Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জা-ভাসুরসহ চারজনের ফাঁসি চেয়ে চার্জশিট : ক্লুবিহীন সগিরা মোর্শেদ হত্যাকান্ড

আড়াই যুগের অন্ধকারকে আলোয় এনেছে পিবিআই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

দীর্ঘ ৩০ বছর পর চাঞ্চল্যকর সগিরা মোর্শেদ হত্যার রহস্য উদঘাটন করে চার আসামির মৃত্যুদন্ড চেয়ে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পিবিআই। গতকাল এক হাজার ৩০৯ পৃষ্টার চার্জশিট আদালতে দাখিল করে সংস্থাটি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. রফিক এ চার্জশিট জমা দেন।

এর আগে গতকাল দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, ৩০ বছর পর আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। এরপর তিন ধাপে মোট ছয় মাস পর চারজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এই হত্যাকে একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ড উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই হত্যাকান্ডের আসল রহস্য উদঘাটন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এতে চারজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। পরে চার্জশিটে ওই চারজনের মৃত্যুদন্ড চাওয়া হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন- নিহত সগিরা মোর্শেদের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন, হাসান আলীর শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান এবং ভাড়াটে খুনি মারুফ রেজা।

তারা চারজনই হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়ে পিবিআই প্রধান আরো বলেন, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল সগিরা মোর্শেদকে। তবে দীর্ঘদিন পর মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে আসলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামি সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়।

তিনি বলেন, মামলটি যখন পিবিআইয়ের কাছে আসে তখন আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারি নিহত সগিরা মোর্শেদের পরিবারের সাথে আসামি মাহমুদার বিভেদ রয়েছে। পারিবারিক বিরোধের জেরে মাহমুদা তার তিন তলার বাসা থেকে সগিরা মোর্শেদের রান্নাঘর ও বারান্দায় ময়লা ফেলত। এছাড়া শাশুড়ি সগিরাকে অনেক পছন্দ করত এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সগিরা-মাহমুদার মধ্যেও দ্ব›দ্ব ছিল।

এছাড়া সগিরার কাজের মেয়ে জাহানুরকে মারধর করে মাহমুদার স্বামী ডা. হাসান আলী চৌধুরী। এ নিয়ে পারিবারিক বৈঠকে মাহমুদা সগিরাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। আসামিদের নিয়ে রাজারবাগ বাসার তৃতীয় তলায় সগিরাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ডা. হাসান আলী তার চেম্বারে আসামি মারুফ রেজার সাথে ২৫ হাজার টাকায় হত্যার চুক্তি করে। ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মারুফ রেজা ও আনাস মাহমুদ প্রকাশ্য দিবালোকে সগিরা মোর্শেদকে গুলি করে হত্যা করে।

পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, সগিরা হত্যা মামলায় ২৫ জন কর্মকর্তা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান। মামলা চলাকালে ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে হত্যার রহস্য কেউ উদঘাটন করতে পারেনি। তবে ২৫ জন আসামির মধ্যে একজনকে অভিযুক্ত করে একবার চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পিবিআই’র চার্জশিটে আগের অভিযুক্ত সবাইকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তরা তার উপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে দৌড় দিলে তাকে গুলি করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সগিরা মোর্শেদ মারা যান। সেদিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার স্বামী সালাম চৌধুরী।

প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক জড়িত দুজনের কথা বললেও মিন্টু ওরফে মন্টু নামের একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। নেওয়া হয় সাতজনের সাক্ষ্য। বাদিপক্ষের সাক্ষ্যে আসামি মন্টু ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসানের নিকটাত্মীয় মারুফ রেজার নাম আসে। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২৩ মে বিচারিক আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন।

এ আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজা হাইকোর্টে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট রুল দিয়ে অধিকতর তদন্তের আদেশ স্থগিত করেন। পরের বছরের ২৭ আগস্ট অপর এক আদেশে হাইকোর্ট ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ান। এতে থমকে যায় মামলার কার্যক্রম।
পরে বিষয়টি নজরে এলে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৬ জুন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ মামলার অধিকতর তদন্ত আদেশে ইতিপূর্বে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন। একই সাথে ৬০ দিনের মধ্যে ওই মামলার অধিকতর তদন্ত শেষ করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সগিরা মোর্শেদ হত্যা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ