Inqilab Logo

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সহিংসতামুক্ত সুষ্ঠু ভোট চাই

আর কে চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রাথমিক আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার রিটার্নিং অফিসারের কাছে তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দুই সিটিতে মোট ৯টি দলের ১৪ জন মেয়রপ্রার্থী হয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির পাশাপাশি বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বাম দল সিপিবি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়াও এনপিপি, পিডিপি, গণফ্রন্ট ও বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে এবার। মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর সব মিলিয়ে এক হাজার ৩০টি মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে।

জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার, সব নির্বাচনের আগে অনেক প্রার্থীর কাছ থেকে নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। বিশেষ করে বিরোধী রাজনীতির অনুসারী প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে থাকেন। তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, পক্ষান্তরে বিরোধী পক্ষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে এমন কোনো নির্বাচন হয়নি, যে নির্বাচনে সরকার পক্ষ বা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। আশার কথা, এবার বড় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী দিয়েছে। প্রার্থীরা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ঢাকার দুই সিটি এলাকায় পুরো মাসটিই নির্বাচনী আবহে উৎসবমুখর পরিবেশে কাটবেÑ এমন আশা করা হচ্ছে।

নির্বাচনে জনগণ যাঁকে চাইবে তিনিই বিজয়ী হবেনÑ গণতন্ত্রে এটাই রীতি। তাই প্রত্যেক প্রার্থীরই জনগণের ওপর আস্থা থাকাটা জরুরি। তাঁরা তাঁদের কর্ম বা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের মন জয়ের চেষ্টা করবেন। জোরজবরদস্তি বা অগণতান্ত্রিক কোনো পন্থা অবলম্বন করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার যেকোনো অপচেষ্টা মানুষ অপছন্দ করে। নির্বাচনের পরিবেশও তাতে ব্যাহত হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো নিশ্চয় তেমন অপচেষ্টা মোকাবেলা করবে। পাশাপাশি জনগণও প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠবে। জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতেই নির্ধারিত হয় জয়-পরাজয়। কাজেই জয়ের জন্য নির্বাচনের মাঠে অবতীর্ণ হলেও পরাজয় মেনে নেওয়ার মানসিকতা অবশ্যই সব দলের মধ্যে থাকতে হবে।

বাংলাদেশে নির্বাচনের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, সব সময় এখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশে। এবারও যেন ভোট উৎসবে সবাই সমানভাবে অংশ নিতে পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। আমরা আশা করব, সবার জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিত করবে নির্বাচন কমিশন। শেষ দিন পর্যন্ত বজায় থাকবে উৎসবমুখর পরিবেশ। ভোট উৎসব হবে ৩০ জানুয়ারি।

নির্বাচন শব্দের মধ্যে একটা সর্বজনীনতা বিদ্যমান। এই সর্বজনীনতাকে পুঁজি করে একটি স্বতঃস্ফূর্ত, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করে তোলে ও বর্হিবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। মনে রাখা প্রয়োজন, ছোট্ট একটি ভুল ভবিষ্যতে বড় ভুলকে উৎসাহিত করে। ফলে দেশ ও সমাজের সর্বনাশে তা সহায়ক হয়।

নির্বাচনের ভোটাররা যেন অবাধে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে পারেন, সে নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, নির্বাচনের সামাজিক বাস্তবতা অনেক। এটি সমাজ নির্মাণের একটি শক্তিশালী ভিত্তি।

আমি মনে করি, নির্বাচন সামনে রেখে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় পরিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা থাকা উচিত। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মী ও সমর্থকদের অবশ্যই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকা, প্রচারণা চালানো, ভয়ভীতি, প্রতিশোধ বা জবরদস্তিমূলক বিধিনিষেধ ছাড়াই সমাবেশ করার স্বাধীনতা থাকতে হবে। নির্বাচনের আগে, নির্বাচন চলাকালে এবং নির্বাচনের পরে শান্তি বজায় রাখতে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। মনে রাখতে হবে, সহিংসতায় কেবল তারাই লাভবান হয়, যারা বাংলাদেশের ভালো চায় না।

পরিশেষে বলছি, সবার অংশগ্রহণে একটি সুন্দর শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। মেয়র যেই হোক জনগণ তাদের নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা পাক। এটাই কাম্য।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সভাপতি বাংলাদেশ ম্যাচ ম্যানুফ্যাকচারার এসোসিয়েশন, সদস্য এফবিসিসিআই এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভোট চাই
আরও পড়ুন