Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পরীক্ষার ফরম পূরণের কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে প্রতারক চক্র

প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন পরীক্ষার ফরম পূরণের ফিসের অর্থ শিক্ষা বোর্ডের ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা না করে একটি প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের অসাধু কিছু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রতারক চক্রটি ফিসের অর্থের ব্যাংক ডিডি/পে-অর্ডার ভেঙে এ অর্থ আত্মসাৎ করার একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার তথ্য ফাঁস হয়ে পড়েছে সম্প্রতি। দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচীব মো. আমিনুল হক সরকার স্বাক্ষরিত ২৬/০৪/২০১৬ তারিখের স্মারক নং-মাউশিবোদি/প্রশা:/৩৪১৯(২) নীলফামারী ছমির উদ্দীন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর দেয়া পত্রে সূত্রমতে এসএসসি/২০১৫ পরীক্ষার ফরম পূরণ সংক্রান্ত কোন প্রকার ফি, ব্যাংক ড্রাফট/পে-অর্ডার শিক্ষা বোর্ডের কোন ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা হয়নি। আবার একই তারিখে স্বাক্ষরিত শিক্ষা বোর্ডের সচীবের অপর একটি পত্রে যার স্মারক নং-মাউশিবোদি/প্রশা:/৩৪২২(২) তে বলা হয়েছে ১৬০ জন এসএসসি/২০১৫ পরীক্ষার ফরম পূরণ সংক্রান্ত ফিস আদায়ের বিষয়ে যাচাই-বাছাই অন্তে দেখা যায় উক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ১৬১৫/- টাকার একটি ডিডি দিনাজপুর জনতা ব্যাংক কর্পোরেট শাখায় অত্র শিক্ষা বোর্ডের হিসাব নম্বরে জমা হয়েছে। যার ডিডি নং-১৩৪৮২৫৫/৩৪৭, তারিখ-২২/১১/২০১৪, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, নীলফামারী শাখা। অবশিষ্ট ১,৫৬,৭৬০/- টাকার ডিডি/পে-অর্ডার অত্র শিক্ষা বোর্ডের ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা হয় নাই। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সচিবের এ ধরনের ২টি চিঠি পাওয়ার পর ছমির উদ্দীন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুলতান আলী স্বাক্ষরিত ০৯/০৫/২০১৬ তারিখের পত্রের জবাবে শিক্ষা  সচিবকে অবহিত করেন যে, ২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীর ১৬০ জনের ফরম পূরণের মোট ১,৫৮,৩৭৫/- টাকার ২টি ব্যাংক ড্রাফট জনতা ব্যাংক, কর্পোরেট শাখা, দিনাজপুর ব্রাঞ্চে বিগত ০১/১২/২০১৪ তারিখে কেন্দ্র সচিব নীলফামারী-৬০১(এ) ব্যাংকের রশিদ মূলে একযোগে জমা প্রদান করেন। ব্যাংকে জমাকৃত ২টি ডিডি’র মধ্যে ১,৫৬,৭৬০/- টাকার ডিডি যার নম্বর-১৩৪৮২১৫/৩৩৩ তারিখ-২৩/১১/২০১৪ রহস্যজনকভাবে ব্যাংক হিসাবে জমা হয়নি। রশিদ মূলে জমাকৃত ডিডিটি শিক্ষা বোর্ড ও ব্যাংক থেকে খোয়া গেলেও সংশ্লি­ষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কি কারণে তারা নীরবতা পালন করলো তা রহস্যজনক। এ প্রতিবেদক খোয়া যাওয়া ডিডিটির অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানতে পারে ১,৫৬,৭৬০/- টাকার ডিডিটি গত ২৫/০২/২০১৫ তারিখে জনতা ব্যাংক লিমিটেড, নীলফামারী শাখা থেকে আব্দুল জলিল নামক জনৈক ব্যক্তি ডিডি ভাঙ্গিয়ে টাকা তুলে নিয়েছে বলে ব্যাংক ব্যবস্থাপক একেএম সামছুল আলম লিখিতভাবে জানান। টাকা উত্তোলনকারী আব্দুল জলিল ছমির উদ্দীন স্কুল এন্ড কলেজের স্টাফ। সে এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে জানান। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সুলতান আলী জানান, ডিডি সংক্রান্ত কাজ প্রতিষ্ঠানের খ-কালীন অফিস সহকারী আব্দুল বারেক এ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। এ জন্য তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি প্রমাণের জন্য ব্যাংক ড্রাফট গ্রহণ ও টাকা উত্তোলনের প্রমাণ স্বরূপ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে এ প্রতিবেদক তথ্য অধিকার আইনে ফরম-ক পূরণ করে ব্যাংক ব্যবস্থাপকের কাছে চাওয়া হলেও তিনি প্রমাণপত্র না দিয়ে ডিডি নম্বর ভুল দিয়ে ১টি পত্র প্রদান করেন। যা টাকা আত্মসাৎকারীকে সহায়তা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। এদিকে আব্দুল বারেকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি সম্পূর্ণ কলেজের অধ্যক্ষ সুলতান আলী জানেন বলে জানান এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেই জানতে পারবেন। তার কথা অনুযায়ী অধ্যক্ষ জানান-সে (আব্দুল বারেক) এ বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন যে, উক্ত ব্যাংক ড্রাফটি দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের স্টাফ মো. রাজু ও মো. আনিছ (পিয়ন) নীলফামারী এসে ব্যাংক ড্রাফটি আমাকে দিয়ে জনতা ব্যাংক থেকে ভেঙ্গে অর্থ উত্তোলন করে। বারেককে ৭৫,০০০/- টাকা দিয়ে অবশিষ্ট ৮১,৫৩৫/- টাকা নিয়ে তারা চলে যায়। সে আরোও জানায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের জাহিদ, আজিজার রহমান সহ একটি প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের ব্যাংক ড্রাফট প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। এ ব্যাপারে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সচিবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে দুষি ব্যক্তিদের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরপর বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আহমেদ হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনা স্বীকার করে বলেন, আমি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর ব্যাংক ড্রাফট/পে-অর্ডার ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা না হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখছি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পত্র দেয়া হচ্ছে। আপনারা সাংবাদিকরা ভালো রিপোর্ট করে প্রতারক চক্রটি চিহ্নিত করলে আমাদের কাজের সুবিধা হবে বলে তিনি জানান। সুষ্ঠু তদন্ত হলে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ডিডির অর্থ আত্মসাৎ করার ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে একটি সূত্র দাবি করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরীক্ষার ফরম পূরণের কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে প্রতারক চক্র
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ