Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা অর্জিত হয়েছে

পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনে শেখ হাসিনা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

আজকের পুলিশ বাহিনীর প্রতি জনগণের বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জিত হয়েছে। গণতন্ত্রের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় পুলিশ সাহসিকতার ভূূমিকা পালন করছে। পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকা মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছে। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে জনগণের সেবার মাধ্যমে পুলিশকে আরও জনবান্ধব হতে হবে।
গতকাল রোববার সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্যদিয়ে পুলিশ সপ্তাহ-২০২০ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরো বলেন, বিএনপির সন্ত্রাসীরা যখন অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, তখন তাদের হাতে ২৯ জন পুলিশ নিহত হয়েছিলেন। এ সময় পুলিশ অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে জনগণের জানমাল রক্ষা করেছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছে।

জাতীয় সম্পদ রক্ষা করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স ঘোষণা করেছি। পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে এগুলো মোকাবিলা করছে। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, বিদেশেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। আমাদের দেশে এই বিনিয়োগ সন্ত্রাসের কারণে কোনোক্রমেই যেন ব্যাহত না হয় সেদিকে পুলিশকে ভূমিকা রাখতে হবে। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে রাজারবাগ এবং পুলিশের শহীদ হওয়ার ঘটনা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন নম্বর ৯৯৯-এর উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ জনগণের সেবক। পুলিশ ইতোমধ্যেই জনগণের বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জন করেছে। এখন ৯৯৯-এ ফোন করলেই পুলিশ দ্রুত ছুটে গিয়ে সেখানকার সমস্যার সমাধান করছেন। এতে জনগণ অত্যন্ত উপকৃত হচ্ছে। স¤প্রতি ১০ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পেয়েছেন। এই পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ঘুষ এবং দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এাঁ দেশের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। এই ঘটনা একটি সততার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ যখন স্বাধীন করা হয় তখন এদেশের ৮২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমাদের রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ সব ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। ছিল না ব্যাংকে কোনো টাকা। গোলায় ছিল না ধান। তারপরও রাতদিন পরিশ্রমের মাধ্যমে মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেন, তখনই ৭৫-এর ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সেখানে একজন পুলিশ কর্মকর্তাও শহীদ হয়েছিলেন। এসময় তিনি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তারা শুধু আমাদের পরিবারকে নিঃশেষ করেনি। তারা নিঃশেষ করেছে বাঙালি জাতির ভাগ্য ও বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে। বঙ্গবন্ধু যেভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই সম্ভাবনাকে ধ্বংস করেছে তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।

এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সময় নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সাইবার ক্রাইম আইন করেছি। এই সমস্ত গুজব রটনা করে মানুষের ক্ষতিসাধন যারা করে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ যথাযথ ভূমিকা রেখেছে। পুলিশকে আধুনিক জনবান্ধব করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাাশি পুলিশের জনবল ধাপে ধাপে বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস নির্মূলে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট, কাউন্টিার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিসিসি) গঠন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

গতকাল সকাল সাড়ে নয়টায় রাজাবাগে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সে সঙ্গে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খোলা জিপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) স্টল পরিদর্শন এবং পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কল্যাণ প্যারেডে অংশগ্রহণ করেন। এবারের পুলিশ সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’। গতকাল থেকে শুরু হওয়া ছয় দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহের নানা কর্মসূচি চলবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট এবং পতাকাবাহী দলের নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এবারের পুলিশ সপ্তাহে প্যারেড অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন পুলিশ সদর দফতরের এসপি মো. ছালেহ উদ্দিন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত প্যারেডে অংশ নেন সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য।

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ২০১৯ সালে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৪ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ২০ জনকে ‘প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম)’, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দমন, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৮ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম-সেবা)’ এবং ৫৬ জনকে ‘ প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা)’ দেয়া হয়। এএসআই (নিরস্ত্র) মরহুম মো. আক্তার হোসেনকে বিপিএম (মরণোত্তর) পদক দেয়া হয়।

পুলিশের দাবি পূরণ না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর অসন্তোষ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্দেশ সত্তে¡ও পুলিশের দাবি পূরণ না হওয়ায় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এসব দাবির বিষয়ে তিনি সম্মতি দেয়ার পরও কেন পূরণ হয়নি, তা তাকে অতিসত্ত¡র জানাতেও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল রোববার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে বার্ষিক প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর কল্যাণ সভায় প্রধানমন্ত্রী এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

সভার একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গত দুই পুলিশ সপ্তাহে যে দাবি উত্থাপিত হয়েছে, তার প্রায় সবই অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও আশ্বাস সত্তে¡ও। পুরনো এ দাবিগুলো ফের প্রধানমন্ত্রীর সামনে উত্থাপন করা হলে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওপর তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এসব বিষয়ে তিনি সম্মতি দেয়ার পরও কেন তা বাস্তবায়ন হয়নি তা তাকে অতিসত্ত¡র জানাতেও বলেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় পুলিশ তাদের পুরনো দাবিগুলো তুলে ধরে এবারও। পুলিশের পক্ষ থেকে কনস্টেবল থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে কথা বলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নিম্ন-পদস্থ কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিভিন্ন ট্র্রেড যেমন- টেলিফোন, বিউগল, নার্সিং, ড্রাইভিং, ক্লিনার ইত্যাদি ভাতা যা ট্রেডভেদে ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত, সেসব ক্ষেত্রে বর্তমান বেতন কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাড়ানোর দাবি তোলে পুলিশ। এছাড়া আরো বেশ কিছু বিগত দিনের দাবিও উপস্থান করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে যে দাবিগুলো তোলা হয়েছে, সেগুলো গত বছরই তোলা হয়েছিল। সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়েছিল এবং আমার অফিস থেকে সেটা বাস্তবায়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো কেন বাস্তবায়ন করা হয়নি, ঝুলে আছে তা আমি জানি না। এখানে স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রসচিব বসে আছেন, আমি তাদের কাছে জানতে চাই। তারাই বলবেন, কেন এগুলো পেন্ডিং রয়ে গেছে।



 

Show all comments
  • ahammad ৬ জানুয়ারি, ২০২০, ৩:০৯ এএম says : 0
    পুলিশের দলীয় কার্যকলাপে আপনার ও আপনার দলের পূর্ণআস্হা অর্জন করেছে, জনগনের নয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেখ হাসিনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ