Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

উত্তমরুপে মসজিদ মাদ্রাসা সংরক্ষণ করতে হবে, মসিজিদ ভেঙ্গে রাস্তা নির্মান কেয়ামতের লক্ষণ! -বায়হাকী শরীফ

মো. আব্দুর রহিম | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৪৫ পিএম

পবিত্র কোরআন ও অসংখ্য হাদিছ মতে কোন অযুহাতেই মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানাত্তর করা যাবে না। মসজিদ ভেঙে রাস্তা নির্মাণ অথবা উন্নয়ন কাজ কেয়ামতের লক্ষণ। মসজিদে উচ্চস্বরে দুনিয়াবী কোন কথা বললে ৪০ বছরের ইবাদত নষ্ট হয়ে যায় । মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা যাবে না। বরং উত্তমরূপে সংরক্ষণ করতে হবে।

সৌন্দর্য বর্ধন উন্নয়ন, অথবা বিভিন্ন অযুহাতে, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে, মসজিদ ভেঙ্গেছে, ভাঙ্গছে এবং ভাঙ্গার পরিকল্পনা করছে। অথচ পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী কোন অযুহাতেই একবার যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়ে নামায শুরু হয়েছে এরূপ মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর ইসলামে নিষিদ্ধ। মসজিদ হচ্ছে আল্লাহর ঘর। সুরা জিন এর ১৮ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই পবিত্র ও সম্মানিত মসজিদসমূহ হচ্ছে মহান আল্লাহ পাকের পবিত্র ঘর। সুরা নূরের ৩৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন “যেসব পবিত্র ঘরসমূহে সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহ তায়ালার পবিত্র নাম স্মরণ ও তাসবীহ তাহলীল পাঠ করা হয় সে সব পবিত্র ঘর সমূহকে উত্তমরূপে সংরক্ষণ করো।” অর্থাৎ পবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা যাবেনা। বরং উত্তমভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহ হতে বর্ণিত (পবিত্র মসজিদ সমূহকে) সম্মান করার জন্য এবং উত্তমভাবে সংরক্ষণ করার জন্য। (তাফসীরে ত্ববারী শরীফ ১৯/১৮৯)। (তাফসীরে নিশাপুরী ১/৭৬৫)-এ একই কথা বলা হয়েছে। বুখারী ও মুসলিম শরীফে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যাক্তি আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মান করবে, আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মান করবেন।”

হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু্ আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা পবিত্র মসজিদ ভেঙ্গে রাস্তা হিসেবে (অন্য কোন কাজে) ব্যবহার কোর না। বরং উত্তমভাবে সংরক্ষণ করো । (তাবারনী ১০/৪৫৩, ফায়জুল ক্বাদির ৫০২, মাসাবীহুত তানবীর ২৫, ফাতহুল কাবীর ৩/৩০০, দায়লামী শরীফ ৫/১৫, জামিউল আহাদীছ ১২/৭৫ সহ অসংখ্য হাদীছে এর উল্লেখ রয়েছে।)

হযরত ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণীত, রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “ ততক্ষণ পর্যন্ত ক্বেয়ামত হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত মসজিদ ভেঙ্গে রাস্তা নির্মাণ হবে না।” (বায়হাকী ৩/১৬৩, মোস্তাদরেকে হাকীম ৪/৪৪৬, জামিউল আহাদীছ ১৬/২৮১, খাছায়েছুল কুবরা ২/২৪০,তাফসীরে সমরকন্দী ১/৮৬, খামীন ১/৭২ ও বাগবী শরীফ ১/১৫৭ তে উল্লেখ করা হয়েছে, ঐ ব্যাক্তির চাইতে বড় জালিম কে আছে যে মসজিদ সংরক্ষণ না করে বন্ধ করে (ভেঙ্গে) দেয়। এবং তাদের রয়েছে দুনিয়াতেই লাঞ্চনা। (মাজহারী ১/১১৬)। এবং পরকালের জন্য জাহান্নাম তাফসীরে জালালাইন শরীফ।

সুতরাং কোন অযুহাতে মসজিদ ভাঙ্গা স্থানান্তর করা ইসলামে নিষেধ। বরং মসজিদ নির্মান, উত্তমরুপে সংরক্ষনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাই যে সব সরকারী প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন, সৌন্দর্য্য বর্ধন তথা অন্য কোন অযুহাতে মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তরের স্বিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা থেকে সরে আসতে হবে। আল্লাহ ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ পালনার্থে।

বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে , ঢাকা টঙ্গী নারায়নগঞ্জ-এলাকার বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষা ও ধলেশ্বরী নদীর তীরভূমিতে দীর্ঘদিনপূর্বে গড়ে ওঠা ১৩১টি মসজিদ ও মাদ্রাসা স্থানান্তর এর নামে সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রতিষ্ঠান এসব মসজিদ ও মাদ্রাসা ভেঙ্গে ফেলার স্বিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। উল্লেখিত কোরআন হাাদিছের দলীল অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা যাবে না । তাই কোরআন ও সুন্নাহর (হাদিছ) নির্দেশ অনুযায়ী, এসব মসজিদ ও মাদ্রাসাা ভাঙ্গার বা স্থানান্তর এর সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে বুড়িগঙ্গার তীরে সদরঘাট ও কামরাঙ্গীরচরের ২১টি মসজিদ ভাঙার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। এছাড়া মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য ভাঙার পরিকল্পনায় ছিলো আরো ২৩টি মসজিদ। ইতোমধ্যে কুড়িল ফ্লাইওভার সংলগ্ন মসজিদ ভাঙা হয়েছে। এছাড়া রাস্তার জন্য ফেনীর মহিপাল মসজিদ, রংপুরের শাহী মসজিদ, রাজধানীর মাটিকাটায় বায়তুন নূর জামে মসজিদ, মিরপুরে রাস্তা প্রশস্ত করার নামে ভাঙা হয়েছে ৫টি মসজিদ ও ১টি মাদ্রাসা। প্রত্যেকটি মসজিদ ও মাদ্রাসা ওয়াকফকৃত, কিন্তু তারপরেও প্রশাসন তা ভেঙে দেয়। অদ্যবধি তা স্থানান্তর ও নির্মাণকাজ হয়নি বলে জানা গেছে। অথচ, হাতিরঝিল প্রকল্পে গৌরাঙ্গ মন্দির, না ভেঙ্গে রাস্তা এবং ছোট ফ্লাইওভার তৈরি হয়েছে বাঁকা করে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি স্থাপনার জন্য ৯ বছর ধরে আটকে আছে নরসিংদী শহররক্ষা বাঁধ। মেঘনা নদীর ভয়ঙ্কর ভাঙন থেকে শহর রক্ষায় এর বিকল্প নেই। হিন্দু বাউলগোষ্ঠীর বাধার মুখে আজো প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। রাস্তা প্রশস্তের জন্য মিরপুর নাজারেথ নভিসিয়েট ও এসএল লুইজেন সিস্টারস গির্জাটি ভাঙা হয়ন

পাবনার রাঘবপুর রাস্তার মাঝখানে ৪-৫টি মন্দির অক্ষত রেখে সংস্কারও করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে চট্টগ্রামের পটিয়ায় একটি রাস্তা নির্মাণকালে কিছু হিন্দু পরিবারের বাসভবন ও ১টি মন্দির রক্ষা করে রাস্তা বাইপাস করা হয়েছে। কিন্তু মসজিদ রক্ষার জন্যে কোন সরকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এরকম কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।



 

Show all comments
  • নিসারুল ইসলাম ১৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১১:৩০ এএম says : 0
    অবশ্যই মসজিদ নির্মানের ফজিলত অনেক এবং ভাঙ্গা/স্থানান্তর নিষিদ্ধ । কিন্তু মসজিদের সুনির্দিষ্ট সংগাও সুরা তাওবার ১০৮ নং আয়াতে উল্লেখ করা আছে । আমরা রাস্তার পাশে যেসব মসজিদ দেখি, তার কয়টি মসজিদ ? নদীর ভিতরে যেসব মসজিদ তৈরী হয়েছে, এসবের জায়গা কার আর কে ওয়াকফ্ করেছে ? যথাযথ ওয়াকফ্ ছাড়া সরকারী খাস জমিতে ঘর বানিয়ে নামাজ পড়া শুরু করলেই কি সেটি মসজিদ হয়ে যাবে ? এইসমস্ত তথাকথিত মসজিদকে ঢাল বানিয়ে এর আশেপাশের খাস/সরকারী/রেলওয়ের জায়গা দখলের মহোৎসব চলে এসেছে এদেশে শত বছর ধরে । আর ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদের প্রতি তাঁদের ভালবাসার কারণে দুর্বৃত্তায়নের বিষয়টি খেয়ালই করেননা । আমার প্রশ্ন হলো - যে ঘর মসজিদই নয়, সেটি ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা যাবেনা কেন ? কুরআন বা হাদিসের কোন জায়গায় লেখা আছে, যে কারও জায়গায় ঘর বানিয়ে নামাজ পড়লেই সেটি মসজিদ হয়ে যাবে ? আমি নীচে কয়েকটি মসজিদের তালিকা দিচ্ছি, খোঁজ নিয়ে দেখুন, কুরআনে নির্দেশিত সংগা অনুসারে এসব মসজিদের আওতায় পড়ে কিনাঃ ১) পান্থপথের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের ২টি মসজিদ । ২) গাবতলী-আশুলিয়া বেড়ীবাঁধে নদীর ভিতরে ৪টি মসজিদ (এখানে ১টি মন্দিরও আছে)। ৩) ধানমন্ডি ৩ নং সড়কের এনায়েত মসজিদ রাস্তার ফুটপাত দখল করে নিয়েছে । ৪) মিরপুর রোডে কল্যাণপুর শহীদ মিনার সড়কের মুখে নির্মিত মসজিদ । ৫) মিরপুর রোডে খালেক পাম্প সংলগ্ন মসজিদ । ৬) উত্তরা ৬নং সেক্টরের খেলার মাঠের মসজিদ (এই মসজিদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বাজার বসানো হয়েছে । ৭)সেগুনবাগিচা শিল্পকলা একাডেমির কোণে নির্মিত মসজিদ । এই অবৈধ মসজিদগুলো প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আমি দিখেছি । এছাড়া ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-গাজীপুর, ঢাকা-নারায়নগঞ্জ, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, মহাসড়কে এবং ঢাকা শহরে অন্ততঃ ৪০০ এবং সারাদেশে কয়েক হাজার অবৈধ মসজিদ আমি দেখাতে পারবো । আমাকে ভুল বুঝবেননা । ১৬কোটি মুসলমানের দেশে আরও অনেক মসজিদের প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু সেজন্য অবৈধ জায়গায় মসজিদ নির্মানকে আমি সমর্থন করিনা । কিছু মানুষ মসজিদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ইসলাম ধর্মকে খেল-তামাশার বিযয়ে পরিণত করেছে । প্রত্যেক মুসলমানেরই এই বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ