Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কদমবুসী : হাত-পা ইত্যাদিতে চুমু খাওয়া

মুফতী মোঃ আবদুল্লাহ্ | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর

২০/৪। “আদ-দুররুল মুখতার গ্রন্থে রয়েছে, কোন আলেমের কাছে বা কোন দুনিয়াবিমুখ নেককার মনীষীর কাছে কেউ আবেদন করলো, তার দিকে তাঁর পাগুলো বাড়িয়ে দেয়ার জন্য যেন সে তাতে চুমু খেতে পারে। তেমন আবেদনে তিনি সাড়া দেবেন। আবার কারও মতে, তিনি সেই সুযোগ দেবেন না। ‘আর রাদ্দুল মুহতার’ -এ ‘সাড়া দেবেন’ মতন এর ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে, “কেননা গ্রন্থকার মুহাক্কিক হাকিম র. উদ্ধৃত করেছেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল স. এর কাছে উপস্থিত হয়ে আরজ করলো, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাকে এমন কিছু দেখিয়ে দেন যাতে আমার বিশ^াস দৃঢ় প্রত্যয় স্তরে উপনীত হয়। নবীজী স. তাকে বললেন, তুমি ওই গাছের কাছে যাও! তাকে (গাছটিকে) ডেকে নিয়ে আস। সে তাই করলো এবং গাছটির কাছে গিয়ে বললো, তোমাকে রাসূল স. ডাকছেন! তাৎক্ষণিক গাছটি নবীজী স. এর কাছে এসে (নত হয়ে) নবীজী স.-কে সালাম করলো। নবীজী স. গাছটিকে বললেন, স্বস্থানে ফিরে যাও! সে চলে গেল। তার পর লোকটি রাসূল স. এর কাছে অনুমতি নিয়ে তাঁর মাথা ও পা মুবারকে চুমু খেলেন। (তখন) নবীজী স. ইরশাদ করলেন, ‘আমি যদি কাউকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তা হলে প্রত্যেক স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম, সে যেন তার স্বামীকে সিজদা করে”। হাকিম হাদীসটি বয়ান করে বলেন, বর্ণনাটি সহীহ সূত্রে প্রাপ্ত এবং শাররামবুলালীর রিসালা সূত্রে আল্লামা শামী র. উদ্ধৃত করেছেন (শামী: খ-৬, পৃ.৩৮৩, এইচ. এম. সাঈদ এডুকেশনাল প্রেস, করাচী, তা. বি.)।

২০/৫। আলমগীরী ৫ম খন্ডে রয়েছে-

“কেউ কোন আলেম বা দুনিয়াবিমুখ নেককার লোককে নিবেদন করলো, তাঁর পা তার প্রতি বাড়িয়ে দিতে, যেন সে তাতে চুমু খেতে পারে। সেক্ষেত্রে কারও মতে, ওই বুযুর্গের পক্ষে লোকটির এমন আবদার রক্ষা করা জায়েয হবে না; আবার কারও মতে, তা জায়েয হবে (আলমগীরী: খ- ৫, পৃ. ৩৬৯, মাকতাবা মাজেদিয়া, কোয়েটা, পাকিস্তান, সংস্করণ: ১৯৮২খ্রি./১৪০৩হি.)।

২০/৬। মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আশ‘য়ে‘আতুল লুমু‘আত’ -এ হযরত শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী র. বলেছেন, “কেউ যদি কোন আলেম অথবা যাহেদ ব্যক্তির পায়ে চুমু দেয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে, তা হলে তিনি তার সুযোগ দেবেন না এবং তাঁর পায়ে তাকে চুমু খেতে দিবেন না। তবে ‘কুনিয়া’ কিতাবে বলা হয়েছে, তাতে কোন সমস্যা নেই (ব. হা. প্রাগুক্ত জাওয়াহিরুল ফিকাহ : পৃ- ১৯৭)।

২০/৭। একই মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘মাযাহেরে হক’ -এ আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দল সম্পর্কিত হাদীসটি উদ্ধৃত করার পর বলা হয়েছেÑ “ হাদীসটির বাহ্যিক ভাষ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, পায়ে চুমু খাওয়া জায়েয; তবে ফকীহগণ তা নিষেধ করে থাকেন...” (প্রাগুক্ত : পৃ. ১৯৮)।

উক্ত বিধানটি সম্পর্কিত একটি গবেষণাগত মতভেদ যা হানাফী ইমামগণের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়, তা বাদায়ে‘ ও কাযীখান গ্রন্থদ্বয় এর সূত্রে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। তাতে হাতে চুমু ও পায়ে চুমু এর সঙ্গে মুসাফাহা’র কথাও অন্তর্ভূক্ত ছিল। সেই গবেষণা মতভেদে কাযীখান এর অনুসন্ধান মোতাবেক সার-সংক্ষেপ ছিল, “যেক্ষেত্রে এ কাজ বা আমলগুলো এমন প্রক্রিয়ায় সম্পাদিত হয় যাতে কামনা-বাসনা’র আশঙ্কা ও তেমন সাদৃশ্য পাওয়া যাবে; সেক্ষেত্রেই ইমাম আবূ হানীফা র. ও ইমাম মুহাম্মদ র. মাকরূহ বলেছেন। আর যেক্ষেত্রে তেমন কিছু থাকবে না সেক্ষেত্রে সকলের ঐকমত্যেই তা জায়েয।”

এ ছাড়া, দুররে মুখতার, শামী ও আলমগীরী ইত্যাদির বরাতে উপরে যে গবেষণা-মতভেদ উদ্ধৃত করা হয়েছে; তা পরবর্তী (মুতাআখখিরীন) ফকীহগণের গবেষণা মতভেদ। চুমু খাওয়া ও মু‘আনাকা’র মূল বিধানে কোন মতভেদ নেই। বরং মতভেদের আসল কেন্দ্রবিন্দু হল এটি যে, যার কদমবূসী ও হাতে চুমু খাওয়া হবে তার পক্ষে কি এমনটি জায়েয যে, তিনি তাঁর হাত, পা বাড়িয়ে লোকজনকে সেই সুযোগ প্রদান করবেন? (প্রাগুক্ত : পৃ. ১৯৮)।
আর উক্ত মতভেদের বাহ্যিক কারণ হল, উক্তরূপ ক্ষেত্রে বাস্তবে যদি অহমিকা ও অহঙ্কার নাও জন্ম নেয় তবুও বাহ্যিক দর্শনে তা একটা অহঙ্কারজনক কর্ম ও আচরণ অবশ্যই; যা থেকে অহমিকা জন্ম নেয়ার প্রবল সম্ভাবনা বিদ্যমান। যে কারণে কোন কোন ফকীহ এ আশঙ্কা সামনে রেখেই তা মাকরূহ সাব্যস্ত করেছেন। আর অন্যরা মূল আমলটির বৈধতা সামনে রেখেই জায়েয বলেছেন। (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ