Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুমিল্লায় অপরিকল্পিত নগরায়ন

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

কুমিল্লার পালে সিটি করপোরেশনের হাওয়া লাগার সাড়ে আট বছরে গড়ে উঠেছে ইচ্ছে মাফিক ভবন। আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। আবার মার্কেটের ওপর গড়ে উঠছে বসতবাড়ি। দোকানপাটের আকার আয়তনের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। একই অবস্থা বাড়িঘরেরও।
কোথাও চলাচলের রাস্তায়, কোথাও বা অলিগলিতে নেমে এসেছে ভবনের সিঁড়ি। ছোটবড় ড্রেনের ওপর বসছে দোকানপাট। পাড়া-মহল্লায় শিশু কিশোরদের খেলাধুলার সুযোগ নেই। হারিয়ে গেছে শহরের পাড়া-মহল্লার ছোটবড় অসংখ্য পুকুর। বিভিন্ন উপজেলা থেকে নগরীতে ছুটে আসছেন মানুষ। ওভারলোড হয়ে পড়ছে নগর। সচেতন নাগরিকরা এমন অপরিকল্পিত নগরায়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন। ১৭৯০ সালে কুমিল্লা পৌর প্রশাসনের ইতিহাস শুরু হয়েছিল। ১৮৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা পৌরসভা ছিল শহরের প্রথম প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান। প্রায় ১২৫ বছরের বেশি সময় কুমিল্লা শহর পৌরসভা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছিল। কুমিল্লার রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক গুরুত্ব এবং জনসংখ্যাও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে এই সময়টিতে। কুমিল্লার সংসদ সদস্য হাজী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধ্যাদেশে ২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা পৌরসভা ও সদর দক্ষিণ পৌরসভা মিলে শহর কুমিল্লা মর্যাদা পায় সিটি করপোরেশনের। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রায় ৫৩ দশমিক ৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ২৭টি ওয়ার্ডে ৫ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস।এখানে নগরীর সৌন্দর্য বাড়লে বিল্ডিং কোড ও সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই উপরের দিকে উঠছে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। ছয় তলার উপরের ভবন মূলত হাইরাইজ বা সুউচ্চ ভবন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে।
নগরীতে এমন সুউচ্চ ভবন রয়েছে তিন শতাধিক। অধিকাংশ ভবনে নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। আবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এমনসব বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে ভবনের পাশে নেই পর্যাপ্ত রাস্তা। ফলে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবেশ ও মাটি সক্ষমতা যাচাই না করেই নিজেদের মনগড়া মতো অধিকাংশ ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ওয়ার্ডভিত্তিক জনপ্রতিনিধিরা এক্ষেত্রে কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের।
এদিকে, কুসিকের প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী নগরীতে নির্মাণাধীন ৪৯৫টি ভবন নকশা বহিভর্‚ত। বিনা অনুমতিতে নির্মিত হচ্ছে ১৯৫টি বহুতল ভবন। ৯৫টি ভবন অতি পুরাতন এবং ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কুসিকের নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম বড়–য়া ইনকিলাবকে জানান, নকশার সঙ্গে মিল নেই এমন বড় ভবনগুলোকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ভবন মালিককে আমরা জরুরি নোটিশ দিয়েছি। এই তালিকা জেলা প্রশাসনেও পাঠানো হয়েছে।
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বা তার আগে এসবের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করবো। কেবল তাই নয়, পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ ভবন শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। যথাযথ রাস্তা না রেখে ও অনুমোদিত নকশার সঙ্গে মিল না রেখে যারা ভবন নির্মাণ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হবো। ইতিমধ্যে ওইসব ভবনের গ্যাস, বিদ্যুৎ সার্ভিস বন্ধ রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ আগামীর জন্য কোনভাবেই সুফল বয়ে আনবে না। এটা নগরবাসীকে ভাবতে হবে, সচেতন হতে হবে। জেনেশুনে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু একটা করে নগরায়ণকে হুমকির মুখে ফেলা যাবে না। তবে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পরিকল্পিত নগরায়ন গড়ার।
সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা, পরিবেশবান্ধব ভবন বিদ্যমান রাখার মধ্যদিয়ে নাগরিকের মঙ্গলের জন্য একটি পরিকল্পিত বাসযোগ্য নগর গড়ে তোলা দরকার। অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ বন্ধ, পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে পুকুর ভরাট বন্ধ, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনা এমন সরু অলিগলি এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন না দেয়া এবং ঝুঁকিপূর্ণ পুরানো ভবন ভেঙে ফেলা ও ঝুঁকিতে রয়েছে নকশা বর্হিভর্‚ত এমন ভবনগুলোর বিষয়ে এখনই ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ