করে ব্যবসায়ীদেরকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। সকাল থেকে প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বলে মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন। উচ্ছেদকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও পুলিশ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ভূমি বিষয়ক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ময়মনসিংহ সংবাদাতা জানান, ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী সরকারি খাস জমির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। সকাল ৯টা থেকে নগরীর কালীবাড়ি গুদারাঘাট এলাকা থেকে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এতে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় নদের জায়গা দখল করে গড়ে উঠা পাকাণ্ডআধাপাকা ও টিনশেড ঘর এবং দোকানপাট। অভিযানের নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হাশেম ও সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এম সাজ্জাদুল হাসান। এম সাজ্জাদুল হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে আমাদের দেশের জলাশয়গুলো অর্থাৎ নদ-নদী যেগুলো আছে সেগুলো উদ্ধার করতে হবে।

সিলেট সংবাদাতা জানান, সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রামে সুরমা নদীতে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে পানি উন্নয়নবোর্ড ও জেলা প্রশাসন। সকাল ১০টায় জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহের নেতৃত্বে এ অভিযান শুরু হয়। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মনির হোসেন জানান, জকিগঞ্জের আটগ্রাম বাজারে অভিযানে সুরমা নদীর তীরে গড়ে তোলা প্রায় ৫৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এছাড়া সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাঁধের উপর নির্মিত ৩৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরে কুমার নদের পাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নেমেছে প্রশাসন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পৌরসভার তত্ত্বাবধানে সোমবার সকাল ১০টার দিকে শহরের আলিমুজ্জামান ব্রিজের নিচে কুমার নদের পাড়ে এ অভিযান শুরু হয়। প্রায় ৩০ বছর যাবত আমরা এখানে বসবাস করছি। আমাদের কিছু না জানিয়েই সকালে ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। আমরা মালামাল ঠিকভাবে সরাতেও পারিনি।

বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান: জেলা শহরের দড়াটানা ব্রিজ এলাকা থেকে এ অভিযান শুরু হয়। বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তানজিল্লুর রহমান জানান, একই সময়ে জেলার চিতলমারী উপজেলার মধুমতি নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করে প্রশাসন। বাগেরহাট শহরে ভৈরব নদীর তীর দখল করে গড়ে ওঠা সব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।



 

Show all comments
  • ** হতদরিদ্র দীনমজুর কহে ** ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৯:০৭ এএম says : 0
    অবৈধ স্থপনা ভেঙ্খে ফেলা হোক।অবৈধ দখলদার মুক্ত বাংলাদেশ চাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী-খাল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ