Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে লক্কড়ঝক্কড় জাহাজ

দুর্ঘটনার আশঙ্কা

বিশেষ সংবাদদাতা, কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম

কক্সবাজারে পর্যটন খাতে অপার সম্ভনাময় এলাকা টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন। যাতায়াতে বিলাশবহুল জাহাজ চলাচল করলেও এরই মাঝে লক্কর জক্কর টাইপের কিছু জাহাজ এখনো চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এর মধ্যে অচল হিসেবে বিক্রির ১৬ বছর পরেও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে এখনো চলছে এলসিটি কুতুবদিয়া নামের এক পরিতক্ত জাহাজ। এতে করে যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও এদিকে নজর নেই কারো।
এলসিড়ি কুতুবদিয়া (আটলান্টিক) পর্যটকদের নিয়ে সেন্টমার্টিন যাতায়াত করছে প্রতিদিন। এর আগে এটি ভোলা-লক্ষীপুর নৌপথে চলাচল করতো সেখানে স্থানীয় প্রশাসন জাহাজটিকে পরিত্যক্ত ঘোষনা করলে জাহাজটির মালিক বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম জাহাজটি নিয়ে নতুনভাবে রং করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলের ব্যবস্থা করেন।
তৎকালিন এলসিড়ি কুতুবদিয়া (আটলান্টিক) কে খতিয়ে দেখার জন্য চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এর প্রধান ছিলেন নটিকেল সার্ভেয়ার এন্ড একজামিনার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমদ। ওই কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছিল তাতে বলা হয় জাহাজটির সার্বিক কাটামো দুর্বল, ইঞ্জিন রুমে আগুন লাগার সম্ভবনা রয়েছে এবং যাত্রী পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ। কমিটি এলসিটি কুতুবদিয়া (আটলান্টিক)-এর ১১টি ত্রুটি শনাক্ত করে। ত্রুটিগুলো সংশোধন না করে বরং ওপরে অস্থায়ী ছাদ তৈরী করে আরো বেশি যাত্রী বহনের ব্যবস্থা করেছেন জাহাজ কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে ধারণ ক্ষমতা থেকে ৩/৪ গুন বেশি পর্যটক বহন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে যাত্রী ও সাধারণ মহল থেকে। এদিকে বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, এলসিড়ি কুতুবদিয়া (আটলান্টিক) পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নতুনভাবে রং করে তারা টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে প্রতিদিন পর্যটক আনা নেওয়ার কাজে নৌরুটে চলাচল করছে। এতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক না জেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই জাহাজ নিয়ে যাতায়াত করছেন। এই জাহাজটি বিগতদিনে বিআইডাবিøউটিসির একটি জাহাজ স্ক্রাপ (টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা) হিসেবে বিক্রি করে দেয়ার পরেও তা যতসামান্য মেরামত করে টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌরুটে কিভাবে চলাচল করছে তা যাত্রী সাধারণ ও এলাকাবাসি প্রশ্ন।
এদিকে বেসরকারি জাহাজ এর মধ্যে ভাষা শহীদ সালাম এরও একই দশা বলে জানান ভোক্তভোগিরা।
জানা যায়, পুরাতন ও অচল হয়ে পড়ায় ‘এলসিটি কুতুবদিয়া’ (আটলান্টিক) স্ক্রাপ হিসেবে ২০০৩ সালের ২৩ এপ্রিল বিক্রি করে দেয় বিআইডাবি্লউটিসি। দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ৪৪ লাখ ৬২ হাজার ৬০০ টাকায় জাহাজটি কিনে নেয় মেসার্স এ রহমান অ্যান্ড সন্স কোম্পানি। এরপর এটি ২০১৫ সালে কিনে নেন ভোলার চরফ্যাশনের বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এরপর সন্ধীপ কুমারীগুপ্তা নৌপথে কিছুদিন চলাচল করে এবং সেখানে দুর্ঘটনা ঘটার পর প্রায় তিন বছর পড়ে থাকে। পরর্বতীতে এটির মালিক নজরুল ইসলাম নতুনভাবে রং করে বর্তমানে তার মালিকানায় জাহাজটি টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পরিচালনা করছেন। জাহাজটির ফিটনেস সনদ কীভাবে দেয়া হল, বা আদৌ আছে কিনা তা প্রশ্ন বিভিন্ন মহলের।
জানা যায়, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, নির্মাণের ১৫ বছর পর সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়ে এবং অভ্যন্তরে (ইনল্যান্ড) সর্বোচ্চ ৩০ বছর চলাচলের জন্য উপযোগী থাকে। ‘এলসিটি কতুবদিয়ার’ বয়স বর্তমানে ৩৮ বছর। সূত্র জানায়, ১৯৭৯ সালে নির্মাণের পর ১৯৮১ সালে এটি কেনে বিআইডাবিওউটিসি। সমুদ্র নৌপরিবহন অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, নির্মাণ তথ্য অনুযায়ী এটি পরিত্যক্ত জাহাজ।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যে কোনো জাহাজ বা লঞ্চ নির্মাণের ৩০ বছর পর্যন্ত চলাচল উপযোগী থাকে। এরপর এর রেজিস্ট্রেশন এমনিতেই বাতিল হয়ে যায়।
এলসিটি কুতুবদিয়ার (আটলান্টিক) কক্সবাজার ইনচার্জ ও ম্যানেজার মো. নাছির উদ্দিন এ প্রসঙ্গে জানান, জাহাজের অবকাঠামো আমরা পরিবর্তন করে প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চালু করেছি। তিনি আরো বলেন, এটি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে আনা জাহাজ আমরা তা মেরামত করে এখনো চালু রেখেছি।
বিআইডাবি্লউটিসির ম্যানেজার জানান, যে কারণে কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিন রুটে চলাচল করার যোগ্য নয়, একই কারণে ‘এলসিটি কুতুবদিয়া’ (আটলান্টিক) জাহাজটিরও কোস্টাল ডেঞ্জার জোন হিসেবে চিহ্নিত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলের যোগ্য নয়।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, আসলে উপজেলা প্রশাসনের হাতে তেমন কিছু থাকে না জেলা প্রশাসন থেকে কাগজ রেড়ি করে এখানে পাঠালে আমরা তাদের নৌপথে চলাচল করতে দিতে পারি। এলসিড়ি কুতুবদিয়া (আটলান্টিক) বর্তমানে টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌরুটে চলাচলা করছে। তাদের কোন বৈধ কাগজ না থাকে তবে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
জাহাজের বর্তমান মালিক মো. নজরুল ইসলাম জানান, জাহাজটি স্ক্রাপ হিসেবে কেনা হয়নি। অলাভজনক হিসেবে কেনা হয়েছে। এ কারণে তারা এখনও জাহাজটি সচল রেখেছেন। এটি টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন রুটে যাত্রী পরিবহন করার জন্য আমি ব্যবহার করছি বর্তমানে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) (উপসচিব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার বলেন, ফিটনেস এর ব্যাপারটা বিআইড়াবি্লউটিএ দেখেন। আমরা দেখবো যদি ফিটনেস ও বৈধ কাগজ দেখাতে না পারেন তবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লক্কড়ঝক্কড় জাহাজ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ