Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জামিয়ার শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছিল পুলিশ

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে উত্তাল হয়েছিল দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ১৫ ডিসেম্বর নিউ ফ্রেন্ডস কলোনিতে সংঘর্ষের সময় শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ গুলি চালিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। গুলিবিদ্ধ তিন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালে। তবে সেই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছিল পুলিশ। কিন্তু নতুন তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেল, শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে তিনটি গুলি করা হয়েছিল, গুলি চালিয়েছিল দুই পুলিশ। দক্ষিণ-পূর্ব জেলা পুলিশ অফিসারদের লিখিত ‘কেস ডায়েরি’ এই ঘটনার উল্লেখ রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের সংবাদ মাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

প্রসঙ্গত, ১৫ ডিসেম্বর বিক্ষোভ প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। হাজারো বিক্ষোভকারীরা সংসদে যাওয়ার চেষ্টা করলেও মথুরা রোডে পুলিশ তাদের থামিয়ে দেয়। এমনকি পুলিশ বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে ও লাঠি চার্জও করে। তার আগে সরাই জুলেইনা ও মথুরা রোডে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। পুলিশের বক্তব্য, চারটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এই বিক্ষোভের কয়েক ঘন্টা পরে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার গুলিবিদ্ধ তিন শিক্ষার্থীর মধ্যে, আজাজ আহমদ (২০) এবং মোহাম্মদ শোয়েব (২৩) নামে দুইজনকে সফদরজং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অপর শিক্ষার্থী মোহাম্মদ তাইমিনকে (২৩) হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনজনই গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন বলে তাদের অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয় হাসপাতালের মেডিকো-লিগাল কেস রিপোর্টেও।

যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে গুলি চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। দিল্লি পুলিধের ডিসিপি (দক্ষিণ) চিন্ময় বিশ্বাল বলেন, ‘হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের এমএলসি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে বন্দুকের গুলিতে আহত হওয়ার কথা। আহতদের বক্তব্যের ভিত্তিতে এটি লেখা হয়েছিল। কিন্তু আমরা কোনও শিক্ষার্থীর উপর গুলি চালাইনি। কোনও ধাতু বা প্লাস্টিকের মতো কোনও কিছু দ্বারা তারা আহত হয়েছেন। সফদরগঞ্জেও যারা ভর্তি হয়েছেন তারাও বলছেন তারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু সেখানে এমন ঘটনা ঘটলে তাদেরকে অ্যাম্বুলেন্স করে নিকটবর্তী হলি ফ্যামিলি কিংবা ফর্টিসেই নিয়ে যাওয়া হত।’

সূত্রের পক্ষ থেকে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানানো হয়েছে, ১৫ ডিসেম্বর জামিয়া মিলিয়া এই ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু সকলেই জানিয়েছিলেন তারা কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। গুলির বিষয়ে বারবার জানতে চাওয়া হলেও সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা গুলি ছোড়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে যে সেখানে গুলির ঘটনা ঘটেছিল। যদিও ১৮ ডিসেম্বর একটি ভিডিও ভাইরাল হয় যেখানে দেখা যায় দু’জন পুলিশ কর্মী গুলি ছুঁড়ছেন এবং পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন এসিপি পদমর্যাদার এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। একটি সূত্র বলছে, যখন তথ্য-প্রমাণসহ ওই কর্মকর্তার কাছে এর ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয় তখন তিনি বলেছেন, আত্মরক্ষার্থে তারা এমনটা করেছিলেন।

তবে জামিয়া মিলিয়া ও নিউ ফ্রেন্ডস কলোনিতে হিংসাত্মক ঘটনায় দায়ের করা দুটি এফআইআরে উল্লেখ করা হয়নি গুলি চালানোর কথা। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যেই মামলার ডায়েরি অপরাধের শাখার কাছে হস্তান্তর করা হবে। এসআইটি পুলিশ কমিশনার অমূল্য পাটনায়েকের নির্দেশের পরই দাঙ্গার দশটি মামলা তদন্ত করছেন তারা।’ শনিবার ফের জিজ্ঞাসা করা হলে ডিসিপি বিশ্বওয়াল বলেন যে তদন্ত চলছে, তাই তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবেন না।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে গতকাল শনিবার জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ডিসিপি (দক্ষিণপূর্ব) চিন্ময় বিসওয়াল।

সফদারজং হাসপাতালের কর্মকর্তা সুনীল গুপ্ত বলেন, ‘চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন দুই শিক্ষার্থী। তাদের দেহ থেকে যে বস্তু বের করা হয়েছে, তা দিল্লি পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমাদের কাজ শুধু রোগীকে সেবা দেয়া।’ আর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের পরিচালক ফাদার জর্জ বলেছেন, ‘আমরা আহত ব্যক্তির শরীর থেকে যা পেয়েছি তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য দিল্লি পুলিশকে দিয়েছি। এটা গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল নাকি অন্য কিছু, সেটা তারা খুঁজে বের করবে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ