Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা

প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ঃ দরপতনের কবল থেকে বের হতে পারছে না দেশের শেয়ারবাজার। রোববার চলতি সপ্তাহের প্রথম দিনেও দেশের উভয় বাজারে সূচকের পতন ঘটেছে। এ নিয়ে টানা ৮ দিন শেয়ারবাজারে দরপতনের ঘটনা ঘটল। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেমে এসেছে চরম হতাশা।
দরপতনের বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতাই হচ্ছে এর মূলকারণ। স¤প্রতি বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ পুঁজিবাজার নিয়ে বেশ কিছু বিরূপ মন্তব্য করেছেন। তাদের মন্তব্যের রেশ ধরে বাজারে পতন শুরু হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
বাজারে টানা পতন হলেও এটিক অস্বাভাবাবিক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, গত ৫-৬ বছর ধরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নীতিগত যত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলো সাধারণ বিনিয়োগকারী-বান্ধব ছিল না। ফলে বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীর আগমন অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু যারা বাজারে এসেছিলেন তারাও লোকসানের কবলে পড়ায় বাজার ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি আরও বলেন, সেকেন্ডারি মার্কেটে বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটলেও প্রাইমারি (আইপিও) মার্কেটে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু এখন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার দুই-এক দিনের মাথায় আইপিওতে লোকসান গুণতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। ফলে প্রাইমারি মার্কেটের অবস্থাও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
বর্তমানে বাজারে ক্রেতা সংকট রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী। গত ২৮ জানুয়ারি ডিএসই কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে ডে-ট্রেডার বিনিয়োগকারী খুবই কম। ডে-ট্রেডার না থাকার কারণে বাজারে শেয়ারের চাহিদা কমে গেছে। চাহিদা না থাকার কারণে বাজারে দরপতনের ঘটনা ঘটছে।
এদিকে রবিবার ব্যাংক, বীমা, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বস্ত্র খাতসহ শেয়ারবাজারের প্রধান খাতসমুহের বেশিরভাগ কোম্পানিরই শেয়ারের দর কমেছে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩২৮টি ইস্যুর মধ্যে ২৫৩টিরই দর কমেছে। বেড়েছে ৫৫টির দর ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির দর। এ হিসাবে লেনদেন হওয়া ইস্যুগুলোর মধ্যে ৭৮ শতাংশেরই দর কমেছে। এ কারণে দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) ৩২.৬৯ পয়েন্ট কমে ৪৫৪০.৮৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এ নিয়ে টানা ৮ দিন পতন হয়েছে বাজারে। সর্বশেষ ১৯ জানুয়ারি ১০ পয়েন্ট বেড়ে ডিএসইএক্স ৪৬৯৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু এরপরই টানা দরপতন ঘটছে বাজারে। এ সময়ে ডিএসইএক্সের পতন হয়েছে ১৫৭ পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে সূচকের পাশাপাশি আর্থিক লেনদেনেও বড় ধরনের ভাটা দেখা দিয়েছে। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে ৭০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলেও এখন তা ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। ১৫ দিনের ব্যবধানে ডিএসইর লেনদেন ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। রবিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৯৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
বাজারে লেনদেন কমে যাওয়ার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, বাজারের গভীরতা অনুযায়ী বর্তমানে দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা লেনদেন হওয়া উচিত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই লেনদেন ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ঘরে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে স্কয়ার ফার্মা। দিনশেষে কোম্পানিটির ১৬ কোটি ২১ লাখ ২৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৩৫ লাখ ৪১ হাজার টাকা। ১৪ কোটি ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আইটি কনসালটেন্টস।
লেনদেনে এরপর রয়েছে যথাক্রমে সাইফ পাওয়ারটেক, এমারল্ড অয়েল, আর এ কে সিরামিকস, ওরিয়ন ইনফিউশন্স, ইফাদ অটোস, তাল্লু স্পিনিং, কাশেম ড্রাইসেল।
দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সিএসসিএক্স ৬৮.৬২ পয়েন্ট কমে দিনশেষে ৮৪৯৭.৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
লেনদেন হয়েছে ৩০ কোটি ২৯ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪১টির, কমেছে ১৭৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির দর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ