Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জিরো টলারেন্স ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

উৎপাদন, বিপনন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও পলিব্যাগের অস্তিত্ব সর্বত্রই লক্ষ্য করা যায়। বাজারঘাট থেকে শুরু করে এহেন ক্ষেত্র নেই, যেখানে পলিব্যাগের ব্যবহার নেই। পলিথিন একটি অপচনশীল দ্রব্য, যা কোনো কিছুতেই মেশে না বা বিলীন হয়না। শত বছর পর্যন্ত তা টিকে থাকে। সারা বিশ্বেই পলিথিন পয়লা নম্বরের পরিবেশঘাতক হিসাবে গণ্য। আমাদের দেশে পলিব্যাগের অপ্রতিরোধ্য ব্যবহারের ফলে সামগ্রিক পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। একবার ব্যবহারের পর পলিব্যাগ যত্রতত্র ফেলে দেয়া হয়। পুন:ব্যবহারে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তা সংগৃহীত হয় সামান্যই। অধিকাংশ পলিথিন ব্যাগ মাটিতে, নদী-খাল-বিলে, নর্দমায় স্থান লাভ করে। যেহেতু পলিথিন মাটিতে মেশে না, কাজেই তা মাটির প্রকৃতি ও উর্বরাশক্তিকে ব্যহত করে। গাছ-গাছালি ও ফসলাদির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত করে। পলিথিন নদী-খাল-বিলে জমা হয়ে পানিই নষ্ট করে না, তাদের নাব্যতাও কমিয়ে দেয়। জলাধারসমূহের তলদেশ জমে পানি ধারণ ক্ষমতা কমিয়ে অকাল মৃত্যু দ্রæতায়িত করে। রাজধানীর চারপাশের নদ-নদী পলিব্যাগ, ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বুড়িগঙ্গার অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। বছর দুয়েক আগে একটি ইংরেজি দৈনিকে এমন একটি ছবি ছাপা হয়, যাতে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গার বুকজুড়ে পলিব্যাগ ও বর্জ্যবস্তু ছড়িয়ে আছে, যা সরিয়ে নৌকা চলাচল করছে। জানা যায়, বুড়িগঙ্গার তলদেশে কয়েক ফুট পলিথিন ও বর্জ্যবস্তু জমে এমনভাবে শক্ত হয়ে গেছে, যে তা অপসারণ করাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকার জলাবদ্ধতার সবচেয়ে বড় কারণ পলিব্যাগ। পলিব্যাগ জমে নর্দমাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। পানি নিকাষ সম্ভব না হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই ঢাকা সয়লাব হয়ে যায়। পানি জমে থাকে দীর্ঘ সময় এবং তাতে নগরবাসীর দুর্ভোগের সীমা থাকে না। বলা বাহুল্য, শুধু ঢাকার আশপাশের নদী নয় কিংবা ঢাকার নর্দমা নয়, সমগ্র দেশের নদ-নদী, খাল-বিল ও পানিনিকাষী নর্দমাগুলো প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। পরিবেশের এর চেয়ে বড় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি আর কিছু হতে পারে না।

সারাবিশ্বেই পলিথিনের ব্যবহার রয়েছে। আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার হিসাবে, সারাবিশ্বে প্রতি বছর পাঁচ লাখ কোটি পলিব্যাগ ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে কত পলিব্যাগ ব্যবহৃত হয় তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের হিসাবে, ঢাকায় প্রতিদিন অন্তত এক লাখ ৪০ হাজার পলিব্যাগ জমা হয়। সারাদেশে কত ব্যাগ জমা হয়, তা সহজেই আন্দাজ করা যায়। পরিবেশবিনাশী পলিব্যাগের বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীরা বরাবরই সোচ্চার। কারণ, তা কেবল মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, সার্বিক পরিবেশকেও বৈরি করে তুলছে। মানবস্বাস্থ্যের জন্য যেমন হুমকি সৃষ্টি করছে তেমনি জীববৈচিত্র বিনষ্ট করছে। পলিথিন পুড়ালে এর উপাদন পলিডিনাইল ক্লোরাইড পুড়ে কার্বন মনোঅক্সাইড উৎপাদিত হয়ে বাতাস দূষিত করে। পলিথিন ও প্লাস্টিকপণ্য সাগরকে পর্যন্ত দূষিত করছে। মাছ ও জলজপ্রাণীও এর থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দু:খজনক হলেও বলতে হচ্ছে, পলিথিনের বিভিন্নমুখী ক্ষতি ও প্রতিক্রিয়া ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই। পরিবেশবাদীরা তো লাগাতারই এর বিরুদ্ধে বলে আসছেন। কিন্তুু পলিব্যাগের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। ২০১২ সালে প্রথমে ঢাকা ও পরে সারাদেশে পলিব্যাগ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহারের ওপর নিষেধাধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সেই নিষেধাজ্ঞা এখনও কার্যকর হয়নি, যদিও প্রথম দিকে এর একটা ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেহেতু নিষেধাজ্ঞা আছে, কাজেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কখনো কখনো অভিযান চালায়, কারখানায় হানা দেয়, মালামাল জব্দ করে, শ্রমিক ধরনের লোকদের পাকড়াও করে। কিন্তুু এসব যে নিতান্তই লোক দেখানোর জন্য, তা পলিথিনের রমরমা কারবার থেকেই বুঝা যায়। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের এক তথ্যে জানা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশে পলিব্যাগ তৈরির প্রায় একহাজার ২০০ কারখানা রয়েছে। ঢাকাতেই রয়েছে পাঁচ শতাধিক কারখানা। এসব কারখানা কোনো গোপন স্থানে গড়ে ওঠেনি। প্রকাশ্য স্থানেই গড়ে উঠেছে এবং প্রশাসন ও পুলিশের চোখের সামনেই এসব কারখানায় পলিব্যাগ তৈরি হচ্ছে, বাজারজাত হচ্ছে এবং প্রকাশ্যে বিক্রীও হচ্ছে। এ অবৈধ কারবারের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের সঙ্গে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও পুলিশের লোকদের যোগসাজস ও আর্থিক লেনদেন আছে বলে সহজেই ধারণা করা যায়।

এই বাস্তবতা বিদ্যমান থাকলে পলিথিনের আগ্রাসন এবং তার পরিবেশনাশক ভূমিকা কখনোই রোখা সম্ভব হবে না। পলিথিন আমাদের ভূমি বন্ধ্যা করে দেবে, আমাদের জীবন্তসত্ত¡া নদীকে হত্যা করবে, বায়ুদূষণ করবে, দেহে রোগাব্যাধির বিস্তার ঘটাবে, নগরবাস দুর্বিষহ করে তুলবে এবং জীববৈচিত্র ধ্বংস করবে, আর আমরা তা চেয়ে চেয়ে দেখবো, এটা হতে পারেনা। আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে অবশ্যই এব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে, কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইন থাকলেই হবে না, তা যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, পলিব্যাগ যদি তৈরিই না হয়, তবে তার বাজারজাতকরণ ও ব্যবহারের প্রশ্ন ওঠেনা। কাজেই, উৎপাদন ডেডস্টপ করতে হবে, পলিথিনের কাঁচামাল আমদানী সীমিত করতে হবে এবং কারখানা বন্ধ করতে হবে। এরপরও চুরিচামারি করে যদি পলিব্যাগ তৈরি হয় কিংবা চোরাইপথে দেশে ঢোকে তবে তার বাজারজাতকরণ ঠেকিয়ে দিতে হবে, বিক্রি ও ব্যবহার রোধ করতে হবে। এই সঙ্গে নাগরিক সচেতনতা বাড়তে হবে।‘পলিব্যাগকে না বলুন’, এই ঘোষণায় জনগণকে উজ্জীবিত ও সক্রিয় করতে হবে। পাশাপাশি পলিব্যাগের বিকল্পের উৎপাদন ও যোগান নিশ্চিত করতে হবে।

 

 



 

Show all comments
  • jack ali ১৪ জানুয়ারি, ২০২০, ৫:৩৮ পিএম says : 0
    When governments are crazy to stay in power, they don't care about our beloved country.. as such they have destroyed our environment....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জিরো টলারেন্স


আরও
আরও পড়ুন