Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীতে প্রত্যাশা

| প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। গতকাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে‘মুজিববর্ষে’র আনুষ্ঠানিক ক্ষণগণনার উদ্বোধন করেছেন। এরপর প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও সকল পাবলিক প্লেসে একইসঙ্গে কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে। এছাড়া সারাদেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের ২৮টি পয়েন্ট, বিভাগীয় শহর, ৫৩ জেলা ও দুই উপজেলা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর মোট ৮৩টি পয়েন্টে কাউন্টডাউন ঘড়ি বসানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় কমিটি গঠিত হয়েছে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে দেশে ফিরেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন বিকেলে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে এরোপ্লেন থেকে নামার পর পূর্ণতা পেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ঐতিহাসিক সেই দিনটিকেই বেছে নেয়া হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতির জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা হিসেবে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে বছরব্যাপী ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাতির জনকের শততম জন্মবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে দেশের মানুষ মুজিববর্ষ পালনে শামিল হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানাই।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন ও সংগ্রাম ছিল একটি স্বাধীন সোনার বাংলা গড়ে তোলা। যেখানে বৈষম্য, বিভাজন, শোষণ, বঞ্চনা, অত্যাচার-নিপীড়ন বলে কিছু থাকবে না। সকলেই সমঅধিকার ও আত্মমর্যাদা নিয়ে উন্নত জীবনযাপন করবে। তাঁর এ স্বপ্নপূরণে তিনি ছিলেন অবিচল, অটল ও দ্বিধাহীন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তিনি লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, ‘জানতাম না আমার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে, আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছিল। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলামান, মুসলমান একবার মরে, দুইবার মরে না।’ দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু লন্ডন ও দিল্লি হয়ে দেশের পথে রওনা হন। দিল্লি বিমানবন্দরে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, আমাকে যখন গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন আমার দেশের মানুষ কেঁদেছিল, যখন আমাকে কারারুদ্ধ করা হয় তখন তারা যুদ্ধ করেছিল, যখন তাদের কাছে ফিরে যাচ্ছি, তখন তারা বিজয়ী। তিনি আরও বলেছিলেন, আমি আমার মাটিতে ফিরে যাচ্ছি কারো প্রতি কোনো ঘৃণা বা বিদ্বেষ নিয়ে নয়। ফিরে যাচ্ছি সন্তুষ্টি নিয়ে, যেখানে অসত্যের ওপর সত্যের, অন্যায়ের ওপর ন্যায়ের, মন্দের ওপর ভালর, কাপুরুষতার ওপর সাহসের বিজয় হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, আমার সামনে অনেক কাজ। আমাদের বিজয়কে শান্তি, উন্নতি ও অগ্রগতির পথে পরিণত করার বিপুল দায়িত্ব আমার ওপর। তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশের পথে এমন আত্মপ্রত্যয়ী লক্ষ্য, একজন পিতার নবভূমিষ্ঠ সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার স্বপ্নের মতো। তাঁর স্বপ্ন ছিল, সর্বস্তরের মানুষকে একসূত্রে গেঁথে একজাতি হিসেবে গড়ে তোলা। বিভাজন, বৈষম্য, শোষণ ও দুর্নীতিমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলে সকলের সমঅধিকার নিশ্চিত করা। বাঙালি ও মুসলমান-এই দুই সত্ত্বাকে সমানভাবে সমর্থন করে দেশকে এগিয়ে নেয়া। বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক মুক্তি, সমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্রকে ধারণ করে দেশ গঠণে ব্রতী হয়েছিলেন। তাঁর আদর্শ ও দর্শন বাস্তবায়ণে তিনি ছিলেন অটল, অবিচল। জন্মশতবর্ষে এসে যদি প্রশ্ন করা হয়, জাতির জনকের স্বপ্ন ও আদর্শ আমরা কতটা ধারণ ও লালন করতে পেরেছি বা পারছি? জবাবে বলা যায়, আমরা তা যথাযথভাবে ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে পারিনি বা পারছি না। স্বাধীনতার চার যুগ পরও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন অনেকটাই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। দেশে রাজনৈতিক বিভাজন, দুর্নীতি, বৈষম্য, নিরাপত্তাহীনতা, খুন, ধর্ষণ জ্যামিতিক হারে বেড়েছে এবং বেড়ে চলেছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনীতি ও সমাজে দুর্নীতি অনেকটা স্থায়ীরূপ লাভ করেছে। সামাজিক অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা, মূল্যবোধ, ন্যায়বোধ ও নীতি-নৈতিকতার চরম অবক্ষয় ঘটেছে। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সুশাসন, আইনের শাসনের বদলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। দুর্বলের ওপর সবলের নিপীড়ন বিস্তৃত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষের যে রাজনীতি ধারণ করেছিলেন এবং তাদেরকে শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও শান্তি-সমৃদ্ধির সোনার বাংলাদেশ উপহার দেয়ার যে লক্ষ্য স্থির করেছিলেন, তাঁর সে লক্ষ্য অনেকটাই ম্লান হয়ে পড়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি বিশ্বাস। এ বিশ্বাসে রয়েছে আদর্শ ও দর্শন। এতে কোনো খাদ নেই। তাঁর এই বিশ্বাস ও দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। দুঃখের বিষয়, তাঁর বিশ্বাস, আদর্শ ও দর্শনকে যারা লালন-পালন ও ধারণ করে বা করবে তাদের অধিকাংশই তা যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারছে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে না। তাঁর সবকিছুই স্লোগান সর্বস্ব হয়ে পড়েছে। বাস্তবতার চেয়ে সভা-সেমিনারের বক্তব্য হয়ে উঠেছে। তাঁর লক্ষ্য ও স্বপ্ন পূরণে বাস্তবানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সোনার বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টি দ্রুতায়িত হতো। দেশের চলমান উন্নয়ন, অগ্রগতিতে তাঁর দর্শন ও বিশ্বাস কতটা প্রতিফলিত হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যদি তা প্রতিফলিত হতো তবে বৈষম্য, বিভাজন, দুর্নীতি বলে কিছু থাকত না। এটা সৌভাগ্যের বিষয়, তাঁর দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাঁর জন্মশতবর্ষ পালন করা হচ্ছে। ফলে তাঁর দলের কাছে জনগণের প্রত্যাশাও অনেক। এক্ষেত্রে তাঁর আদর্শ ও দর্শন বাস্তবায়নের দায়িত্ব এই দলের ওপর সবচেয়ে বেশি। এর ব্যত্যয় ঘটলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও লক্ষ্য ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। আমরা মনে করি, দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক বাস্তবায়ণ থাকা জরুরী। জন্মশতবার্ষিকীতে এই প্রত্যাশাই থাকবে, বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরনের মধ্য দিয়ে যেন দেশে গণতন্ত্র, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের আকাক্সক্ষা পূরণ হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বঙ্গবন্ধু

৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন